আইডিআরএ ৪২টি কোম্পানিকে দুই দফায় চিঠি পাঠিয়ে পরিশোধিত মূলধন ৩০ কোটি ও ৪০ কোটি টাকা করার নির্দেশ দিয়েছে।
আইনি বাধ্যবাধকতা মেনে পরিশোধিত মূলধন সংরক্ষণে ব্যর্থ বিমা কোম্পানিগুলোকে এ পরিশোধিত মূলধন বাড়াতে এক মাস সময় বেঁধে দিয়েছে বিমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। তবে হাতে গোনা কয়েকটি বিমা কোম্পানি ছাড়া দেশের বেশির ভাগ বিমা কোম্পানিই পরিশোধিত মূলধনসংক্রান্ত আইনি বাধ্যবাধকতার শর্ত পূরণ করে ফেলেছে।
আইডিআরএ ১২ জানুয়ারি ১২টি জীবনবিমা ও ১৭ জানুয়ারি ৩০টি সাধারণ বিমা কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাদের (সিইও) এ বিষয়ে দুটি চিঠি দিয়েছে। দেশে জীবনবিমা কোম্পানিগুলো ‘লাইফ’ ও সাধারণ বিমা কোম্পানিগুলো ‘নন-লাইফ’ হিসেবে পরিচিত।
লাইফ ও নন-লাইফ—উভয় ধরনের কোম্পানিকেই বিমা আইন, ২০১০-এর ২১(৩) ধারা পরিপালন করতে বলা হয়েছে। জীবনবিমা কোম্পানিকে দেওয়া চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন আইডিআরএর পরিচালক মো. শাহ আলম। আর নন-লাইফ বিমা কোম্পানিকে দেওয়া চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন আরেক পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম।
বিমা আইনের ওই ধারার তফসিল-১-এ বলা হয়েছে, দেশে নিবন্ধিত লাইফ বিমা কোম্পানির ক্ষেত্রে ন্যূনতম পরিশোধিত মূলধন হবে ৩০ কোটি টাকা, যার ৬০ শতাংশ আসবে উদ্যোক্তাদের কাছ থাকে। আর বাকি ৪০ শতাংশ নেওয়া হবে জনসাধারণের কাছ থেকে। আর দেশে নিবন্ধিত নন-লাইফ বিমা কোম্পানির ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, পরিশোধিত মূলধন হবে ৪০ কোটি টাকা, যার ৬০ শতাংশ উদ্যোক্তারা দেবেন আর ৪০ শতাংশ উন্মুক্ত থাকবে জনসাধারণের জন্য।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে জানা গেছে, শেয়ারবাজারে বর্তমানে ৪৯টি বিমা কোম্পানি তালিকাভুক্ত। এর মধ্যে নন-লাইফ ৩৭টি এবং লাইফ ১২টি। এর মধ্যে নন-লাইফের মধ্যে পরিশোধিত মূলধন ৪০ কোটি টাকার নিচে রয়েছে মাত্র ৪টির। এগুলোর মধ্যে প্রভাতী ইনস্যুরেন্সের পরিশোধিত মূলধন রয়েছে ২৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা, প্যারামাউন্ট ইনস্যুরেন্সের ৩৩ কোটি ৮৯ লাখ টাকা, অগ্রণী ইনস্যুরেন্সের ৩০ কোটি ২৪ লাখ টাকা এবং ইসলামিক ইনস্যুরেন্সের ৩৭ কোটি ৪২ লাখ টাকা।
তবে লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানিগুলোর মধ্যে পরিশোধিত মূলধন ৩০ কোটি টাকার কম রয়েছে মাত্র দুটির। এর মধ্যে রূপালী লাইফ ইনস্যুরেন্সের ২৯ কোটি ৪৩ লাখ টাকা এবং প্রগ্রেসিভ লাইফ ইনস্যুরেন্সের পরিশোধিত মূলধন ১৬ কোটি ৬৪ লাখ টাকা।
