>দিনাজপুর জেলা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সুজা উর রব চৌধুরী। পাশাপাশি তিনি জেলা চালকল মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদকেরও দায়িত্ব পালন করছেন। সম্প্রতি দিনাজপুরের ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্পকারখানা ও আগামী বাজেটে প্রত্যাশার বিষয়ে তাঁর সঙ্গে কথা হয় প্রথম আলোর। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন দিনাজপুর প্রতিনিধি রাজিউল ইসলাম।
প্রথম আলো: দিনাজপুরে বর্তমানে ব্যবসা-বাণিজ্য কেমন চলছে?
সুজা উর রব চৌধুরী: দিনাজপুর জেলা মূলত কৃষিপ্রধান। এই জেলা ধান উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। পাশাপাশি কৃষিজাত অন্যান্য ফসল যেমন ভুট্টা, আলু, টমেটো এবং মৌসুমি ফল হিসেবে আম ও লিচু এখানে ব্যাপকভাবে চাষাবাদ হয়ে থাকে। এর ফলে দিনাজপুরের ব্যবসা-বাণিজ্য মূলত কৃষিজাত বিভিন্ন পণ্যকে কেন্দ্র করেই পরিচালিত হয়ে আসছে। এখানে ব্যবসা-বাণিজ্যের মূলে আছেন কৃষক ও চালকলমালিকেরা। কিন্তু বর্তমান সময়ে কৃষক ও চালকলমালিক—কোনো পক্ষই ভালো নেই। একটি কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি আমরা। বলা যায়, স্থানীয়ভাবে আমরা ব্যবসায়ীরা এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছি।
প্রথম আলো: আপনি বলছেন কৃষক ও চালকলমালিক কেউই ভালো নেই। ব্যবসা-বাণিজ্যের অবস্থাও ভালো নয়। কারণটা কী?
সুজা উর রব চৌধুরী: বিগত দিনগুলোতে সরকার অনেক বেশি পরিমাণ চাল আমদানি করেছে। ফলে ধান–চালের দাম ক্রমাগত নিম্নমুখী হয়েছে। আমরা ব্যবসায়ী যাঁরা ধান কিনেছি, সেগুলো প্রক্রিয়াজাত করতে পারছি না, বাজারজাত করতে পারছি না। ফলে টাকাও আটকে আছে। একদিকে কৃষক তাঁর উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না, অন্যদিকে মিলমালিকেরা চালের দাম পাচ্ছেন না। এরপর আছে ব্যাংকঋণের চাপ। ব্যাংকের সুদ পরিশোধ করতে গিয়ে আমরা সাংঘাতিক চাপের মধ্যে পড়েছি। সামনে যে ইরি মৌসুম আসছে, সেখানে এর প্রভাব পড়বে বলে মনে করছি।
প্রথম আলো: দিনাজপুর বাংলাদেশের একটি পুরোনো শহর। কিন্তু তেমন কোনো শিল্পকারখানা গড়ে না ওঠার কারণ কী?
সুজা উর রব চৌধুরী: আমি প্রথমেই বলেছি, দিনাজপুর মূলত কৃষিপ্রধান জেলা। এখানে শিল্পকারখানা বলতে অটো, সেমি অটো ও হাসকিং চালকলগুলোকেই বোঝায়। এখানে কাঁচামাল বলতে কিন্তু ধান, চাল, ভুট্টা, গম—এসবই। একটি জেলায় শিল্পায়নের জন্য কাঁচামালের সহজলভ্যতা, গ্যাস, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ, উন্নত যোগাযোগব্যবস্থা, মূলধনের জোগানসহ সর্বোপরি সরকারি প্রণোদনা লাগে। শিল্পকারখানা গড়ে তোলার জন্য আমরা দীর্ঘদিন ধরে এখানে একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কথা বলে আসছি। কিন্তু সরকার কোনো উদ্যোগ নেয়নি। শিল্পকারখানা গড়ে তুলতে গেলে চট্টগ্রাম কিংবা মোংলা বন্দর দিয়ে কাঁচামাল আনতে হবে। আবার উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করার জন্য রাজধানীমুখী হতে হবে। তাতে পণ্যের উৎপাদনে যে খরচ দাঁড়াবে, তা দিয়ে আমরা প্রতিযোগিতায় টিকতে পারব না। এ কারণে এখানে কোনো শিল্পকারখানা গড়ে ওঠেনি।
প্রথম আলো: যত দূর জানি, দিনাজপুরের দশ মাইল এলাকায় সরকার একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছে?
সুজা উর রব চৌধুরী: এটি অনেক বড় একটি আশার কথা। দিনাজপুরে অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের জন্য দশ মাইল এলাকায় ইতিমধ্যে জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তবে এ জেলার অর্থনৈতিক উন্নয়ন করতে হলে কৃষিনির্ভরতা থেকে শিল্প ও সেবানির্ভর শিল্পে উত্তরণ ঘটাতে হবে। কৃষির আধুনিকীকরণ, উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার এবং কৃষিপণ্য সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াকরণ করা হলে দিনাজপুর শিল্পোন্নত জেলায় পরিণত হবে।
প্রথম আলো: আপনি বলছেন ব্যবসা-বাণিজ্যের অবস্থা ভালো না। তাহলে নতুন ব্যবসায়ী বা তরুণ উদ্যোক্তারা ব্যবসায় আসবেন কী করে?
সুজা উর রব চৌধুরী: পড়াশোনা শেষ করে যাঁরা ব্যবসা-বাণিজ্য করতে চান, আমরা তাঁদের উৎসাহিত করছি। ব্যবসা-বাণিজ্য করতে গেলে অবশ্যই ব্যাংকিং সুবিধা দরকার। কিন্তু নতুন ব্যবসায়ীরা কোনোভাবেই ব্যাংক থেকে ঋণ পান না। বড় ব্যবসায়ীরা অনেক সময় কম সুদে ঋণ পান, নতুনদের ঋণ পেতেই গলদঘর্ম হতে হয়। বেসরকারি সংস্থা ও বিদেশি দাতাদের কাছ থেকে অনেক সময় তরুণ উদ্যোক্তারা কিছু ঋণসুবিধা পান। কিন্তু সেগুলো ঢাকা এবং বড় শহরকেন্দ্রিক। উত্তরাঞ্চলের মানুষ এ ধরনের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
প্রথম আলো: সামনে বাজেট। বাজেট সামনে রেখে আপনার প্রত্যাশা কী?
সুজা উর রব চৌধুরী: একজন ব্যবসায়ী হিসেবে আমি চাই আগামী বাজেট ব্যবসায়ীবান্ধব হোক। দিনাজপুরের চালকলগুলো সচল রাখতে চাল আমদানিতে শুল্ক হার বাড়ানো দরকার। আয়কর, ভ্যাট, সম্পূরক শুল্ক আদায়ের হার বৃদ্ধি না করে এগুলোর আওতা বাড়াতে হবে। তা ছাড়া ব্যক্তিপর্যায়ের করমুক্ত আয়সীমা আড়াই লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে তিন লাখ টাকা করা হোক।