আইএমএফের প্রতিবেদন

প্রবৃদ্ধির শীর্ষ তিনে বাংলাদেশ

বাংলাদেশের জন্য ভালো খবর দিল আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। চলতি বছরে অর্থাৎ ২০২০ সালে সবচেয়ে বেশি মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি অর্জন করা বিশ্বের শীর্ষ তিন দেশের একটি হবে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৩ দশমিক ৮ শতাংশ। বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে থাকবে শুধু গায়ানা ও দক্ষিণ সুদান। গতকাল মঙ্গলবার প্রকাশিত আইএমএফের ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুকে এই পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

অবশ্য আইএমএফ অর্থবছর ধরে নয়, পঞ্জিকাবর্ষ ধরে অর্থাৎ জানুয়ারি-ডিসেম্বর সময় ধরে প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দেয়। এবার পঞ্জিকাবর্ষ ধরে এই হিসাব করলেও সেটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, বিশ্বব্যাপী করোনার মূল আঘাত ২০২০ সালের প্রায় পুরোটা জুড়ে রয়েছে। সামনের এই কয় মাসে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে।

গত সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকের যৌথ বার্ষিক সভা শুরু হয়েছে। এবার সভাটি অনলাইনে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সভার অংশ হিসেবে গতকাল আইএমএফ ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক প্রকাশ করেছে। আইএমএফের প্রধান অর্থনীতিবিদ গীতা গোপীনাথ সংবাদ সম্মেলন করে প্রতিবেদনটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছরে মাত্র ২২টি দেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক হবে। এর মানে, জিডিপি বাড়বে। ওই ২২টি দেশের একটি বাংলাদেশ। বাকি সব দেশের জিডিপি সংকুচিত হবে, প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক হবে। যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, জাপানের মতো বড় অর্থনীতির দেশগুলোর প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক হবে বলে মনে করছে এই বহুজাতিক দাতা সংস্থা।

আইএমএফের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ২০২২ সালে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি বেড়ে ৪ দশমিক ৪ শতাংশ হবে। ২০২৫ সালে তা ৭ দশমিক ৩ শতাংশে উন্নীত হবে। এর মানে, মোটামুটি করোনার আগের অবস্থায় ফিরে যেতে আরও চার বছর অপেক্ষা করতে হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে সংস্থাটি।

এর আগে গত এপ্রিল মাসে প্রকাশিত আইএমএফের ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক ২০২০, দি গ্রেট লকডাউন’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ২০২০ সালে বাংলাদেশে ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে। ঠিক ছয় মাস পরে প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস বাড়িয়ে দিল সংস্থাটি। অবশ্য গত জুন মাস থেকে বাংলাদেশের অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য খুলতে শুরু করেছে। এপ্রিলের পূর্বাভাসে ২০২১ সালে সাড়ে ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধির কথা বলা হয়েছিল। এখন আইএমএফ বলছে, আগামী বছর তা কমে ৪ দশমিক ৪ শতাংশ হতে পারে।

আইএমএফসহ সব দাতা সংস্থা বাংলাদেশ সম্পর্কে পূর্বাভাস দিচ্ছে, তাতে একটি বার্তা পরিষ্কার, দেশের অর্থনীতি ইতিবাচক ধারায় আছে। এটি আশাবাদী হওয়ার মতো। পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া সঠিক পথেই আছে।
সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান

জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান প্রথম আলোকে বলেন, আইএমএফসহ সব দাতা সংস্থা বাংলাদেশ সম্পর্কে পূর্বাভাস দিচ্ছে, তাতে একটি বার্তা পরিষ্কার, দেশের অর্থনীতি ইতিবাচক ধারায় আছে। এটি আশাবাদী হওয়ার মতো। পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া সঠিক পথেই আছে। হয়তো প্রবৃদ্ধির সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে। গত এপ্রিল-মে মাসের কঠোর বিধিনিষেধের পর সবকিছু খুলে দেওয়া হয়েছে। এর প্রতিফলন ঘটেছে বিভিন্ন সংস্থার প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাসে।

সেলিম রায়হানের মতে, অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি রপ্তানি ও প্রবাসী আয় ভালো অবস্থায় আছে। কিন্তু আমেরিকা ও ইউরোপে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। বড় অর্থনীতির দেশগুলো ধাক্কা খাচ্ছে। তখন রপ্তানি ও প্রবাসী আয় নিয়ে শঙ্কা আছে। আইএমএফের পরবর্তী পর্যালোচনায় বোঝা যাবে, বাংলাদেশের অর্থনীতি কোন দিকে যাচ্ছে।

মাত্র ২২ দেশের ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি

আইএমএফের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২০ সালে মাত্র ২২টি দেশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক হবে। এ তালিকায় বাংলাদেশ ছাড়া উল্লেখযোগ্য দেশের মধ্যে রয়েছে চীন, লাওস, গায়ানা, দক্ষিণ সুদান, মিসর, মিয়ানমার, রুয়ান্ডা, বতসোয়ানা, ভিয়েতনাম ইত্যাদি। আইএমএফের মতে, ক্যারিবীয় দেশ গায়ানায় এ বছর সবচেয়ে বেশি ২৬ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে। আর দক্ষিণ সুদানেও বাংলাদেশের চেয়ে বেশি ৪ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে আইএমএফ।

কোভিড-১৯ নিয়ে পরাশক্তিগুলোর টালমাটাল অবস্থা। আইএমএফ বলছে, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, জার্মানি, জাপান, যুক্তরাজ্যে ঋণাত্মক বা মাইনাস প্রবৃদ্ধি হতে পারে। কেবল চীনের প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ৯ শতাংশ হতে পারে।

দেশে দেশে জিডিপি সংকোচন

মাত্র ২২টি দেশ ছাড়া বাকি সব দেশেই জিডিপি প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক হবে বলে মনে করছে আইএমএফ। সবচেয়ে বেশি জিডিপি সংকোচন হবে লিবিয়ায়, প্রায় ৬৭ শতাংশ। এ ছাড়া ভেনেজুয়েলা, লেবানন, ফিজিতে ২০ শতাংশের বেশি জিডিপি সংকুচিত হতে পারে।

কোভিড-১৯ নিয়ে পরাশক্তিগুলোর টালমাটাল অবস্থা। আইএমএফ বলছে, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, জার্মানি, জাপান, যুক্তরাজ্যে ঋণাত্মক বা মাইনাস প্রবৃদ্ধি হতে পারে। কেবল চীনের প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ৯ শতাংশ হতে পারে।

আইএমএফ বলছে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভারতের প্রবৃদ্ধি মাইনাস ১০ দশমিক ৩ শতাংশ হতে পারে। এ অঞ্চলে ভুটান ও বাংলাদেশ ছাড়া আর কোনো দেশে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি হবে না বলে মনে করে আইএমএফ। এ ছাড়া সারা বিশ্বের গড় জিডিপি প্রবৃদ্ধি মাইনাস ৪ দশমিক ৪ শতাংশ হওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে দাতা সংস্থাটি।