অস্ট্রিয়ার অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ফ্রেডারিক স্নাইডার প্রায় ৪০ বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে কালোটাকা নিয়ে কাজ করছেন। আশির দশকে তিনি মূলত ইউরোপের বিভিন্ন দেশের কালোটাকা নিয়ে গবেষণা শুরু করেছিলেন। পরে বিশ্বের ১৫৭টি দেশ নিয়ে তিনি গবেষণা করেছেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ নিয়ে করা প্রথম সমীক্ষাটি ছিল ১৯৯৯ সালের। পরে এই সমীক্ষার সঙ্গে যুক্ত হয় বিশ্বব্যাংক, ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি) এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।
২০০২ সালে প্রকাশিত সমীক্ষা রিপোর্টটির নাম ছিল ‘সাইজ অ্যান্ড ম্যাজারমেন্ট অব দ্য ইনফরমাল ইকোনমি ইন ১১০ কান্ট্রিজ অ্যারাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড’। অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতির ওপর ভালো, নির্ভরযোগ্য ও সবচেয়ে ব্যবহৃত সমীক্ষা এটিই। এই প্রতিবেদনে ১৯৯৯-২০০০ অর্থবছরের মোট জাতীয় উৎপাদনে (জিএনপি) একটি দেশের অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতির হার এই প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়। এরপর নিয়মিতভাবে সমীক্ষাটির হালনাগাদ করা হয়।
যেমন ২০১০ সালে প্রকাশিত সমীক্ষার নাম ছিল ‘শ্যাডো ইকোনমিজ অল ওভার দ্য ওয়ার্ল্ড: নিউ ইস্টিমেটস ফর ১৬২ কান্ট্রিজ ফ্রম ১৯৯৯-২০০৭।’ নতুন সমীক্ষায় অধ্যাপক ফ্রেডারিক স্নাইডারের সঙ্গে ছিলেন আন্দ্রিয়াস বুয়েন ও ক্লডিও ই মন্টেনগ্রো। প্রতিবেদনে বলা ছিল, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছায়া বা কালো অর্থনীতি তৈরি হচ্ছে মূলত সরকারের কঠোর নিয়ন্ত্রণ ও করকাঠামোর অব্যবস্থার কারণে। এর ফলে অনেক মানুষ আনুষ্ঠানিক অর্থনীতির বাইরে থেকে যায়। সমীক্ষায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়, বিশ্বের প্রায় সব দেশেই অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতির পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে। মানুষ নানাভাবে অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতির প্রতি ঝুঁকছে। উদ্বেগজনক দিক হচ্ছে, ধনী দেশগুলোতে অনানুষ্ঠানিক অর্থের পরিমাণ কম, দরিদ্র দেশগুলোতে বেশি।
সমীক্ষা অনুযায়ী, ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশের কালোটাকা ছিল ৩৫ দশমিক ২ শতাংশ। ২০০০ সালে কালোটাকার হার বৃদ্ধি পেয়ে হয় ৩৫ দশমিক ৬ শতাংশ, ২০০১ সালে হয় ৩৫ দশমিক ৭ শতাংশ, ২০০২ সালে ৩৫ দশমিক ৫ শতাংশ, ২০০৩ সালে ৩৫ দশমিক ৬ শতাংশ, ২০০৪ সালে ৩৫ দশমিক ৭ শতাংশ, ২০০৫ সালে ৩৬ শতাংশ, ২০০৬ সালে ৩৬ দশমিক ৭ শতাংশ এবং ২০০৭ সালে ৩৭ শতাংশ।
২০১৯ সালে প্রকাশিত তাঁর সর্বশেষ সমীক্ষার শিরোনাম, শেডিং লাইট অন দ্য শ্যাডো ইকোনমি: আ গ্লোবাল ডেটাবেইস অ্যান্ড দ্য ইন্টার্যাকশন উইথ দ্য অফিশিয়াল ওয়ান।’ এই সমীক্ষায় ১৫৭টি দেশের কালোটাকার তথ্য দেওয়া হয়েছে। মূলত ১৯৯১ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত কালোটাকার তথ্য রয়েছে এখানে। তবে এর আরেকটি বিশেষত্ব হচ্ছে, এই প্রথমবারের মতো ১৫৭টি দেশের ২৭ বছরের (১৯৯১-২০১৭) গড় কালোটাকার হিসাব দেওয়া হয়েছে। গবেষণা অনুযায়ী, গড়হার হচ্ছে ৩১ শতাংশ। আর গড়হারে সবচেয়ে বেশি কালোটাকা আছে বলিভিয়ার, ৬২ দশমিক ৯ শতাংশ। এরপরেই আছে জর্জিয়া, ৬১ দশমিক ৮ শতাংশ। আর তৃতীয় স্থানে থাকা নাইজেরিয়ার কালোটাকার হার দেশটির জিডিপির ৫৬ দশমিক ৮ শতাংশ। অন্যদিকে সবচেয়ে কম কালোটাকা সুইজারল্যান্ডে, ৬ দশমিক ৪ শতাংশ।
