পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে কোরবানির পশুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। এ বছর ঢাকায় গরুর লবণযুক্ত চামড়ার বর্গফুটপ্রতি দাম গত বছরের তুলনায় সর্বোচ্চ পাঁচ টাকা, আর ঢাকার বাইরে সর্বোচ্চ সাত টাকা বাড়ানো হয়েছে।
এ বছর ঢাকায় গরুর প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, যা গত বছর ছিল ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। অন্যদিকে ঢাকার বাইরে গরুর প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয় ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, যা গত বছর ছিল ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা।
ঢাকায় সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আজ সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে গরুর চামড়ার নতুন এ দাম ঘোষণা করেন বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএলএলএফইএ) সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ।
সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু, বাণিজ্যসচিব সেলিম উদ্দিন, বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহমেদসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
সাধারণত প্রতিবছর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কোরবানির গরুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করে থাকে। সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে এবার দাম নির্ধারণ করলেন ব্যবসায়ীরা।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম বলেন, ‘চামড়া যেহেতু ট্যানারির মালিকেরা কেনেন, সেহেতু এবার দাম ঘোষণা করবেন অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা। তাঁরা একটা ন্যূনতম মূল্য নিশ্চিত করে দিক, সেটাই আমাদের পরামর্শ। ছোট ও মাঝারি আকারের গরুর চামড়া ২০ বর্গফুট হয় বলে হিসাব করে পাওয়া গেছে। সেই হিসাবে মূল্য ঠিক করা হয়েছে।’
বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, ঢাকায় এক লাখ টাকা দামের একটি গরুর চামড়া যদি ২০ বর্গফুট হয়, তখন ওই গরুর চামড়ার দাম হবে ১ হাজার ২০০ টাকা। ঢাকার বাইরে হবে এক হাজার টাকা। এরপর গরু, খাসি ও বকরির চামড়ার দাম ঘোষণা করেন মহিউদ্দিন আহমেদ।
আহসানুল ইসলাম বলেন, সারা দেশে খাসির প্রতি বর্গফুট চামড়ার দাম হবে ২০ থেকে ২৫ টাকা। এ ছাড়া বকরির চামড়ার দাম হবে ১৮ থেকে ২০ টাকা।
গত বছর খাসির প্রতি বর্গফুট চামড়ার দাম ছিল ১৮ থেকে ২০ টাকা, আর বকরির ১২ থেকে ১৪ টাকা।
সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যসচিব সেলিম উদ্দিন বলেন, ট্যানারির মালিকদের সঙ্গে ন্যূনতম যৌক্তিক মূল্য নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বাজারে চামড়ার দাম এর চেয়ে কম হবে না। দেশে সারা বছর যত চামড়া সংগ্রহ হয়, তার ৫৫ শতাংশ পাওয়া যায় কোরবানির ঈদে। সেই হিসাবে কোরবানির ঈদ চামড়া সংগ্রহের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ সময়।
ঈদের আগে পর্যাপ্ত পশুর মজুত রয়েছে জানিয়ে বাণিজ্যসচিব বলেন, এবার কোরবানির পশুর চাহিদা ১ কোটি ৭ লাখ। কোরবানির জন্য প্রস্তুত আছে ১ কোটি ২৯ লাখ পশু। গত বছর ১ কোটি ১ লাখ পশু কোরবানি হয়েছে। এ বছর ৫৫ লাখ গরু–মহিষ আছে। বাকিটা ছাগল, ভেড়া, উট ও দুম্বা।
সেলিম উদ্দিন আরও বলেন, দেশের বাজার ও আন্তর্জাতিক বাজার পর্যালোচনা করে চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। চামড়া দেশের সম্পদ। তাই চামড়ার শতভাগ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
প্রতিবছর সরকার চামড়ার দাম নির্ধারণ করলেও মানুষ সে দাম পান না, সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, এবার ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থা নজরদারি করবে। এখানে সরকারের ভাবমূর্তি নির্ভর করে। তাই কোরবানির পশুর চামড়া কম দামে বিক্রি হবে না।
বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহমেদ লবণ সরবরাহব্যবস্থা যাতে সহজ হয়, সরকারের প্রতি সেই আহ্বান জানান।
বিএফএলএলএফইএর সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘পশু জবাইয়ের পর ৪ ঘণ্টার মধ্যে লবণ দিতে হবে। চামড়া বাঁচানো আমাদের সবার দায়িত্ব।’
ট্যানারিমালিকদের কাছে অনেক আড়তদার বকেয়া টাকা পান। কিন্তু ট্যানারির মালিকেরা সে টাকা পরিশোধ করছেন না। ট্যানারির মালিকেরা ব্যাংকঋণ পাচ্ছেন। সরকারের কাছ থেকে বিভিন্ন সুবিধা পেলেও আড়তদারদের বকেয়া পরিশোধ করা হচ্ছে না। এ নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে গতকাল রাতে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সাধারণ সম্পাদক ও সালমা ট্যানারির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাখাওয়াত উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, আড়তদারদের সঙ্গে ট্যানারিমালিকদের বাকি থাকবেই। এ ব্যবসা ৫০ বছরের। সব খাতেই এভাবে ব্যবসা হয়। অনেক আড়তদার এ কথা তুলে বাজারে ভুল বার্তা দিতে চান। তিনি বলেন, বাজারে সিন্ডিকেট বলে কিছু নেই। বাজার উন্মুক্ত। যিনি যে দামে কিনতে পারেন, সেটা বাজারের ওপর নির্ভর করবে।