পথশিশুরা পথে পথে ঘুরে ফেলে দেওয়া জিনিস সংগ্রহ করে কেজিদরে বিক্রির মাধ্যমে আশায় বুক বাঁধে বড় হওয়ার। ঘুমানোর জন্য অনেকের জোটে না মাথার ওপরে ছাদ। যতটুকু আয়, তা দিয়ে দুমুঠো ভাত জোগাতেই হিমশিম অবস্থা। শিক্ষা নিয়ে ভাবার সময় কই?
এমনই সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে ভেবেছে ট্রান্সকম ফুডস লিমিটেডের গ্লোবাল ফ্র্যাঞ্চাইজি ব্র্যান্ড ‘কেএফসি’। শিক্ষার আলোয় আলোকিত করে পথশিশুদের স্বপ্নপূরণের জন্য কেএফসির উদ্যোগে চালু হয়েছে ‘স্বপ্নের পাঠশালা’। নিজেদের স্টোরগুলোয় সকালবেলা সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য চলছে পাঠশালা। আর বেলা ১১টা থেকে গ্রাহকদের জন্য চালু হবে রেস্তোরাঁ।
ট্রান্সকম ফুডস লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অমিত দেব থাপা বলেন, কেএফসি সব সময় জনকল্যাণমূলক কাজ করার সুযোগ খোঁজে। সারা দেশে কেএফসির ৫০টিরও বেশি স্টোর রয়েছে। গ্রাহকদের জন্য স্টোরগুলো খোলা হয় বেলা ১১টায়। তাই আমরা ভাবলাম, স্টোরগুলোকে কীভাবে মানবকল্যাণের কাজে ব্যবহার করা যায়। সেই ভাবনা থেকে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষার জন্য সকাল আটটা থেকে স্টোরগুলো আমরা কাজে লাগাই।
রাজধানীতে অবস্থিত কেএফসির ৬টি স্টোরে ২৫ জন করে পথশিশু প্রতিদিন সকালে পড়তে আসে। স্টোরগুলো হচ্ছে ধানমন্ডি, খিলগাঁও, পল্টন, মিরপুরের সনি সিনেমা হল, ইস্টার্ন প্লাজা ও আদাবর। সপ্তাহে ছয় দিন সকাল সাড়ে ৮টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত পথশিশুদের জন্য সময় বরাদ্দ।
পথশিশুদের পাঠদানের জন্য রয়েছেন শিক্ষক ও সমন্বয়ক। যেসব শিশু পথে পথে ঘুরে বিভিন্ন জিনিস খুঁজে বেড়ায়, তাদের খুঁজে বের করে শিক্ষায় যুক্ত হওয়ার জন্য রাজি করান স্বপ্নের পাঠশালার শিক্ষক ও স্বেচ্ছাসেবকেরা।
পথশিশুবান্ধব একটি যুগোপযোগী শিক্ষা পাঠ্যক্রম অনুসরণ করছে স্বপ্নের পাঠশালা। এ পাঠশালায় আসা শিশুদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে বাংলা অক্ষর চেনানো, নিজেদের জানা, বাংলা ও ইংরেজি পড়া, ইংরেজি বর্ণমালা চেনানো, কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রদান, স্বাস্থ্য ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বিষয়ে সচেতনতা, মানসিকভাবে চাঙা রাখা এবং সৃজনশীল কাজে সম্পৃক্ত করাসহ নানা কার্যক্রম রয়েছে।
স্বপ্নের পাঠশালার শিক্ষার্থীদের শিক্ষাসামগ্রী ও টিফিন নিয়েও বাড়তি কোনো দুশ্চিন্তা করতে হয় না। সবই বহন করে কেএফসি।
কেএফসির এমন উদ্যোগ স্বপ্ন দেখাতে সাহায্য করছে সুবিধাবঞ্চিত পথশিশুদের। স্বপ্নের পাঠশালার সঙ্গে পরিচয়ের গল্প শোনাতে গিয়ে শিশু লামিয়া বলল, ‘ধানমন্ডির লেকপাড়ে এক ভাইয়ের সঙ্গে দেখা হইসে। উনি আমারে কেএফসি স্বপ্নের পাঠশালার কথা বলছে। তারপর সেখানে আমি গেলাম। এখন প্রতিদিন যাই, পড়তে আমার ভালোই লাগে। আমার ইচ্ছা, বড় হয়ে ডাক্তার হব। গরিব মানুষকে বিনা পয়সায় চিকিৎসা করাব।’
স্বপ্নের পাঠশালায় পড়তে আসা আরেক শিশু বাপ্পীর ভাষ্য, ‘একদিন দাদির বাসায় বেড়াতে গেছিলাম। দাদি কইল, একটা স্কুল আছে, পড়তে যাইবি? আমি কইলাম, হ, যামু। তার পর থেকে আমি এইখানে আইতাসি। আমার ভালো লাগতাসে। এইখানে আমার অনেক বন্ধু হইসে। পড়ার মাঝখানে আমরা খেলতেও পারি।’
শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত পথশিশুদের স্বপ্নপূরণে কেএফসির এ উদ্যোগের সঙ্গে রয়েছে সামাজিক উন্নয়ন সংস্থা ‘মজার স্কুল’এবং লোকাল এডুকেশন অ্যান্ড ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (লিডো)।
কেএফসি-কর্তৃপক্ষ জানায়, ছয় মাস ধরে চলতে থাকা এ পরীক্ষামূলক উদ্যোগটির আশানুরূপ সাড়া তাদের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার সিদ্ধান্ত নিতে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। এখন চলছে এ পাঠশালার পরিসর বাড়ানোর কাজ।
এ ছাড়া স্বপ্নের পাঠশালায় বর্তমানে পাঠ নেওয়া শিশুদের বয়স যখন ১৯ থেকে ২০ বছর হবে, তখন তাদের জন্য কেএফসি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও করবে।