>
জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশা নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি এবং মেট্রোপলিটন চেম্বারের পরিচালক আবুল বশর চৌধুরী এবং বাংলাদেশ ফ্যাশন উদ্যোক্তা সমিতির সাবেক সভাপতি আজহারুল হক। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মাসুদ মিলাদ ও শুভংকর কর্মকার ।
প্রথম আলো: খাতুনগঞ্জে ব্যবসা-বাণিজ্যে নির্বাচনের কোনো প্রভাব পড়েছে?
আবুল বশর চৌধুরী: খাতুনগঞ্জের সঙ্গে সারা দেশের ব্যবসায়ীদের লেনদেন হয়। হয়তো পণ্য আছে ঢাকায়, বিক্রি হচ্ছে খাতুনগঞ্জ থেকে। ফলে সারা দেশে কোনো প্রভাব পড়লে তা খাতুনগঞ্জেও পড়ে। এমনিতেই ডিসেম্বর মাসে খাতুনগঞ্জে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে লেনদেন কম হয়। নির্বাচন উপলক্ষে এই লেনদেন আরও কমে গেছে। নির্বাচনের সময় পরিবেশ কেমন থাকবে, নতুন সরকারে কারা আসছে, কোনো অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি হচ্ছে কি না—এমন নানা চিন্তাভাবনা থেকে লেনদেন কম হয়। এটি সব সময় হয়ে আসছে। এবার খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরাও সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। যাঁরা প্রার্থী হননি, তাঁদের অনেকেই এখন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নিজ নিজ এলাকায় সময় দিচ্ছেন। প্রার্থীরাও ব্যবসায়ীদের নিজ এলাকার প্রভাবকে কাজে লাগাতে ব্যবসায়ীদের কাছে আসছেন। আবার খাতুনগঞ্জে যাঁরা শ্রমিক হিসেবে কর্মরত, তাঁরাও নির্বাচনী সভা-সমাবেশে অংশ নিতে গ্রামে ছুটে যাচ্ছেন। এসব কারণে নির্বাচনের সময়ে লেনদেন কমে গেছে।
প্রথম আলো: রাজনৈতিক দলগুলো ইশতেহার প্রকাশ করেছে। তাতে আপনাদের প্রত্যাশার প্রতিফলন হয়েছে?
আবুল বশর চৌধুরী: ইশতেহারে রাজনৈতিক অঙ্গীকারই করা হয়। রাজনৈতিক দলগুলো ইশতেহারে যে অঙ্গীকার করেছে, ব্যবসায়ীরা তার বাস্তবায়ন চান। কারণ, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ছাড়া দেশকে এগিয়ে নেওয়া যাবে না। রাজনৈতিক দলগুলো যেসব অঙ্গীকার করেছে, ক্ষমতায় গেলে তারা যেন তা দ্রুত বাস্তবায়ন করে, সেটিই প্রত্যাশা।
প্রথম আলো: বন্দর নিয়ে বড় দুই দলের ইশতেহারে আপনাদের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেছে?
আবুল বশর চৌধুরী: বন্দর এখন অর্থনীতির চালিকা শক্তি। বন্দরের গুরুত্ব এখন অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। কারণ, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়ার সঙ্গে বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি পণ্য পরিবহন বেড়েছে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকলে পণ্য পরিবহন ভবিষ্যতেও বাড়তে থাকবে। তাই বন্দর সম্প্রসারণ ও সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ইশতেহারে যেসব অঙ্গীকার করা হয়েছে, তার বাস্তবায়ন চাই। বিশেষ করে নতুন বন্দর নির্মাণ ও বিদ্যমান বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে অনেকগুলো প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্ব দেওয়া উচিত বে টার্মিনালকে। কারণ, বে টার্মিনাল থেকে সারা দেশের পণ্য আনা-নেওয়ার জন্য যোগাযোগব্যবস্থা অন্য বন্দরগুলোর তুলনায় অনেক সহজ। আবার দেশের বন্দরগুলোর উন্নয়নে একটি বিশেষ কর্মসূচি হাতে নেওয়া উচিত। সবচেয়ে ভালো হয় বন্দর নিয়ে নীতিমালা করলে। সবশেষে যে দলই ক্ষমতায় আসবে, তারা যেন বন্দরকে গুরুত্ব দেয়, এই প্রত্যাশা ব্যবসায়ীদের।
প্রথম আলো: এখন পর্যন্ত নির্বাচনের যে পরিবেশ রয়েছে, তা কীভাবে দেখছেন?
আবুল বশর চৌধুরী: এবার নির্বাচনের পরিবেশ স্থিতিশীল। নির্বাচন পর্যন্ত এবং নির্বাচনের পরও যাতে এই স্থিতিশীল পরিবেশ বজায় থাকে, সেটিই আমাদের চাওয়া। উৎসবমুখর পরিবেশ বজায় থাকুক। কারণ, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রাখার জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অন্যতম পূর্বশর্ত। সব রাজনৈতিক দলকে পরিবেশ স্থিতিশীল রাখার জন্য এগিয়ে আসতে হবে। গতবারের নির্বাচনের সময় যে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, তাতে ব্যবসা-বাণিজ্যে ব্যাপক প্রভাব পড়েছিল। এ রকম যেন আর না হয়, সেটি আমাদের প্রত্যাশা।