সিলেটের বন্যাকবলিত পর্যটনকেন্দ্রে যেতে নিষেধাজ্ঞা। বিভাগের অন্য জায়গায় পর্যটক কম।
সিলেটের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বর্ষা মৌসুমেই উজ্জ্বলতা ছড়ায়। এ সময়টাতে পর্যটকের ঢলও বেশি থাকে। তবে এবার মৌসুমের শুরুতেই ভারী বৃষ্টি ও বন্যায় দেখা দিয়েছে পর্যটক–খরা।
স্থানীয় প্রশাসন ও পর্যটন খাতের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, সিলেটের যেসব জায়গায় পর্যটকেরা বেশি যান, সেসব পর্যটনকেন্দ্র বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। তাই দুর্ঘটনার ঝুঁকি এড়াতে স্থানীয় প্রশাসন পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রে যেতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। যেগুলো চালু আছে, সেগুলোতেও পর্যটক কম।
সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সহসভাপতি মো. আবদুল জব্বার প্রথম আলোকে বলেন, সিলেটে বেড়ানোর উপযুক্ত সময় বর্ষা মৌসুম। এবার একে তো পবিত্র ঈদুল আজহার ছুটি, তার ওপর বৃষ্টি ও বন্যায় পর্যটক–খরা চলছে। পর্যটন খাতের ব্যবসায়ীরা দিনে অন্তত চার কোটি টাকা আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
সিলেটে ধর্মীয় ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকেন্দ্রিক দুই ধরনের পর্যটন রয়েছে। সিলেট নগরের হজরত শাহজালাল (রহ.) ও হজরত শাহপরানের (রহ.) মাজার এবং জেলার গোলাপগঞ্জে অবস্থিত শ্রীশ্রী চৈতন্য মহাপ্রভুর পৈতৃক ভিটা দেখতে আসেন দেশি-বিদেশি অনেক পর্যটক।
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের সাদা পাথর; গোয়াইনঘাটের জাফলং, রাতারগুল, মায়াবী ঝরনা, বিছনাকান্দি ও পান্তুমাই; জৈন্তাপুরের নীলপানির লালাখাল, সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়াসহ সব কটি হাওর, সিলেট ও মৌলভীবাজারের হাকালুকি হাওর, মৌলভীবাজারের টিলা ও চা-বাগান, কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান এবং হবিগঞ্জের রেমা-কালেঙ্গা ও সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানসহ বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্র পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয়। সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জে প্রাকৃতিক পরিবেশে তৈরি অন্তত ১০০টি রিসোর্টে মানুষ অবকাশ যাপনে আসেন।
মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জের পর্যটন খাতের ব্যবসায়ীরা বলছেন, সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যার কারণে পর্যটনকেন্দ্রগুলো বন্ধ রয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই পর্যটকেরা ঈদের ছুটিতে সেখানে বেড়াতে যাননি; কিন্তু মৌলভীবাজারের পর্যটনকেন্দ্রিক এলাকা সদর, শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ উপজেলা ও হবিগঞ্জের পর্যটনকেন্দ্রগুলো বন্যাকবলিত নয়; তবু সেখানে পর্যটক কম।
শ্রীমঙ্গলের হোটেল-রিসোর্টগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রিসোর্টগুলোতে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যটক বুকিং দিয়েছেন। হাতেগোনা কিছু রিসোর্টে অবশ্য বুকিং রয়েছে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ। অথচ অন্যান্য সময়ে এসব হোটেল-রিসোর্টে কক্ষ পাওয়াই কঠিন হয়ে পড়ে। শ্রীমঙ্গলের কোথাও বন্যা নেই বলে জানিয়েছেন পর্যটন খাত-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
মৌলভীবাজারের সবচেয়ে বড় পর্যটন এলাকা শ্রীমঙ্গলের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবু তালেব দাবি করেছেন, বৃষ্টির কারণে পর্যটক কম। তবে যতটা বলা হচ্ছে, ততটা নয়। স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় এখন পর্যটকের উপস্থিতি প্রায় ২০ শতাংশ কম হবে।
ব্যবসায়ীরা জানান, স্বাভাবিক সময়ে বছরে ২০ থেকে ২৫ লাখ পর্যটক সিলেটের পর্যটনকেন্দ্র ও রিসোর্টগুলো ভ্রমণ করেন। এর মধ্যে সিলেট জেলায় আসেন ১২ থেকে ১৩ লাখ। বাকি জেলাগুলোর মধ্যে মৌলভীবাজার ও সুনামগঞ্জে ৫ লাখ করে ১০ লাখ এবং হবিগঞ্জে প্রায় ২ লাখ আসেন।
পর্যটক কমায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন স্থানীয় বিভিন্ন পণ্যের ব্যবসায়ীরাও। মণিপুরি পোশাক, চা–পাতা, সাতকরা ও আচারসহ স্থানীয় পণ্যের বিক্রি কমেছে। পর্যটনকেন্দ্রিক কয়েক হাজার নৌ–শ্রমিকের হাতে কাজ নেই।
সিলেট নগরের প্রাণকেন্দ্র জিন্দাবাজার এলাকার হোটেল গোল্ডেন সিটির ব্যবস্থাপক মিষ্টু দত্ত প্রথম আলোকে বলেন, বছরের এ সময়টায় পর্যটকের চাপ সামলানোই কঠিন হয়; অথচ এবার হোটেল ও রিসোর্টের অনেক কক্ষ ফাঁকা।
হজরত শাহজালাল (রহ.) ও হজরত শাহপরানের (রহ.) মাজারে গতকাল শুক্রবার গিয়ে দেখা যায়, মানুষের তেমন ভিড় নেই। সাধারণত শুক্রবার সেখানে অনেক ভিড় হয়। শহরতলির লাক্কাতুরা ও মালনীছড়া চা-বাগান এলাকায়ও একই চিত্র।
সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই পর্যটনকেন্দ্রে যাওয়ার নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে। তখন নিশ্চয়ই পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে আবার প্রাণচাঞ্চল্য ফিরবে।