ব্যাংক খাত

খেলাপি কমানোর পথ খোঁজা হচ্ছে

>

• ২০০৯ সালে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা
• ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে তা বেড়ে ৯৯ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা
• ১০ বছরে দেশে খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে সাড়ে চার গুণ

ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে হবে, এর কোনো বিকল্প নেই। এ জন্য পথ খুঁজছে সরকার। ব্যাংক উদ্যোক্তারাও এ নিয়ে কাজ শুরু করেছেন। সবাই মূলত ব্যাংক কোম্পানি আইন, অর্থঋণ আদালত আইন ও দেউলিয়া আইন সংশোধনের বিষয়ে আলোচনা করছেন। এসব আইনের মাধ্যমে কীভাবে খেলাপি ঋণ আদায় জোরদার করা যায়, তা নিয়েই চলছে বিশ্লেষণ। এ ছাড়া আদালতের রিটের কারণে যে টাকা আদায় হচ্ছে না, তা নিয়েও আলোচনা শুরু হয়েছে।

এরই অংশ হিসেবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের যুগ্ম সচিব রেজওয়ানুল হুদা গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। আজ থেকে সরকারি ব্যাংকগুলোর সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা শুরু করবে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। এর আগে ব্যাংক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি) বিভিন্ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সঙ্গে বৈঠক করে সমস্যা সমাধানের জন্য প্রস্তাব তৈরি করতে বলেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

নতুন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গত বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, ‘খেলাপি হওয়া ঋণ ধীরে ধীরে আদায়ের পাশাপাশি আজকের পর এক টাকাও বাড়বে না।’ ব্যাংক উদ্যোক্তা ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের সঙ্গে আলোচনাতেও খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনার নির্দেশ দেন তিনি। এরপর নতুন করে ভাবতে শুরু করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক ও ব্যাংকের উদ্যোক্তারা। খেলাপি ঋণ কমানোর নতুন পন্থা খুঁজছেন সবাই।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ সালে দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। আর ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে তা বেড়ে হয়েছে ৯৯ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। অর্থাৎ ১০ বছরে দেশে খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে সাড়ে চার গুণ। এর বাইরে গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর অবলোপন করা ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৯ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা। তবে ব্যাংকগুলো অবলোপন করা ঋণের ১১ হাজার ৮৭৯ কোটি টাকা আদায়ও করেছে।

খেলাপি ঋণসংক্রান্ত উল্লিখিত তথ্যটি বাংলাদেশ ব্যাংকের আনুষ্ঠানিক তথ্য। তবে ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, প্রকৃত খেলাপি ঋণ আরও অনেক বেশি। কারণ, অনেকগুলো ব্যাংক বড় অঙ্কের ঋণ আদায় করতে পারছে না, আবার তা খেলাপি হিসেবেও চিহ্নিত করছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকও প্রভাবশালীদের এসব ঋণে নজর দিতে পারছে না। এ ছাড়া শেয়ারবাজারের অজুহাতে প্রতিবছরই ব্যাংকগুলো নানা ছাড় নিচ্ছে। এতে করে খেলাপি ঋণের প্রকৃত তথ্যও বেরিয়ে আসছে না। পাওয়া যাচ্ছে না ব্যাংকগুলোর প্রকৃত চিত্র।

জানা গেছে, খেলাপি ঋণ কমানোর অংশ হিসেবে অর্থ মন্ত্রণালয় টানা আলোচনা শুরু করেছে। এর অংশ হিসেবে গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা হয়। এতে ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামাল, নির্বাহী পরিচালক আবদুর রহিম, আবু ফরাহ মো. নাছের, মহাব্যবস্থাপক আমজাদ হোসেন, আনোয়ারুল ইসলাম, সাইফুল ইসলাম অংশ নেন। তাঁরা আইন সংশোধনের পাশাপাশি আইনের যথাযথ প্রয়োগের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তবে এ বিষয়ে নাম প্রকাশ করে কেউ কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

 আজ বুধবার অগ্রণী ও কাল বৃহস্পতিবার রূপালী ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। আগামী সপ্তাহে সোনালী ও জনতা ব্যাংকের মতামত নেবে মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর সঙ্গেও এ নিয়ে আলোচনা করা হবে বলে জানা গেছে। 

এদিকে বিএবি থেকে ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশকে (এবিবি) একটি প্রস্তাব তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রস্তাবটি অর্থমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরবে বিএবি। তারা যেসব ঋণ আদালতে রিটের কারণে আদায় করা যাচ্ছে না, তা নিয়ে প্রস্তাব দেবে। এ ছাড়া যাঁরা ব্যবসায়িক ক্ষতির কারণে ঋণ শোধ করতে পারছেন না, তাঁদের নিয়েও সরকারের কাছে মতামত দেবে।

আরও পড়ুন: