দেশে যথেষ্ট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে, গ্রাহকও বেড়েছে। এখন উন্নত সঞ্চালন ও বিতরণব্যবস্থা গড়ে তোলায় জোর দিতে হবে।
দেশে গত এক দশকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা ও গ্রাহকের সংখ্যা দুটোই বেশ বেড়েছে। এখন সরকারের উন্নত সঞ্চালন ও বিতরণব্যবস্থা গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব দেওয়া উচিত। একই সঙ্গে নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে অগ্রাধিকার দেওয়া দরকার।
‘অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় বিদ্যুৎ খাত: ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা ও উদ্যোগসমূহ’ শীর্ষক এক ভার্চ্যুয়াল সংলাপে বিশেষজ্ঞরা এই অভিমত দেন। সংলাপে সঞ্চালন ও বিতরণব্যবস্থায় নজরদারির জন্য ন্যাশনাল লোড ডেসপাস সেন্টার (এনএলডিসি) নামে একটি স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা গড়ে তোলার পরামর্শ দেওয়া হয়। এ ছাড়া বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি আইন (দায়মুক্তি আইন) থেকে বের হয়ে আসার সুপারিশ করা হয়।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) গতকাল বৃহস্পতিবার এই সংলাপের আয়োজন করে। এতে বিশেষজ্ঞরা আসন্ন অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় বিদ্যুৎ খাতে প্রয়োজন ও চাহিদার যৌক্তিক প্রক্ষেপণ, পরিবেশবান্ধব জ্বালানি, দক্ষতা বৃদ্ধি ইত্যাদি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করার তাগিদ দেন।
ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, বিদ্যুৎ প্রকল্পে এখনো সরাসরি পদ্ধতিতে (ডিপিএম) দরপত্র আহ্বান করা হয়। ডিপিএম থেকে বের হয়ে উন্মুক্ত দরপত্রে (ওটিএম) যেতে হবে। কিন্তু সে রকম কোনো উদ্যোগই দেখা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘আমাদের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোয় এখন দক্ষ ও যোগ্য মানুষের খুবই অভাব। পরিকল্পনা কমিশনের মতো একটি প্রতিষ্ঠান পুরোপুরি অর্থহীন। এখানে যেসব নীতি–পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়, তার সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল থাকে না। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় (২০১৬-২০) যেসব লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল, বাস্তবতার সঙ্গে সেগুলোরও মিল ছিল না।’
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ইজাজ হোসেন বলেন, ‘টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (স্রেডা) তাদের ওয়েবসাইটে বলছে, দেশে এখন ২ হাজার ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে আসছে। অথচ বাস্তবতা হলো, নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে মাত্র ৩৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসছে। আমার প্রশ্ন হলো, ২ হাজার ১০০ মেগাওয়াট দেখানোর দরকার কী?’ সরকারকে সঠিক তথ্য দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
সেন্টার ফর এনার্জি রিসার্চের পরিচালক শাহরিয়ার আহমেদ বলেন, ‘সারা বিশ্বই নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে যাচ্ছে। কিন্তু আমরা নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে ততটা এগোতে পারছি না। আমাদের বলা হচ্ছে, জায়গা নেই। তাই নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিকাশ হচ্ছে না।’
মূল প্রবন্ধে সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, কয়লা ও তেলভিত্তিক জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে জোর দিতে হবে। সেই সঙ্গে অদক্ষতা, দুর্নীতি ও অসংগতি বন্ধেও নজর দেওয়া প্রয়োজন। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার অভিজ্ঞতার আলোকে বিদ্যুৎ খাতে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়নের পরামর্শ দেন তিনি।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, বর্তমানে পরিবেশবান্ধব জ্বালানিকে গুরুত্ব দিয়ে আঞ্চলিক সহযোগিতার ভিত্তিতে জ্বালানি আমদানির পরিবর্তে জ্বালানি বিনিময়ে জোর দেওয়া হচ্ছে।
স্রেডার চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলাউদ্দিন বলেন, এখনই পুরোপুরি নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও সৌর বিদ্যুতের ওপর নির্ভর করা সম্ভব নয়। তবে ছাদের ওপর সোলার প্যানেল বসিয়ে সৌরশক্তির ব্যবহার বাড়াতে সরকার ব্যাপকভাবে কাজ করছে। জলবিদ্যুৎ আমদানি নিয়েও পরিকল্পনা চলছে।
সংলাপে আরও উপস্থিত ছিলেন সিপিডির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান, নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ম তামিম।