সম্ভবত আমাদের প্রজন্মের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের সময়টা পার করছি আমরা। করোনাভাইরাসের ভয়াবহতার রেশ থাকবে আরও বেশ কয়েক মাস। ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির। লাখ লাখ মানুষ চাকরি হারাবে সারা বিশ্বে। নতুন দশকের শুরুতেই তাই আর্থিক মন্দাভাব থাকবে বছরজুড়ে।
এই প্রতিকূল সময়টায় দাঁড়িয়ে তাই সবার ভাবা দরকার কীভাবে নিজের, পরিবারের বা প্রতিষ্ঠানের খরচের মুখে লাগাম টেনে ধরবেন। এই কদিনে অবশ্য আমাদের বুঝে যাওয়ার কথা, কোনটা একান্তই প্রয়োজনীয় খরচ, আর কোনটা নিছক বিলাসিতা। এই শিক্ষাটা অবশ্য সব সময়ের জন্যই। তা–ও করোনা-পরবর্তী সময়ে যেন আর্থিকভাবে বিপদে পড়তে না হয়, সে জন্য এখন থেকেই সহজ কিছু উপায় মেনে চলুন।
১. খাতভিত্তিক মাসিক খরচের হিসাব করা
সবার প্রথমে যে কাজটি করতে হবে তা হলো, মাসিক খরচের একটা হিসাব করা। যে কদিন ঘরবন্দী আছেন, এই সময়টাতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এ কাজটি সেরে ফেলুন। পরিবার বা প্রতিষ্ঠান, যেকোনো ক্ষেত্রেই এই হিসাবটা জরুরি। কোন কোন খাতে প্রতি মাসে কত খরচ হয়, তার একটা ছক তৈরি করুন।
২. অপ্রয়োজনীয় খরচগুলোকে আলাদা করুন
সঠিকভাবে খরচের হিসাবটা করে ফেললেই কিন্তু আপনার অর্ধেক কাজ সারা। এবার দেখতে হবে আপনার মাসিক আয়ের সঙ্গে খরচের পার্থক্য কতটুকু। যদি হিসাব করে দেখেন আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হয়ে যাচ্ছে, তাহলে কোন কোন খরচের খাত একেবারেই অপ্রয়োজনীয় বা কোন কোন খাতে চাইলেই খরচ কমাতে পারবেন, সেটা দেখুন। যেমন, যদি দেখেন রেস্তোরাঁয় খাওয়া বাবদ খরচাপাতি বেশি হচ্ছে, তাহলে সেখানে যাওয়া কমান। অনলাইনে কোনো ইলেকট্রনিক গেজেট বা অন্যান্য কোনো পণ্য দেখলেই যদি কেনার প্রবণতা থাকে, একান্ত জরুরি না হলে সেই অভ্যাসটাও বদলান।
৩. মাসিক বাজেট করুন
এবার প্রতি মাসের জন্য একটা বাজেট তৈরি করুন, যেন মাস শেষে খরচ কোনোভাবেই আপনার নিয়মিত আয়কে ছাড়াতে না পারে। জরুরি চিকিৎসা বা অন্য কোনো বিপদের জন্য যেন কিছু অর্থ জমাতে পারেন, সে জন্য আয়ের একটা অংশ সঞ্চয়ের জন্যও বরাদ্দ রাখা লাগবে।
৪. পরবর্তী দুই মাস প্রতিটি খরচ লিখে রাখুন
বাজেট বানানো হলে এরপর যেটি করবেন তা হলো, পরবর্তী কয়েক মাস আপনার সমস্ত খরচকে আতশি কাচের নিচে ফেলবেন। কষ্ট করে অন্তত দুই মাস আপনার রোজকার খরচ কোথাও লিখে রাখুন। দুই মাস না পারলে অন্তত এক মাসের জন্য করুন। মোবাইলের নোটস, এক্সেল শিট, অনলাইনের চমৎকার কিছু টুলস অথবা কোনো ডায়েরি-নোটপ্যাডে টুকে রাখুন খরচের হিসাব। সাবধান থাকবেন কোনোভাবেই যেন মাসের শুরুতে ঠিক করা বাজেটের অতিরিক্ত খরচ না হয়। দুই-তিন মাস গেলেই পার্থক্যটা নিজেই টের পাবেন। বাজেটের মধ্যে খরচাদি সামলে ফেলার ইচ্ছেশক্তি থাকলেই দেখবেন, আগের বাজে খরচগুলো আর হচ্ছে না। পরিমিত ব্যয় করলে আপৎকালে কিছুটা নিশ্চিন্ত হতে পারবেন।
৫. সঞ্চয়ের জন্য মাসের প্রথমেই অর্থ আলাদা করুন
এরপর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ যেটি করবেন তা হলো, ব্যাংক-ডাকঘর-বিমা বা যেকোনো জায়গায় সঞ্চয়ী হিসাব খুলে ফেলা এবং প্রতি মাসে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ সেখানে জমা রাখা। যত কষ্টই হোক আপনার নিয়মিত আয়ের অন্তত ১০ শতাংশ সঞ্চয় করতে হবে। মাসের খরচের পরে অর্থ সঞ্চয় করতে গেলে দেখবেন, কোনোভাবেই জমানো হচ্ছে না। তাই মাসের শুরুতেই সঞ্চয়ী হিসাবে টাকা জমা রেখে দেবেন। কিছু টাকা জমে গেলে দেখবেন, মানসিক প্রশান্তিও এনে দিচ্ছে তা আপনাকে।
৬. ধার করে বিলাসী দ্রব্য কিনবেন না
প্রয়োজন এবং চাহিদার মধ্যে পার্থক্য বুঝতে শিখুন। ‘ডিসকাউন্ট অফার’-এর ফাঁদে পড়ে অনেক কেনাকাটাই কিন্তু করে ফেলি আমরা, এমনকি অনেক সময় কারও থেকে ধার করে বা ব্যাংক থেকে ক্রেডিট কার্ডে লোন নিয়ে কিনে ফেলি সেটা। হয়তো জিনিসটা আপনি পরে কিনলেও পারতেন। ধারকর্জ করা কখনোই সমাধান না। ধার না নিয়ে বরং নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, কী কী করলে অথবা কীভাবে আয় বাড়ালে বা সঞ্চয় করলে জিনিসটা আমি কিনতে পারব সামনে।
নিজের খরচের অভ্যাস বা খরচের খাতগুলো চিহ্নিত করাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এরপর মাসিক বাজেট করে পরিমিত ব্যয়ের অভ্যাসটা গড়ে তুলতে হবে। এতে করেই এই দুর্যোগের সময়ে কিছুটা মানসিক স্বস্তি পেতে পারেন।