করোনাভাইরাসের ঝুঁকি : কী করতে হবে

>করোনাভাইরাসের প্রভাব অর্থনীতিতে পড়বেই। প্রভাব কতটা কমানো যায়, সেটাই এখন আলোচনার বিষয়। এ নিয়ে নীতিনির্ধারক, অর্থনীতিবিদ ও উদ্যোক্তারা কী ভাবছেন? তাঁদের ভাবনা ও সুপারিশ নিয়েই এই আয়োজন।
মোস্তাফিজুর রহমান
মোস্তাফিজুর রহমান

ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা দিতে হতে পারে : মোস্তাফিজুর রহমান, বিশেষ ফেলো, সিপিডি
বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের বড় অংশীদার হচ্ছে চীন। আমাদের কাঁচামালের বড় একটি অংশ আসে চীন থেকে। এখন সেটা স্বাভাবিকভাবেই অনেক কমে গেছে। এতে আমাদের রপ্তানিকারকেরা আদেশ অনুযায়ী সরবরাহ দেওয়ার ক্ষেত্রে বিপাক পড়ছেন। আবার জাহাজ চলাচলেও নানা রকম সতর্কতা আছে, এতেও সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে।

অন্যদিকে ভোগ্যপণ্য সরবরাহ ব্যাহত হওয়ায় ভোক্তারা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, তেমনি উৎপাদনকারীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। রপ্তানির সবচেয়ে বড় গন্তব্য হচ্ছে ইউরোপ। ইতালির সরকার ইতিমধ্যে নাগরিকদের ঘর থেকে না বেরোনোর নির্দেশনা দিয়েছে। ইউরোপের অন্যান্য জায়গায়ও এ রকম নির্দেশনা দেওয়া হলে, সেখানকার মানুষের আয় কমবে। তখন তাঁদের চাহিদাও কমে যাবে। এতে বাংলাদেশের রপ্তানি যেমন মার খাবে, তেমনি ইউরোপজুড়ে বাঙালিদের যেসব ছোট ছোট ব্যবসা আছে, সেগুলো বন্ধ হবে। সেই ক্ষেত্রে আমাদের প্রবাসী আয়েও প্রভাব পড়বে।

করোনার প্রভাবে বিশ্বজুড়ে শেয়ারবাজারে ধস নামছে। বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত হয়ে বিনিয়োগ তুলে নিচ্ছেন। এতেও আমাদের রপ্তানি পণ্যের চাহিদা কমবে বলে ধারণা করা যায়।

প্রাদুর্ভাব যদি জুন-জুলাই পর্যন্ত থাকে, তাহলে হয়তো অর্থনীতি নিজের নিয়মে সবকিছু ঠিকঠাক করে নিতে পারবে। কিন্তু এর চেয়ে দীর্ঘমেয়াদি হলে বিপদ বাড়বে।

বিনিয়োগকারীরা আগেই চীনের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে চায়না প্লাস ১ কৌশল গ্রহণ করেছেন। এতে সেই প্রক্রিয়া আরও ত্বরান্বিত হবে। চীনে ব্যবসার খরচ বেড়ে গেছে। তারাও সানসেট শিল্প অন্যত্র স্থানান্তর করতে চাচ্ছে। সেই সুযোগ ইতিমধ্যে ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ার মতো দেশ নিতে শুরু করেছে। বাংলাদেশ এতে কতটা সুবিধা নিতে পারবে, তা নির্ভর করবে বাংলাদেশের অবকাঠামো ও প্রস্তুতির ওপর। তবে করোনার প্রভাবে ইতিমধ্যে জ্বালানি তেলের দাম বিশ্ববাজারে কমে গেছে। আর তেলের দাম কমলে পণ্যমূল্যও কমে। সব মিলিয়ে এতে আমাদের কিছুটা সুবিধা হয়েছে।

রপ্তানিকারকেরা মার খাবেন, তা নিশ্চিত। যাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, তাঁদের সহায়তা দিতে পারে। ২০০৭-০৮ সালের আর্থিক সংকটের সময়ও এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। তখন টাস্কফোর্স করে ক্ষতিগ্রস্ত রপ্তানিকারকদের সহায়তা করা হয়েছে। অন্যান্য দেশও প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করতে শুরু করেছে।