বিমা কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের (সিইও) সংগঠন বাংলাদেশ ইনস্যুরেন্স ফোরামের সভাপতি বি এম ইউসুফ আলী বলেন, চিঠি এসেছে বলে তিনি শুনেছেন, তবে পড়তে পারেননি। তাই কোনো মন্তব্য করতে পারছেন না।
ডিএসই সূত্রে আরও জানা গেছে, তালিকাভুক্ত ৪৯ বিমা কোম্পানির মধ্যে মাত্র ৫টির উদ্যোক্তাদের শেয়ার রয়েছে ৬০ শতাংশ বা তার বেশি। এগুলো হচ্ছে পাইওনিয়ার ইনস্যুরেন্স, এক্সপ্রেস ইনস্যুরেন্স, ক্রিস্টাল ইনস্যুরেন্স, ঢাকা ইনস্যুরেন্স ও রিলায়েন্স ইনস্যুরেন্স কোম্পানি। এ ছাড়া ৬০ শতাংশের নিচে রয়েছে ৪৪টি কোম্পানির উদ্যোক্তাদের শেয়ার।
নন-লাইফের যে কোম্পানিগুলো চিঠি পেয়েছে, সেগুলো হচ্ছে অগ্রণী ইনস্যুরেন্স, এশিয়া ইনস্যুরেন্স, এশিয়া প্যাসিফিক জেনারেল ইনস্যুরেন্স, বাংলাদেশ কো-অপারেটিভ ইনস্যুরেন্স, বিজিআইসি, কন্টিনেন্টাল ইনস্যুরেন্স, সেন্ট্রাল ইনস্যুরেন্স, গ্রিন ডেল্টা ইনস্যুরেন্স, গ্লোবাল ইনস্যুরেন্স, ইসলামী ইনস্যুরেন্স বাংলাদেশ, জনতা ইনস্যুরেন্স, কর্ণফুলী ইনস্যুরেন্স কোম্পানি। এ ছাড়া রয়েছে মেঘনা, মার্কেন্টাইল, নিটল, নর্দান ইসলামী, প্যারামাউন্ট, পিপলস, ফিনিক্স, পাইওনিয়ার, প্রগতি, প্রভাতী, পূরবী, রিপাবলিক, সোনার বাংলা, স্ট্যান্ডার্ড, সাউথ এশিয়া, তাকাফুল ইসলামী, ইউনিয়ন এবং ইউনাইটেড ইনস্যুরেন্স কোম্পানি।
লাইফের যে কোম্পানিগুলো চিঠি পেয়েছে, সেগুলো হচ্ছে ফারইস্ট লাইফ, পদ্মা ইসলামী লাইফ, পপুলার লাইফ, রূপালী লাইফ, সন্ধানী লাইফ, বায়রা লাইফ, মেঘনা লাইফ, গোল্ডেন লাইফ, হোমল্যান্ড লাইফ, প্রাইম ইসলামী লাইফ, প্রগতি লাইফ, প্রগ্রেসিভ লাইফ,, সানফ্লাওয়ার লাইফ এবং সানলাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি।
বিমা কোম্পানির মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনস্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন (বিআইএ) সূত্রে জানা গেছে, বিমা আইন ২০১০ অনুযায়ী উদ্যোক্তা ৬০ শতাংশ ও জনসাধারণ ৪০ শতাংশ শেয়ার ধারণ করবেন। কিন্তু এই আইন হওয়ার আগে উদ্যোক্তাদের ৪০ শতাংশ ও জনসাধারণকে ৬০ শতাংশ শেয়ার ধারণ করার কথা বলা ছিল। সে অনুযায়ী বেশির ভাগ কোম্পানিই শেয়ার সংরক্ষণের বিধান পালন করে আসছে।
বিআইএ সভাপতি শেখ কবির হোসেন বলেন, করোনার কারণে পুরো বিমা খাতই সমস্যায় আছে। এখন এই চিঠি পরিপালন করা দুরূহ। তবে নতুন কোম্পানিগুলোর শেয়ার ধারণের হার কার্যকর করা যায়।আগেরগুলোকে আগের হারেই চলতে দিতে হবে।