কোরিয়া থেকে ৩৪০টি সম্পূর্ণ শীতাতপনিয়ন্ত্রিত (এসি) বাস কিনতে যাচ্ছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি)। এর মধ্যে ১৪০টি বাস চলবে রাজধানী ঢাকা শহরের রাজপথে। বাকি ২০০টি চলাচল করবে আন্তজেলা বাস হিসেবে। এসব বাস সিএনজিচালিত ও একতলা। এ জন্য কোরিয়ার কাছ থেকে ঋণ নেওয়া হবে। একেকটি বাসের দাম পড়বে কমবেশি আড়াই কোটি টাকা।
গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় বিআরটিসির জন্য এই বাস সংগ্রহ প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট খরচ হবে ১ হাজার ১৩৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৮২৮ কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হবে কোরিয়া থেকে। গত ৪ মে এ নিয়ে বাংলাদেশ ও কোরিয়ার মধ্যে ঋণচুক্তি হয়েছে।
২০২৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে সব কটি বাস চলে আসবে। কারণ, প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
প্রকল্প দলিল ঘেঁটে দেখা গেছে, রাজধানীর নগর পরিবহনব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে বিআরটিসি নতুন উদ্যোগ নিয়েছে। এ জন্য নতুন ৪২টি রুট চালু হবে। এরই অংশ হিসেবে এসব বাস কেনা হচ্ছে। এ ছাড়া দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে আরামদায়ক যোগাযোগ বাড়াতে বিআরটিসির এসব এসি বাস দিয়ে আন্তজেলা বাস সার্ভিস চালু করা হবে।
এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা গতকাল মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, নগরে ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার নিরুৎসাহিত করতে আরামদায়ক এসি পরিবহন জোরদার করা হবে। কোরিয়ার তৈরি এই বাসগুলো হবে পরিবেশবান্ধব।
* ১৪০টি বাস ঢাকায় ও ২০০টি ঢাকার বাইরে চলবে।* প্রতিটি বাসের দাম ২ কোটি ৬৫ লাখ থেকে ৩ কোটি ২৯ লাখ টাকা।* বিদেশসফরও আছে, বাস দেখতে যাবেন কর্মকর্তারা।
এর আগে ভারতীয় গুচ্ছ ঋণ বা লাইন অব ক্রেডিটে (এলওসি) বিআরটিসির জন্য কিছু বাস আনা হয়েছিল। সেই বাসগুলোর মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
প্রকল্পের নথিপত্র অনুসারে, রাজধানীর জন্য যে ১৪০টি এসি বাস আনা হবে, সেগুলোর দাম ধরা হয়েছে ৩৭২ কোটি টাকা। প্রতিটি বাসের গড় দাম ২ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। আন্তজেলা রুটে চলাচলের জন্য ২০০ বাস কেনার খরচ ধরা হয়েছে ৬৫৯ কোটি টাকা। প্রতিটির দাম ৩ কোটি ২৯ লাখ। এ ছাড়া ১৫ শতাংশ খুচরা যন্ত্রাংশ ও অন্যান্য খাতের খরচও এর মধ্যে আছে।
আছে বিদেশসফরের ব্যবস্থা
বাস কেনার এই প্রকল্পে সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য বিদেশসফরের ব্যবস্থা রাখা আছে। প্রকল্প দলিলে বলা হয়েছে, বাসের স্পেসিফিকেশন যাচাই-বাছাই করতে একটি শক্তিশালী কারিগরি দল সরেজমিনে কোরীয় কোম্পানি পরিদর্শন করে বিস্তারিত প্রতিবেদন জমা দেবে। এ ছাড়া বিদেশে প্রশিক্ষণের নামে ৭ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
আরও ১৬ প্রকল্প পাস
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত গতকালের একনেক সভায় এটিসহ মোট ১৭টি প্রকল্প পাস করা হয়। এতে সব মিলিয়ে খরচ হবে ১২ হাজার ৯৫১ কোটি টাকা।
অন্য প্রকল্পগুলো হলো নড়াইল-কালিয়া জেলা মহাসড়কের ২১তম কিলোমিটারে কালিয়া নামক স্থানে নবগঙ্গা নদীর ওপর কালিয়া সেতু নির্মাণ; উত্তরা এলাকায় পয়ঃশোধনাগারের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ; ধীরাশ্রম আইসিডি নির্মাণে জমি অধিগ্রহণসহ পুবাইল-ধীরাশ্রম রেলসংযোগ নির্মাণ; গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধ কমপ্লেক্সে আসা দর্শনার্থীদের সুযোগ-সুবিধা সম্প্রসারণে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণ; সোনাগাজী ৫০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ; চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন; চাঁদপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং নার্সিং কলেজ স্থাপন; বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনসের আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণ।
আরও আছে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর উন্নয়ন; চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার ভূ-উপরিস্থ পানির মাধ্যমে সেচ উন্নয়ন; চর এলাকায় আধুনিক কৃষিপ্রযুক্তি সম্প্রসারণ; গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া-কোটালীপাড়া উপজেলার জলাবদ্ধতা নিরসনে সমন্বিত পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়ন; বহুমুখী দুর্যোগ আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ; কুষ্টিয়া জেলার খোকসা উপজেলার গড়াই নদে সেতু নির্মাণ; গুচ্ছগ্রাম-২ পর্যায় এবং ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্ট লাইভলিহুড ইম্প্রুভমেন্ট অ্যান্ড ওয়াটারশেড ম্যানেজমেন্ট ইন দ্য হিল ট্র্যাক্টস প্রকল্প।
গতকাল পাস হওয়া প্রকল্পগুলোর মধ্যে চাঁদপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং নার্সিং কলেজ স্থাপনে ব্যয় হবে ১ হাজার ৩৭১ কোটি টাকা। প্রকল্পটির জন্য ৩০ একর জমি লাগবে। এর মধ্যে ৫০ শতাংশ জমি বর্ষার সময় পানির নিচে ডুবে যায় বলে পরিকল্পনা কমিশন মতামত দিয়েছে।
এ বিষয়ে একনেক সভা-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য মোসাম্মৎ নাসিমা বেগম বলেন, ‘আমরা আমাদের মতামত দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, পুরো জমি লাগবে। তিনি সেভাবেই অনুমোদন দিয়েছেন। সেখানে ২৭টি ভবন হবে।’
এ ছাড়া জমি অধিগ্রহণের সময় প্রথমবার পরিদর্শনের সময় ছবি তুলে আনার নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী। তিনি বলেন, জমি অধিগ্রহণের কথা উঠলেই এলাকায় রাতারাতি ঘরবাড়ি উঠে যায়। তাই এই নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এ ছাড়া নড়াইল-কালিয়া জেলা মহাসড়কে নবগঙ্গা নদীর ওপর সেতুর নকশা পরিবর্তনে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। কারণ, ওই সেতুর উচ্চতা কম হওয়ায় এখন নতুন করে নকশা করতে হয়েছে।’