জরিপের তথ্য

করোনায় এসএমই পণ্যের চাহিদা কমেছে ৯৫%

করোনায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতের উদ্যোক্তারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ২০২১ সালে তাঁদের বিক্রি করোনার আগের চেয়ে ৮৬ শতাংশ কমে গেছে। এতে বছর শেষে তাঁরা ৬১ শতাংশ হ্রাসের শঙ্কা করছেন। সম্প্রতি ব্যবসায়ীদের উদ্যোগে গঠিত গবেষণা সংস্থা বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্ট (বিল্ড) ও বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জের যৌথ জরিপে এ তথ্য উঠে আসে।

তবে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) তথ্যানুসারে, ২০২০ সালে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের আয় কমেছিল ৬৬ শতাংশ।

করোনার প্রভাব মোকাবিলায় সরকার যে প্রণোদনা দিয়েছে, প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যয়, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে তার কী প্রভাব পড়েছে, তা মূল্যায়নে এ বছর মার্চে বিল্ড ও পলিসি এক্সচেঞ্জ এই জরিপ চালায়। এতে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, তৈরি পোশাক, হালকা প্রকৌশল, প্যাকেজিং ও কৃষি খাতে সারা দেশের ৫০ প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। বৃহস্পতিবার এক ওয়েবিনারে বিল্ড এ জরিপের ফল তুলে ধরে।

বিল্ডের জরিপ থেকে আরও জানা যায়, জরিপে অংশ নেওয়া ৮৩ শতাংশ প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, তারা কোনো প্রণোদনা পায়নি। ফলে ৬৯ শতাংশ প্রতিষ্ঠান কর্মীদের বেতন দিতে পারছে না। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুসারে, মার্চ পর্যন্ত ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য ঘোষিত প্রণোদনার ৭২ দশমিক ২৭ শতাংশ দেওয়া হয়েছে।

বিল্ডের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন আবুল কাসেম খান বলেন, চাহিদা, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান—এগুলো একটি আরেকটিকে চালনা করে। কোনো একটি কাজ না করলে তার প্রভাব আরেকটিতে পড়ে, ব্যাপারটা চক্রাকার।

অনুষ্ঠানে আরও অংশ নেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি রিজওয়ান রহমান, ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশনের (আইএলও) বাংলাদেশে পরিচালক টুমো পোটিয়াইনেন, সিপিডির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান, বিল্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস আরা বেগম, পলিসি এক্সচেঞ্জ অব বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা মাসরুর রিয়াজ। ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।

অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘এমন নয় যে সবাই আমাদের কাছে আসেন। অনেক সময় উদ্যোক্তারা নিজেদের মধ্যেই সমস্যা সমাধান করে নেন। আমরা তাঁদের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। এ ছাড়া সামনে দ্বিতীয় দফায় যে প্রণোদনা ঘোষণা করা হচ্ছে, তাতে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের আরও গুরুত্ব দেওয়া হবে। আশা করা যায়, এতে তাঁরা আবার আয়ের ধারায় ফিরতে পারবেন।’

রিজওয়ান রহমান অন্যান্য দেশের উদাহরণ দিয়ে বলেন, প্রণোদনা হিসেবে সরাসরি ঋণ না দিয়ে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের রাজস্ব ছাড় ও পরিষেবা বিলে ছাড় দেওয়া যেত।

বিল্ডের প্রতিবেদনে বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রণোদনার তুলনা করা হয়। এ ছাড়া প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়েও গুরুত্বারোপ করা হয়। ঋণ দেওয়ার প্রক্রিয়া সহজ করা, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের তালিকাভুক্ত করা ও ঋণ বিতরণের ঝুঁকি নিরূপণ প্রক্রিয়াকে ডিজিটালাইজেশন করার তাগিদ দেওয়া হয় এই প্রতিবেদনে।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে প্রণোদনার মাধ্যমে কর্মসংস্থান-চাহিদা-বিনিয়োগ—এই চক্রকে উদ্দীপ্ত করার চেষ্টা চলছে। কিন্তু ব্যাংকঋণের মাধ্যমে দেওয়া প্রণোদনা কর্মসংস্থানে প্রভাব ফেলতে পারেনি। সে জন্য এমন একটা উপায় বের করতে হবে, তাঁর মতে, যাতে বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানকে প্রণোদনা দেওয়া যায়। এ ছাড়া উদ্যোগের তালিকা করার বিষয়েও গুরুত্ব দেন তিনি।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন চিটাগং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (সিসিসিআই) প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল আলম, এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন ড. মো. মাসুদুর রহমান, চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহীম প্রমুখ।