এখন অনলাইনে বার্ষিক আয়কর বিবরণী বা রিটার্ন জমা দেওয়া আর কঠিন বিষয় নয়। ঘরে বসেই অনলাইনে রিটার্ন জমা দেওয়া যায়। অনলাইনে যেমন রিটার্ন জমা দেওয়া যায়, তেমনি প্রস্তুতও করা যায়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অনলাইন সিস্টেম ব্যবহার করে এই মৌসুমে প্রায় আড়াই লাখ করদাতা রিটার্ন প্রস্তুত করেছেন। পরে তাঁরা সশরীরে সনাতনী ব্যবস্থায় কর অফিসে গিয়ে রিটার্ন জমা দিয়েছেন।
জানা গেছে, রিটার্ন প্রস্তুতকারীদের বেশির ভাগই কর আইনজীবী। তাঁরা মক্কেলদের রিটার্ন অনলাইনে প্রস্তুত করেছেন।
মোহাম্মদ সোহেল রানা প্রায় এক যুগ ধরে কর আইনজীবী হিসেবে কাজ করছেন। রাজধানীর মিরপুরে তাঁর কার্যালয়। প্রতিবছর তিনি প্রায় পাঁচ শতাধিক করদাতার কর নথি নিয়ে কাজ করেন। এবার তিনি সময় কুলিয়ে উঠতে না পারায় শতাধিক রিটার্ন অনলাইনে পূরণ করেছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি এনবিআরের অনলাইন সিস্টেমে নিবন্ধিত করদাতা। আমরা নিবন্ধন নম্বর দিয়ে সিস্টেমে প্রবেশ করে গ্রাহকদের রিটার্ন প্রস্তুত করেছি, পরে শুধু নাম, টিআইএন বদলে রিটার্ন জমা দিয়েছি।’
জানা গেছে, এ মৌসুমে (১ জানুয়ারি পর্যন্ত) অনলাইনে ২ লাখ ৩৪ হাজার ৩৭৯ জন করদাতার রিটার্ন প্রস্তুত করা হয়েছে। ২০২১ সালের ১০ অক্টোবর ই-রিটার্ন ব্যবস্থা চালু হয়। গত মৌসুমে সব মিলিয়ে ৭৯ হাজার ৭৪৫ জন করদাতা রিটার্ন প্রস্তুত করেছিলেন। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে রিটার্ন প্রস্তুতকারীর সংখ্যা ১৯৪ শতাংশ বেড়েছে। অর্থাৎ ই-রিটার্ন ব্যবস্থা নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছে। সব মিলিয়ে ২৯ লাখের মতো রিটার্ন জমা পড়েছে এবার।
অনলাইনে রিটার্ন জমা, কর পরিশোধ, রিটার্ন প্রস্তুত, নিবন্ধন নেওয়াসহ যাবতীয় কাজ করা যায়। এমনকি রিটার্ন জমার প্রাপ্তি স্বীকারপত্রও পাওয়া যায়। অনলাইনে রিটার্ন দিতে হলে প্রথমে এনবিআরের ওয়েবসাইটে নিবন্ধন নিতে হবে।
এক বছরের ব্যবধানে ই-রিটার্ন জমা প্রায় তিন গুণ বেড়েছে। এই মৌসুমে বিভিন্ন কর অঞ্চলের ২ লাখ ৭ হাজার ৭৯৮ জন করদাতা অনলাইনে রিটার্ন জমা দিয়েছেন। এ বছর অনলাইন জমা থেকে ১১ কোটি ৬৪ লাখ টাকা কর পাওয়া গেছে। গত মৌসুমে ৬১ হাজার ২০৬ জন করদাতা অনলাইনে রিটার্ন জমা দিয়েছিলেন।
সব মিলিয়ে এখন ৩ লাখ ৩৫ হাজার ৭৪২ জন করদাতা অনলাইন ব্যবস্থায় নিবন্ধিত। এক বছরের ব্যবধানে এই সংখ্যা আড়াই গুণ বেড়েছে।
এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত এনবিআরের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, করদাতাদের অনলাইনে রিটার্ন জমা নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ দেখা গেছে। ঘরে বসেই তাঁরা রিটার্ন দিতে আগ্রহ বেশি। অনলাইনে রিটার্ন দিলে কর অফিসে যেতে হয় না। এতে হয়রানির সুযোগ বন্ধ হয়ে যাবে।
৫১ কোটি টাকা খরচ করে ২০১৬ সালে অনলাইনে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার ব্যবস্থা চালু করা হয়, যা ২০১৯ সাল পর্যন্ত চলে। ওই সময় প্রতিবছর গড়ে পাঁচ থেকে ছয় হাজার করদাতা অনলাইনে রিটার্ন জমা দিতেন। ২০১৯ সালের পর ওই সিস্টেম বন্ধ করে দেয় এনবিআর। পরে ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে এনবিআরের আয়কর বিভাগের একটি বিশেষ দল মাত্র দুই কোটি টাকা খরচ করে নতুন অনলাইনব্যবস্থা চালু করে।