গবেষণা অনুযায়ী, বাংলাদেশে ২৭ বছরে কালোটাকার গড়হার হচ্ছে জিডিপির ৩৩ দশমিক ১ শতাংশ। এর মধ্যে সর্বোচ্চ হার ছিল ৩৬ দশমিক ৯ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন ২৫ দশমিক ৯ শতাংশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) সর্বশেষ ২০১৯-২০ অর্থবছরের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) পরিমাণ ছিল চলতি মূল্যে ২৭ লাখ ৯৬ হাজার ৩৭৮ কোটি ২০ লাখ টাকা। গড় কালোটাকা ৩৩ দশমিক ১ শতাংশ হলে, টাকার অঙ্কে দাঁড়ায় ৯ লাখ ২৫ হাজার ৬০১ কোটি ১৯ লাখ টাকা। চলতি অর্থবছরের বাজেট ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। অর্থাৎ দেশের কালোটাকার পরিমাণ দেড় বছরের বাজেটের সমান।
অর্থ মন্ত্রণালয় অবশ্য ২০১১ সালে ‘বাংলাদেশের অপ্রকাশ্য অর্থনীতির আকার: একটি অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ’ শিরোনামে একটি সমীক্ষা করেছিল। সেই সমীক্ষা অনুযায়ী, বাংলাদেশে কালোটাকা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) সর্বনিম্ন ৪৬ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ প্রায় ৮১ শতাংশ। আর ১৯৭৩ সালেও দেশে এই কালোটাকার হার ছিল সর্বনিম্ন ৬ দশমিক ৮ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ মাত্র ৭ দশমিক ২ শতাংশ। সমীক্ষায় বলা হয়েছিল, জমির অতি উচ্চমূল্য এবং শেয়ারবাজারের তেজিভাবের সঙ্গে বিপুল পরিমাণ কালোটাকার যোগসূত্র রয়েছে। এ ছাড়া কালোটাকা বৃদ্ধি পাওয়ায় কিছু ব্যক্তির হাতে সম্পদ ঘনীভূত হচ্ছে। এতে সমাজে জীবনযাত্রার মানেও বৈষম্য তৈরি হচ্ছে।
১৯৮৯ সালে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক সাদরেল রেজা ‘বাংলাদেশের কালো অর্থনীতি: কিছু প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ’ নামে একটি সমীক্ষা করেছিলেন। তাঁর হিসাবে ১৯৮৫-৮৬ সময়ে বাংলাদেশে কালোটাকা ছিল জিডিপির এক-তৃতীয়াংশ। ১৯৯৫ সালে বিআইডিএসেরই আরেক গবেষক আসাদুজ্জামানের ‘আনরেকর্ডেড ইকোনমি অব বাংলাদেশ’ নামে করা এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা ছিল, ১৯৯২-৯৩ অর্থবছরে অপ্রকাশিত অর্থের হার জিডিপির ১৯ দশমিক ৯ শতাংশ।
এ ছাড়া ২০০৫ সালে অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবুল বারকাত ‘বাংলাদেশে কালোটাকা এবং এর উৎস’ নামের প্রতিবেদনে জানান, দেশে কালোটাকার পরিমাণ ১ লাখ ৭৫ হাজার কোটি। আর ১৯৯৭ সালে করা আরেক গবেষক এম কবির হাসানের সমীক্ষা অনুযায়ী, ১৯৭২ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত দেশে কালোটাকা ছিল জিডিপির ২৩ দশমিক ৫ শতাংশ। ২০০৫ সালে কোরিয়া ইনস্টিটিউট অব পাবলিক ফাইন্যান্সের গবেষক নো-উক পার্কের এক সমীক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৯৯২-২০০০ সময়ে বাংলাদেশে কালোটাকা ছিল জিডিপির ৩৫ দশমিক ৬ শতাংশ, ২০০০-২০০১ অর্থবছরে তা ৩৬ দশমিক ৫ এবং ২০০২-০৩–এ ছিল ৩৭ দশমিক ৭ শতাংশ।
