জি লিউ বেই পো কুন। চীনের শেনজেনে টেলিযোগাযোগ প্রযুক্তি ও মুঠোফোন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ের ক্যাম্পাসের নাম। ২৯৭ একর আয়তনের ওই ক্যাম্পাস মোট ১২টি ব্লকে বিভক্ত। পুরো ক্যাম্পাসে সবুজের সমারোহ।
হুয়াওয়ে এ বছর তাদের বার্ষিক বিশ্লেষক সম্মেলন শেষে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা সাংবাদিকদের ক্যাম্পাস দেখাতে নিয়ে গিয়েছিল। শেনজেন শহর থেকে ঘণ্টা খানেকের বেশি বাসযাত্রার পর পৌঁছানো গেল ডংগুয়ানের শংশান লেকসংলগ্ন হুয়াওয়ের ক্যাম্পাসে। এ ক্যাম্পাসে কাজ করেন প্রতিষ্ঠানটির গবেষকেরা, যাঁরা হুয়াওয়ের ভেতরে সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তি।
২০১৮ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, হুয়াওয়ে ওই বছর গবেষণা ও পণ্য উন্নয়নে ১০ হাজার ১৫১ কোটি ইউয়ান ব্যয় করেছে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ লাখ ২৯ হাজার কোটি টাকার সমান। একটি কোম্পানি হিসেবে গবেষণার পেছনে হুয়াওয়ে যা ব্যয় করে, তা বাংলাদেশের শিক্ষা ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের মোট ব্যয়ের প্রায় দ্বিগুণ। ২০১৭ সালের হিসাবে, কোম্পানিটির গবেষণা ও পণ্য উন্নয়নে নিযুক্ত ছিলেন ৮০ হাজার কর্মী, যা মোট কর্মীর ৪৫ শতাংশ। হুয়াওয়ের প্রতিষ্ঠা ১৯৮৭ সালে রেন ঝেংফেইয়ের হাতে। তিনি ছিলেন চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মির একজন প্রকৌশলী। শুরুতে প্রতিষ্ঠানটি ফোনের সুইচ তৈরি করত। হুয়াওয়ের কর্মীরা মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন তাদের দেশে হুয়াওয়ের প্রযুক্তি নিষিদ্ধ করেছে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে। এত কম খরচে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি আর কারও পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়। হুয়াওয়ে বিভিন্ন দেশের সাংবাদিকদের তাদের সাইবার সিকিউরিটি ল্যাবেও নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে দেখানো হয়, মার্কিন প্রশাসন নিষিদ্ধ করলেও দেশটির সার্টিফিকেশন সংস্থা দ্বারাই হুয়াওয়ে প্রযুক্তি সনদ পেয়েছে।
বিখ্যাত মার্কিন সাময়িকী ফরচুন-এর সেরা ৫০০টি কোম্পানির তালিকায় এখন ৭২তম হুয়াওয়ে। ২০১৮ সালে তাদের পণ্য বিক্রির পরিমাণ ছিল ৭২ হাজার ১২০ কোটি ইউয়ান, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৯ লাখ ২৩ হাজার কোটি টাকা। এ অর্থ বাংলাদেশের চলতি বাজেটের মোট ব্যয়ের প্রায় দ্বিগুণ। হুয়াওয়ের ইনস্টিটিউট অব স্ট্র্যাটেজিক রিসার্চের প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম সু বলেন, ‘উদ্ভাবনই হুয়াওয়েকে এ পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। ৬০টির বেশি গবেষণাগারে চীনা ও অন্যান্য দেশের ৭০০ জনের বেশি পিএইচডিধারী গণিতবিদ এবং ২০০ জনের বেশি পিএইচডিধারী রসায়ন ও পদার্থবিদ গবেষণা করেন।’
বাংলাদেশ প্রসঙ্গ
জানতে চাইলে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সাবেক সভাপতি আবুল কাসেম খান প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশে শিক্ষা খাতেই পর্যাপ্ত বরাদ্দ রাখা যাচ্ছে না। এ কারণে শিক্ষার মানও উন্নত নয়। বেসরকারি খাতে অনেক কোম্পানি বেশ বড় হচ্ছে। কিন্তু গবেষণা ও উন্নয়নে আলাদা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে উৎসাহ কম তাদের। তিনি বলেন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে ঢাকা চেম্বার থেকে গবেষণা ও উন্নয়নে কোম্পানির আয়ের ১ শতাংশ ব্যয় হিসেবে দেখানোর সুযোগ চাওয়া হয়েছিল, যাতে কর রেয়াত পাওয়া যায়। কিন্তু সেটা হয়নি।