ঈদুল ফিতরের পর বাজারে নতুন করে আলু, পেঁয়াজ, আদা ও রসুনের দাম বাড়ছে। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবেই এক মাসের ব্যবধানে আলুর দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ থেকে ১২ টাকা। আর একই সময়ের ব্যবধানে মানভেদে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে সর্বোচ্চ ১৫ টাকা। দাম বাড়ছে আদা–রসুনেরও।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, আলুর সরবরাহে টান পড়েছে। বন্ধ আছে পেঁয়াজ আমদানি। তাতে দামে প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। আর ডলার–সংকটে ঋণপত্র (এলসি) খোলা কমে যাওয়া এবং আমদানি খরচ বেড়ে যাওয়ায় আদা ও রসুনের দাম বাড়তির দিকে।
টিসিবির গতকাল শনিবারের বাজারদরের তালিকা বলছে, ঢাকার বাজারে মানভেদে আলু বিক্রি হচ্ছে ৩২ থেকে ৩৭ টাকা কেজি। এক মাস আগে এ আলুর দাম ছিল ২২ থেকে ২৫ টাকা। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে আলুর দাম বেড়েছে ৪৭ শতাংশ। তবে টিসিবির হিসাব থেকে বাজারে আলুর দাম আরেকটু বেশি দেখা গেছে। লাল ও সাদা রঙের আলু বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৩৫ থেকে ৪০ টাকায়।
শীত মৌসুমে বড় পরিসরে আলুর আবাদ হওয়ায় সাধারণত এই সময়ে বাজারে সবজিটির জোগান ভালো থাকে। তাতে আলুর দাম কম থাকার কথা। টিসিবি বলছে, গত বছর এই সময়ে ঢাকার বাজারে আলুর দাম ছিল কেজিতে ১৬ থেকে ২০ টাকা। তাতে এক বছরে আলুর দাম বেড়েছে ৮৬ শতাংশ।
ঈদের আগে এক কেজি চীনা আদা ২২০ টাকায় কিনেছিলাম। আজ (গতকাল) ৩২০ টাকায় কিনেছি।সামাদ সরদার, ক্রেতা, মহাখালী কাঁচাবাজার
আলুর দাম বাড়ার বিষয়ে বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, এবার আলুর আবাদ বেশি হলেও ফলন কম হয়েছে। এতে হিমাগারগুলো বেশ ফাঁকা রয়েছে। সাধারণত এই সময়ে হিমাগারগুলো আলুতে ভরা থাকে। এবার সে অবস্থা না থাকায় বাজারে আলুর সংকটের আশঙ্কা থেকে দাম বাড়তে শুরু করেছে। সরকারকে বাজারের প্রকৃত অবস্থা জেনে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান এই ব্যবসায়ী নেতা।
টিসিবি বলছে, বাজারে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়। এক মাস আগেও এই পেঁয়াজের দাম ছিল ৩৫ থেকে ৪৫ টাকা। এক মাসে দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৫০ শতাংশ। আর পেঁয়াজের আমদানি বন্ধ থাকলেও ব্যবসায়ীদের কাছে আমদানি করা যে পেঁয়াজ ছিল, তা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি। এক মাসের ব্যবধানে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ২৯ শতাংশ।
কয়েক বছর ধরে দেশে পেঁয়াজের ফলন ভালো হলেও এবার কম হয়েছে। এ ছাড়া পেঁয়াজ ওঠানোর পর এবার পচনের হারও বেশি ছিল। দেশের কৃষকদের সুরক্ষা দিতে পেঁয়াজের আমদানিও বন্ধ। সামনে আসছে কোরবানির ঈদ। সব মিলিয়ে পেঁয়াজের বাজার বাড়তে শুরু করেছে। তবে আমদানির অনুমতি দিলে, বাজার দ্রুত নেমে আসবে বলে মনে করেন আমদানিকারকেরা।
আদা ও রসুনের বাজারও বাড়তি। টিসিবির হিসাবে, ঢাকার বাজারে দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৮০ টাকা কেজি। এক মাসের ব্যবধানে দেশি রসুনের দাম বেড়েছে ৭২ শতাংশ। আমদানি করা রসুন বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৪০ টাকা। তবে বাজারে এই রসুনের দাম কেজিতে আরও ১০ থেকে ২০ টাকা বেশি দেখা গেছে।
আর টিসিবির দর অনুযায়ী আমদানি করা চীনা আদার দাম গত এক মাসে বেড়েছে ২৮ শতাংশ। কেজিতে সর্বোচ্চ দাম পড়ছে ৩২০ টাকা। পাড়া-মহল্লার খুচরা দোকানে দাম আরও কিছুটা বেশি—৩৪০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজি। আর দেশি আদার সামান্য যা বাজারে আসে, এর কেজি ২২০ থেকে ২৪০ টাকা। আদার বাজার প্রায় পুরোটাই আমদানিনির্ভর।
মহাখালী কাঁচাবাজার থেকে গতকাল এক কেজি আদা কেনেন সামাদ সরদার নামের একজন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘ঈদের আগে এক কেজি চীনা আদা ২২০ টাকায় কিনেছিলাম। আজ (গতকাল) ৩২০ টাকায় কিনেছি।’
রাজধানীর শ্যামবাজারের আমদানিকারক আবদুল মাজেদ প্রথম আলোকে বলেন, পেঁয়াজের উৎপাদন কম হয়েছে, পেঁয়াজ এবার নষ্ট হয়েছেও বেশি। তাতে বাজারে সংকট আছে। তবে এটা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। যেহেতু ভারতে পেঁয়াজের উৎপাদন ভালো, তাতে আমদানির অনুমতি দিলে দ্রুত দাম নেমে আসবে। আর আদা ও রসুনের বাজার যেহেতু প্রায় পুরোটা আমদানিনির্ভর, সুতরাং ঈদুল আজহা সামনে রেখে পণ্য দুটি আমদানিতে ব্যবসায়ীদের ডলারের নিশ্চয়তা দিতে হবে। অন্যথায় বাজার আরও বাড়তে পারে।
এদিকে সরকার নতুন করে সয়াবিনের দাম নির্ধারণ করেছে। এক লিটার বোতলজাত সয়াবিনের দাম ১২ টাকা বেড়ে হয়েছে ১৯৯ টাকা। তাতে মানুষের সংসার খরচ আরেক দফা বেড়েছে। চিনির বাজারের অস্থিরতা কাটছেই না। সরকার নির্ধারিত ১০৪ টাকা দরের চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকায়।