ভারত রপ্তানি শিথিল করলেও পেঁয়াজের দাম কমেছে কম

ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে শর্ত শিথিল ও শুল্ক কমানোর পর ১৯ দিন পেরিয়ে গেছে। কিন্তু এত দিনেও দেশের অন্যতম পেঁয়াজ উৎপাদনকারী এলাকা পাবনার সুজানগর ও সাঁথিয়া উপজেলায় পেঁয়াজের দাম অল্পই কমেছে। এ দুই উপজেলায় দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিতে পাঁচ–ছয় টাকা কমেছে।

এদিকে চলতি অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি সময়ে দুই উপজেলায় আগাম বা মুড়িকাটা জাতের পেঁয়াজের আবাদ শুরু হতে যাচ্ছে। পেঁয়াজ ব্যবসায়ী ও কৃষকেরা বলছেন, বাজারে আগাম পেঁয়াজ না ওঠা পর্যন্ত দাম কমার তেমন আশা নেই। নতুন পেঁয়াজ উঠতে অন্তত তিন মাস সময় লাগবে।

স্থানীয় কৃষি কার্যালয়ের হিসাব অনুযায়ী (গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত), পাবনার সাঁথিয়া ও সুজানগর উপজেলার কৃষকদের ঘরে ৭৯ হাজার ৯০০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ মজুত আছে। এর মধ্যে সুজানগরে ৩২ হাজার ৫০০ ও সাঁথিয়ায় ৪৭ হাজার ