প্রথম নারী অর্থমন্ত্রীর সামনে কঠিন পথ

জ্যানেট ইয়েলেন
জ্যানেট ইয়েলেন

আমেরিকার ইতিহাসে প্রথম নারী অর্থমন্ত্রী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েই সোচ্চার হলেন জ্যানেট ইয়েলেন। দেশটির শীর্ষ ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের সাবেক এই চেয়ারপারসনের (২০১৪-১৮) কথায়, আবারও আর্থিক সংকটের মুখে দাঁড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্র। অবিলম্বে ব্যবস্থা না নিলে করোনার ধাক্কায় জেরবার অর্থনীতির সামনের সময়টা আরও কঠিন হবে। সেই সঙ্গে তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন, এই দায়িত্ব পেলে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের কথা মাথায় রেখেই নীতি তৈরি করবেন তাঁরা।

করোনার ধাক্কা মোকাবিলায় প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে বিভিন্ন দেশের সরকার। আমেরিকায় ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের ঘোষিত প্রণোদনার মেয়াদ ইতিমধ্যেই ফুরিয়েছে। নতুন প্রকল্পের জন্য কথা চালাচ্ছেন কংগ্রেসের সদস্যরা, যদিও তাতে ফল কতটা মিলবে, তা নিয়ে সংশয় থাকছে।

এই পরিস্থিতিতে ইয়েলেনের জন্য কঠিন পরীক্ষা অপেক্ষা করে আছে বলেই মত সংশ্লিষ্ট মহলের। ২০০৮-০৯ সালের বিশ্ব মন্দার পরবর্তী সময়ে ফেড রিজার্ভের ভাইস চেয়ারপারসন এবং তারও আগে নব্বইয়ের দশকে বিল ক্লিনটন জমানায় প্রেসিডেন্টের আর্থিক উপদেষ্টা পরিষদের প্রধানের দায়িত্ব সামলানো ইয়েলেন নিজেই তা জানেন।

এদিকে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বসে নেই। পোষা কুকুরের সঙ্গে খেলতে গিয়ে পা মচকালেও নতুন এক বড় ধরনের প্রণোদনা প্যাকেজ প্রণয়নে কাজ করছে তাঁর দল। তবে সময় তাঁদের একদম অনুকূলে নয়, সেটা তাঁরা জানেন।

নতুন প্রেসিডেন্টকে একই সঙ্গে অর্থনৈতিক ও স্বাস্থ্য ফ্রন্ট সামলাতে হবে। এর সঙ্গে তো দেশের ভেতরে সংস্কৃতির ভাঙা সেতু আছেই, ডোনাল্ড ট্রাম্প যেভাবে জাতিকে বিভক্ত করেছিলেন, সেটা তাঁকে সামলাতে হবে। তৈরি করতে হবে নতুন মৈত্রীর বন্ধন।

তবে জো বাইডেন জ্যানেট ইয়েলেনের যোগ্যতার ব্যাপারে উচ্ছ্বসিত। তিনি মনে করেন, এই সংকট মোকাবিলায় ইয়েলেনের চেয়ে যোগ্য আর কেউ নেই। তিনি জ্যানেটকে এই সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক চিন্তকদের একজন মনে করেন।

বাইডেন সম্প্রতি বলেছেন, ‘ইয়েলেন সারা জীবন কর্মসংস্থান ও শ্রমের মর্যাদা নিয়ে কাজ করেছেন। ফলে মানুষ ও সমাজের কাছে চাকরি কী জিনিস, তিনি বোঝেন। তিনি সর্বজন শ্রদ্ধেয় মানুষ। তিনি ব্রুকলিনের শ্রমিক পরিবার থেকে আসা মানুষ। তিনি কখনো ভোলেননি, কোত্থেকে এসেছেন।’ বাইডেন আরও বলেন, ইয়েলেন মার্কিনদের আবারও স্বপ্ন দেখাতে ২৪ ঘণ্টা কাজ করতে বদ্ধপরিকর।

এদিকে প্রায় প্রতিদিনই লাখের ওপর মানুষ যুক্তরাষ্ট্রে কোভিডে আক্রান্ত হচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া খুবই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে বলে মনে করেন ফেডের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল। তিনি মনে করছেন, পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া নির্ভর করছে মূলত ভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের ওপর। তাঁর মত, মানুষ যত দিন না নিশ্চিত হচ্ছে যে কাজে যাওয়া নিরাপদ, তত দিন পূর্ণাঙ্গ পুনরুদ্ধার সম্ভব নয়।

এর আগে ইউরোপিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাংকের এক ভার্চ্যুয়াল অনুষ্ঠানে জেরোম পাওয়েল একই কথার পুনরাবৃত্তি করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া নিয়ে আমরা কথা বলছি, কিন্তু কোভিডের আগে যে অর্থনীতি আমরা চিনতাম, তা আর থাকবে না।’

সম্প্রতি টিকার অগ্রগতি মধ্য মেয়াদে অত্যন্ত ইতিবাচক বলে মনে করেন জেরোম পাওয়েল। তবে টিকা পাওয়া গেলেও অনেক চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে—সময়মতো উৎপাদন, সংরক্ষণ, বিতরণ এগুলো তো আছেই, তার সঙ্গে এই টিকা সব জনগোষ্ঠীর জন্য কার্যকর কি না, তা নিয়েও অনিশ্চয়তা আছে।

জ্যানেট ইয়েলেন অর্থমন্ত্রী হলে তিনিই হবেন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয়ের ২৩১ বছরের ইতিহাসে প্রথম নারী অর্থমন্ত্রী। শুধু তা–ই নয়, একাধারে ফেড ও কাউন্সিল অব ইকোনমিক অ্যাডভাইজর্স ও অর্থমন্ত্রী হওয়া একমাত্র মানুষ।