রুবানা হক

আশা করছি ব্র্যান্ডগুলো যৌক্তিক আচরণ করবে : রুবানা হক, সভাপতি, বিজিএমইএ
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের শুরুতে চীনা পণ্য ও কাঁচামাল আমদানি নিয়ে সংকট তৈরি হয়েছিল। তবে বর্তমানে চীনের পরিস্থিতি উন্নতি হলেও তৈরি পোশাকের বড় বাজারগুলোতে চাহিদা কমে যাচ্ছে। করোনাভাইরাস ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সব দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রেও জটিল পরিস্থিতি তৈরি করেছে ভাইরাসটি। আতঙ্কে মানুষজন ঘরের বাইরে কম যাচ্ছেন, ফলে বিক্রি কমে যাচ্ছে। ক্রেতারা সব সময় আমাদের ভবিষ্যতের ক্রয়াদেশের বিষয়ে ধারণা দেন। ইতিমধ্যে অনেক ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান ও ব্র্যান্ডের প্রতিনিধি আগামী মৌসুমে ক্রয়াদেশ কম দেওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে। কারখানায় পুরোনো ক্রয়াদেশের কাপড় কাটা না হলে সেটি কাটতে মানা করছেন ক্রেতারা। অনেক ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান তাদের কর্মীদের আগামী ১৫ দিন ঘরে বসে কাজ করার নির্দেশনা দিচ্ছে।

বাংলাদেশের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ার পরপরই আমরা বিজিএমইএ থেকে পোশাক কারখানাগুলোকে বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণে পরামর্শ দিয়েছি। সেসব যথাযথভাবে পালন করা হচ্ছে কি না, সেটি তদারকি করার জন্য প্রতিটি কারখানায় আমরা বিজিএমইএর লোক পাঠাব।

আগামী মাসেই পবিত্র রমজান মাস শুরু হবে। তারপরের মাসেই ঈদ। এমন একটা সময়ে করোনাভাইরাসের কারণে পোশাক রপ্তানি যাতে বাধাগ্রস্ত না হয়, সে জন্য নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে কী ধরনের উদ্যোগ নেওয়া দরকার, সে বিষয়ে আমরা কাজ করছি। আশা করছি, সরকার পুরো বিষয়টি অনুধাবন করে পোশাকসহ সব রপ্তানি খাতের দিকেই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবে।

করোনাভাইরাসের কারণে সারা বিশ্বই ভয়াবহ সংকটের মধ্যে আছে। আমরা আশা করছি, বৈশ্বিক ব্র্যান্ডগুলো দায়িত্বশীল আচরণ করবে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও সহযোগিতাই আমাদের এই ক্রান্তিকাল থেকে উদ্ধার করতে পারে।

ইতিমধ্যে কয়েকটি দেশে শ্রমিক ছাঁটাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। আমরা সেই পথে যেতে চাই না। করোনাভাইরাস নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি আছে। নতুন করে ছাঁটাই নিয়ে যেন আতঙ্ক না ছড়িয়ে পড়ে, সে জন্য ব্র্যান্ড ও ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা চাই আমরা। কারণ, পোশাকের ব্যবসাটা একটা দিনের নয়। আর সেই ব্যবসার গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে লাখ লাখ শ্রমিক।

শেখ ফজলে ফাহিম

সরকারের কাছে অনার্থিক সহযোগিতা চেয়েছি : শেখ ফজলে ফাহিম, সভাপতি, এফবিসিসিআই
দেশের আমদানি পণ্যের প্রায় ২৬ শতাংশ চীন থেকে আসে। দেশটিতে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার কারণে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে একটা অনিশ্চয়তা তৈরি হয় যে পণ্য আসবে কী করে। আমরা ফেব্রুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহে চীনে ব্যবসায়ীদের সংগঠন সিসিপিআইটি, সিল্করুট ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স ও কারখানা পর্যায়ে যোগাযোগ করেছি। তারা বলেছিল, ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে আবার পণ্য রপ্তানি শুরু হবে।

আমাদের বিশ্লেষণে দেখলাম, অর্থনীতির যে ক্ষতির কথা বলা হচ্ছিল, তা সমর্থনে সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান নেই। এর মধ্যে আমরা ডিএনবি ও ম্যাকেঞ্জি নামের দুটি বৈশ্বিক পরামর্শক সংস্থার প্রতিবেদন নিলাম। সেখানেও দেখা গেল, সরবরাহে কিছুটা বিলম্বের কথাই বলা হচ্ছে।

জানুয়ারিতে চীনে নববর্ষের ছুটির কারণে আমাদের দেশের ব্যবসায়ীরা আগে থেকে পণ্য আমদানি করে রাখেন। এবার করোনাভাইরাসের কারণে ছুটি দীর্ঘায়িত হয়েছে। ছুটির পর যেসব পণ্য আসার কথা, সে ক্ষেত্রে বিলম্ব হচ্ছে। এখন কিন্তু পণ্য আসতে শুরু করেছে। ফলে চীন থেকে পণ্য আমদানি বিঘ্নিত হওয়ার যে সমস্যা, সেটি আমরা কাটিয়ে উঠতে পারব বলে মনে হচ্ছে।

