করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় গেলে এক বছরে বাংলাদেশে প্রায় ৯ লাখ কর্মসংস্থান কমে যেতে পারে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) এক প্রতিবেদনে এ শঙ্কার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া ৩০০ কোটি ডলারের বেশি মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ক্ষতি হতে পারে, বর্তমান বাজারদরে (৮৫ টাকা প্রতি ডলার) যার পরিমাণ প্রায় সাড়ে ২৫ হাজার কোটি টাকা।
গত ৬ মার্চ এডিবি এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এডিবি বলছে, ২০১৮ সালে বাংলাদেশের জিডিপির আকার ছিল ২৭ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের বেশি। সেই হিসাবে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে খারাপ হলে বাংলাদেশে এক বছরে জিডিপির ১ শতাংশের বেশি ক্ষতি হবে। এশীয় ২৩টি দেশে করোনাভাইরাসের কারণে কী ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে, সেই হিসাব তুলে ধরা হয়েছে এডিবির ওই প্রতিবেদনে। গতকাল রোববার বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত তিন ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা হয়েছে। ইতালিফেরত বাংলাদেশিদের মাধ্যমে এই ভাইরাস এ দেশে প্রবেশ করেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা যায়।
এডিবি চার ধরনের সম্ভাবনা নিয়ে ওই প্রতিবেদন তৈরি করেছে। পরিস্থিতি সবচেয়ে ভালো থাকলে, সীমিত আকারে ছড়ালে, খারাপভাবে ছড়ালে এবং পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ হলে—এই চার ধরনের সম্ভাবনা ধরে এডিবি প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে।
এডিবির প্রতিবেদন অনুযায়ী করোনা পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ হলে মোটাদাগে পাঁচটি খাতে করোনার প্রভাব বাংলাদেশে পড়তে পারে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হবে ব্যবসা-বাণিজ্য ও সেবা খাতে। এই খাতে ১১৪ কোটি ডলারের সমপরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে। এ ছাড়া কৃষি খাতে ৬৩ কোটি ডলারের ক্ষতি হবে। এ ছাড়া হোটেল, রেস্তোরাঁ ও এ-সংক্রান্ত সেবা খাতে প্রায় ৫১ কোটি ডলার; উৎপাদন ও নির্মাণ খাতে প্রায় ৪০ কোটি ডলার এবং পরিবহন খাতে সাড়ে ৩৩ কোটি ডলার ক্ষতি হবে। সব মিলিয়ে এক বছরে ৩০২ কোটি ডলারের ক্ষতি হবে বলে আশঙ্কা করছে এডিবি।
করোনাভাইরাস সীমিত আকারে ছড়ালেও এশিয়ার ২৩টি দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করে এডিবি। কী পরিমাণ ক্ষতি হতে পারে, সেই চিত্র তুলে ধরেছে এডিবি। এই ২৩ দেশের তালিকায় বাংলাদেশ আছে। করোনাভাইরাস সীমিত আকারে ছড়ালে বাংলাদেশের জিডিপির দশমিক ০১ শতাংশ ক্ষতি হবে। সবচেয়ে বেশি চীনের জিডিপির আড়াই শতাংশ হারিয়ে যাবে।
গত জানুয়ারি মাসে চীনের উহান প্রদেশে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয়। এরপর প্রথমে তা চীনে ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে বিশ্বের ১০০ টির বেশি দেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ইতিমধ্যে করোনার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। চীন থেকে আমদানি কমেছে। চীন হলো বাংলাদেশের কাঁচামাল আমদানির প্রধান উৎস। গত ২২ ফেব্রুয়ারি সংবাদ সম্মেলন করে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিআই বলেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে চীন থেকে ৬ লাখ ৭২ হাজার টন পণ্য এসেছে। ২০১৯ ও ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে এর পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ৮ লাখ ৫১ হাজার টন ও ৮ লাখ ৯২ লাখ টন। তৈরি পোশাকের মধ্যে ওভেন খাতের ৬০ শতাংশ ও নিট পোশাকের ১৫-২০ শতাংশ কাঁচামাল আসে চীন থেকে। চীনা পণ্যের আমদানি কমে যাওয়ায় দেশের খুচরা বাজারেও বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়েছে। চীনা প্রকৌশলী ও কর্মী কাজ করেন, এমন বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্পেও কাজের শ্লথগতি রয়েছে।