সব মিলিয়ে বলা যায়, দেশে বিপুল পরিমাণ কালোটাকা রয়েছে। তবে এই কালোটাকা কমানোর পরিবর্তে সরকারগুলো তা সাদা করার দিকেই আগ্রহ দেখিয়ে আসছে। তবে এ থেকে খুব বেশি সাফল্য না এলেও কালোটাকা অর্থ সাদা করার সুযোগ কেন বারবার দেওয়া হয়, সে প্রশ্নের মীমাংসা ১২ বছর আগেই করে গেছেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি বলেছিলেন, কালোটাকা সাদা করার সুযোগ আর রাখা হবে না। কিন্তু ২০০৯-১০ অর্থবছরের বাজেটে তিনি ঠিকই সুযোগটি রাখলেন, তা–ও টানা তিন বছরের জন্য। এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল বাজেটের পরের দিন অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে। জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া প্রশ্নে রাজনীতির কাছে নীতি–নৈতিকতা হেরে গেছে।’
আবুল মাল আবদুল মুহিত একজন ভালো লেখক, শিল্প–সংস্কৃতির সমঝদার মানুষ। কথা বলেন সুন্দর করে। সেদিন ব্যাখ্যাটিও দিয়েছিলেন তাঁর মতো করেই। তিনি আরও বলেছিলেন, ‘সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে বাস্তবতার নিরিখে দেশে বিনিয়োগ বাড়াতে বাজেটে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া অনৈতিক। এর আগেও আমি বারবার আমার এ মনোভাবের কথা জানিয়েছি। কিন্তু পলিটিকস ইজ হাইয়েস্ট আর্ট অব কম্প্রোমাইজ (‘রাজনীতি হলো আপসের সবচেয়ে নিপুণ কৌশল)। রাজনীতিতে সব ধরনের মানুষ ও সব ধরনের স্বার্থকে সমন্বয় করে চলতে হয়। ফলে দুঃসাহসিক অভিযানে না নেমে ধারাবাহিকতা বজায় রাখাই শ্রেয় হয়ে পড়ে।’
রাজনীতির সঙ্গে এ আপস অবশ্য নতুন কিছু নয়। তবে এর আগে এভাবে স্পষ্ট করে আর কেউ বলেননি। তবে বর্তমান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এ নিয়ে মুখে কিছু না বললেও, আপসটা করেছেন আরও বড়ভাবে। যেমন ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে কালোটাকা সাদা করার ঢালাও সুযোগ দিয়েছিলেন তিনি। এ সময় লুকিয়ে রাখা নগদ টাকাও সাদা করার সুযোগ দেন তিনি, যা আগে কখনো দেওয়া হয়নি। এমনকি আয় বৈধ হলে যে হারে কর দিতে হতো, অবৈধ অর্থের ক্ষেত্রে কর ছিল আরও কম।
এবারের নতুন বাজেটের (২০২১-২২) আগে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সংবাদ ছিল যে কালোটাকা সাদা করার ঢালাও সুযোগ আর রাখা হচ্ছে না। এমনকি বাজেট দেওয়ার পরেও দেখা গেল কালোটাকা নিয়ে কিছু বলা নেই। উল্লেখ নেই অর্থবিলেও। অর্থাৎ ঢালাও সুযোগ আর নেই। আপস সম্ভবত তারপর থেকেই শুরু হয়েছে। কেননা, মাস শেষে বাজেট পাসের দিন দেখা গেল, কালোটাকা সাদা করার সুযোগ বেশ ভালোভাবেই রাখা হয়েছে।
তবে ঢালাও সুযোগ কিছুটা কমেছে। হয়তো আগের অর্থবছরে বাড়াবাড়ি ধরনের ঢালাও সুযোগ দেওয়া হলো বলে পরেরবার কিছুটা প্রায়শ্চিত্ত করার চেষ্টা। সুতরাং কালোটাকা সাদা করার সুযোগ রয়েই গেল। অতএব কালোটাকার মালিকদের দুশ্চিন্তার কিছু নেই। সরকার কালোটাকার মালিকদের পক্ষেই আছে। সরকারও জানে করোনা মহামারির এই সময়ে অর্থ পাচার একটু কঠিন হয়ে গেছে। সুতরাং দেশের মধ্যেই তাদের স্বস্তি দিতে হবে। আর এ কাজটাই করলেন অর্থমন্ত্রী।
কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া বাংলাদেশ সরকারের একটি পুরোনো রোগ। প্রথম এই অসুখ ধরা পড়েছিল ১৯৭৫ সালে। সেই প্রথম কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া শুরু। তারপর থেকে সব সরকারই এই সুযোগ দিয়ে আসছে। ১৯৭৫ সালের পর থেকে কালোটাকা প্রতিরোধের একটি চেষ্টাও হয়নি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ অন্তত কালোটাকার মালিকদের ধরার চেষ্টাটা করেছে, বাংলাদেশে তা–ও হয়নি।