পণ্য দেরিতে আসার কথা আমরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংককে জানিয়েছি। বলেছি, আমদানিতে বিলম্ব হলে ব্যাংক যাতে ‘ফোর্সড লোন’ তৈরি করে ব্যবসায়ীদের জরিমানা না করে। যেসব ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান নথি দেখিয়ে বলতে পারবে যে করোনাভাইরাসের কারণে তাদের পণ্য দেরিতে এসেছে, তাদের যেন এ সুযোগটি দেওয়া হয়। অর্থ মন্ত্রণালয় এ ক্ষেত্রে নীতিগতভাবে একমত হয়েছে।

আমরা এখন দেখছি, কিছু কিছু দেশ করোনাভাইরাস ঠেকাতে এমন ব্যবস্থা নিচ্ছে, যাতে সবকিছু স্থবির হয়ে যাচ্ছে। ফলে চাহিদা কমে গিয়ে বাংলাদেশের রপ্তানিতে এর প্রভাব পড়ে কি না, সেটা আগামী কয়েক সপ্তাহে বোঝা যাবে। জানা যাবে, রপ্তানিকারকেরা জরিমানা বা মূল্য কম পাওয়ার ঘটনার শিকার হন কি না। এখন পর্যন্ত আমরা সরাসরি আর্থিক সহায়তার বদলে অনার্থিক নানা ব্যবস্থার কথা বলছি। আমরা চাই ব্যাংক চলতি মূলধনের জোগান, মজুরি ও বেতন দেওয়া, ব্যাক টু ব্যাংক ঋণপত্রের বিপরীতে অর্থ পরিশোধে সময় বাড়িয়ে দেওয়া, ঋণের কিস্তির সময় বাড়িয়ে দেওয়া ইত্যাদি সুবিধা দিয়ে করোনাভাইরাসের কারণে বিপদে থাকা ব্যবসায়ীদের পাশে থাকুক। সরকার আমাদের আশ্বাস দিয়েছে, এ সহায়তা পাওয়া যাবে।

ফজলুল হক

বড় অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছি : ফজলুল হক, সাবেক সভাপতি, বিকেএমইএ
বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের যে পরিস্থিতি, সেটা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের জন্য সুখকর নয়। এত দিন আমরা বলছিলাম, চীন থেকে আমাদের কারখানাগুলোর কাঁচামাল সরবরাহের সমস্যা হবে। মনে হচ্ছে, সরবরাহজনিত সমস্যাটি আমরা কাটিয়ে উঠতে পারব। করোনাভাইরাস যে সময়ে ছড়িয়ে পড়ে, তখন চীনে এমনিতেই নববর্ষের ছুটি ছিল। করোনার কারণে তা প্রলম্বিত হয়েছে। চীনে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। এখন সমস্যা হলো, আমাদের পণ্যগুলো যেখানে যাচ্ছে, সেই সব বাজারের পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। এতে আমরা বড় ধরনের অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছি।

পূর্বাভাস হলো, ইউরোপ ও আমেরিকার অনেক শহরে আগামী এক থেকে দেড় মাস কোনো কাজ হবে না। যুক্তরাষ্ট্রে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। ইতালি কার্যত অবরুদ্ধ। ইউরোপের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। বাংলাদেশসহ আক্রান্ত দেশের নাগরিকদের প্রবেশে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে বিভিন্ন দেশ। পোশাক খাতের কোনো কোনো ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান তাদের কার্যালয় আপাতত বন্ধ ঘোষণা করে বাসা থেকে কর্মীদের কাজ করার জন্য বলছে।

ইউরোপ ও আমেরিকার ক্রেতারা কেন এখন পোশাক কিনবে, যদি দেশে পণ্য পৌঁছানোর পরে তা কেনার লোক না থাকে। এখন যেসব ঘটনা ঘটতে পারে তার মধ্যে অন্যতম হলো, ক্রেতারা ক্রয়াদেশের বিপরীতে সরবরাহের সময় পিছিয়ে দিতে বলতে পারে। বাতিল হয়তো হবে না। আর নতুন ক্রয়াদেশ দেওয়ার মতো অবস্থায় তারা কিন্তু নেই।

সব মিলিয়ে আমাদের জন্য বড় সমস্যা হলো ইউরোপ ও আমেরিকায় পণ্যের চাহিদা কমে যাওয়া বা আরও কমে যাওয়ার আশঙ্কা। চীন থেকে সরবরাহ বন্ধ থাকলে আমরা হয়তো বিকল্প উৎসের কথা ভাবতে পারতাম। কিন্তু ক্রেতারা বিক্রিই যদি না করতে পারে, তাহলে সরবরাহ ব্যবস্থায় কী কী সমস্যা, তা চিন্তা করে লাভ নেই।