সংবিধানের ২০ (২) ধারায় বলা আছে, রাষ্ট্র এমন অবস্থা সৃষ্টির চেষ্টা করবে, যেখানে সাধারণ নীতি হিসাবে কোনো ব্যক্তি অনুপার্জিত আয় ভোগ করিতে সমর্থ হবেন না। আবার গত জাতীয় নির্বাচনের আগে ঘোষিত আওয়ামী লীগের ইশতেহারে বলা আছে, ঘুষ, অনুপার্জিত আয়, কালোটাকা, চাঁদাবাজি, ঋণখেলাপি, টেন্ডারবাজি ও পেশিশক্তি প্রতিরোধ এবং দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়ন নির্মূলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে সংবিধান বা নির্বাচনী ইশতেহার—কোনো প্রতিশ্রুতির কোনো প্রতিফলন অর্থনীতিতে নেই।
আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা মেনে বাংলাদেশও অর্থের সব ধরনের অপব্যবহার বন্ধে একটি মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন করেছে। এই মানি লন্ডারিংয়ের তিনটি ধাপ বা প্রক্রিয়া থাকে। যেমন প্লেসমেন্ট, লেয়ারিং ও ইন্টিগ্রেশন। মূলত অবৈধ অর্থ দিয়ে কোনো পণ্য কিনে সেটিকে সম্পদে পরিণত করাকে প্লেসমেন্ট বলা হয়। আর সেই লেনদেনকে আড়াল করার জন্য অন্যের কাছে বা অন্য কোনো দেশে বিক্রি করে অবৈধ আয়কে বৈধ করার চেষ্টাকে লেয়ারিং বলা হয়। এরপরেই সবশেষ পর্যায়। অর্থাৎ সেই পণ্য আবার বিক্রি করে আয়কে সাদা করে আর্থিক ব্যবস্থায় বিনিয়োগকে বলা হয় ইন্টিগ্রেশন। অর্থাৎ অবৈধ অর্থকে বৈধ করাই হচ্ছে মানি লন্ডারিংয়ের শেষ ধাপ। এ জন্য কালোটাকার মালিকদের বহু কষ্ট করতে হয়। অথচ বাংলাদেশ সরকার বাজেটের মাধ্যমে এই কাজ বছরের পর বছর ধরে সহজ করে দিচ্ছে।
২০১২ সালে ভারতে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকার কালোটাকা নিয়ে একটি শ্বেতপত্র তৈরি করেছিল। তখন দেশটির অর্থমন্ত্রী ছিলেন প্রয়াত রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি। সে সময় বিরোধী দলে থাকা বিজেপি সংসদে কালোটাকা নিয়ে ব্যাপক হইচই করেছিল। লালকৃষ্ণ আদভানি ৪০ দিনের রথযাত্রা করেছিলেন। নানা ধরনের আলোচনার মুখে শেষ পর্যন্ত একটি শ্বেতপত্র তৈরি করেছিল সরকার। সেই শ্বেতপত্রে কালোটাকার সংজ্ঞা থেকে শুরু করে কালোটাকার হার, কোন কোন উৎসে কালোটাকা তৈরি হয়, কালোটাকা কোন কোন পথে পাচার হয়ে যায়, কালোটাকা বন্ধে সরকারের নেওয়া ব্যবস্থা এবং ভবিষ্যৎ কর্মপন্থার বিস্তারিত বিবরণ ছিল।
কালোটাকার শ্বেতপত্রে কতটা কাজ হয়েছিল, এ নিয়ে বিতর্ক আছে। তবে এর মাধ্যমে কালোটাকার বিরুদ্ধে সরকারের অবস্থান অন্তত স্পষ্ট হয়েছিল। এরপর সরকার সত্যিকার অর্থেই বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়। যে বিজেপি বিরোধী দলে থাকতে কালোটাকা নিয়ে হইচই করেছিল, ক্ষমতায় বসে তারাও নোট বাতিলসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়।
আবার কর ফাঁকি দিয়ে সুইস ব্যাংকে মার্কিন নাগরিকদের অর্থ রাখার তথ্য ফাঁস হলে ২০১০ সালে ওবামা সরকার নতুন আইন করেছিল। এই আইনের কারণেই এখন যেকোনো বিদেশি ব্যাংক মার্কিন নাগরিকদের ব্যাংক হিসাবের তথ্য দিতে বাধ্য।
ব্যতিক্রম বাংলাদেশ, পাকিস্তানও। এই দুই দেশ প্রায় একইভাবে বছরের পর বছর ধরে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দিয়ে আসছে। পাকিস্তানেও প্রতি বাজেটে এই সুযোগ রাখা হয়, এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হয়, সরকারের পক্ষ থেকেও বেশ কিছু প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়, তারপর আবার পরের বাজেটে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে। বাংলাদেশেও ঠিক তাই।
সুতরাং কালোটাকার মালিকদের দুশ্চিন্তার কিছু নেই।