এ জায়গা থেকে বেরিয়ে আসার ক্ষেত্রে আমাদের করণীয় তেমন কিছু নেই। আমাদের কঠোরভাবে নজর রাখতে হবে, যাতে দেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে না পড়ে। আমাদের অবস্থা যদি খারাপ হয়, তাহলে মানবিক সংকটের পাশাপাশি আরেকটি সমস্যা হলো, ক্রেতারা বাংলাদেশকেও ভবিষ্যতে বিপজ্জনক দেশের তালিকায় রাখবে। আরেকটি বিষয় হলো, দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে নীতিসহায়তা দেওয়ার একটি মানসিক প্রস্তুতি থাকতে হবে।

মোস্তফা আবিদ খান

চীনের বিকল্প পাওয়া দুষ্কর : মোস্তফা আবিদ খান, সদস্য, ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন
বাংলাদেশ চীন থেকে ভোগ্যপণ্য কম আমদানি করে। বেশি আসে মধ্যবর্তী পণ্য ও কাঁচামাল, যা ছাড়া কারখানা চালানো যায় না। এ ক্ষেত্রে সরবরাহে কোনো বিঘ্ন ঘটলে বাংলাদেশের শিল্পকারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হবে, সেটা রপ্তানিমুখী শিল্পের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ বাজারমুখী কারখানার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।

চীন গত ৩১ ডিসেম্বর করোনাভাইরাসে আক্রান্ত শনাক্তের ঘোষণা দেয়। তাৎক্ষণিক প্রভাব আমরা ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ দিক থেকে দেখতে শুরু করি। চলতি মার্চ ও আগামী এপ্রিল মাস বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ সময়। এ সময় মূল প্রভাব দেখা যেতে পারে। কারণ, ফেব্রুয়ারি মাসে কিন্তু খুব কম ঋণপত্র খোলা হয়েছে।

ছুটি শেষে চীন কাজ শুরু করেছে ২৪ ফেব্রুয়ারি। তবে আঞ্চলিক যোগাযোগ সীমিত ছিল। ফলে অনেকে সময়মতো কাজে যোগ দিতে পারেননি। কোয়ারেন্টাইন করার বিষয় আছে। সব মিলিয়ে পুরোদমে কাজ শুরু করতে তাদের সময় লাগছে। চীনের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৬০ শতাংশ আসে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প থেকে। করোনার কারণে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেই ধাক্কা তারা কাটিয়ে উঠবে কীভাবে, সেটা বড় প্রশ্ন। যদিও সরকার তাদের সহায়তা দিচ্ছে। কিন্তু জের থেকেই যাবে।

চীনের বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি খুব বেশি নয়। কিছু কিছু খাত হয়তো সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তবে চীন থেকে কাঁচামাল আমদানি করা যাচ্ছে না বলে রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব বেশি হতে পারে। বিদেশি বিনিয়োগের ওপরও প্রভাব পড়তে পারে। জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থার (আঙ্কটাড) একটা প্রতিবেদন দিয়েছে। সেখানে ৫০০ বহুজাতিক কোম্পানির ওপর জরিপ করে তারা বলেছে, বেশির ভাগ তাদের বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা কমিয়েছে। এর মানে হলো কম বিক্রি, কম মুনাফা। কম মুনাফা হলে বিনিয়োগ কম। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) প্রতিবেদন দেখলে বোঝা যাবে, বিশ্বব্যাপী অর্থনীতির গতি কিছুটা হলেও কমবেই।

অনেকে বলছেন, বিকল্প উৎস খুঁজতে হবে। বিকল্প কোথায়। বিকল্প উৎস দেশও তো কাঁচামালের জন্য অনেকটা চীনের ওপর নির্ভরশীল। চীনের মতো সক্ষমতা কারও নেই।

বাংলাদেশে করোনা ছড়িয়ে পড়লে চীনের মতো পরিস্থিতি তৈরির আশঙ্কা থাকে। এতে প্রভাব পড়বে অর্থনীতির ওপর। শ্রমঘন শিল্প বিপদে পড়বে। আশার কথা হলো চীনে কাজ শুরু হচ্ছে। চীন স্বাভাবিক হলে বাংলাদেশের চিন্তা কেটে যাবে। এ কারণেই বলছি মার্চ-এপ্রিল গুরুত্বপূর্ণ সময়। আমাদের এখন চীনের পরিস্থিতির ওপর নজর রাখতে হবে। সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে হবে।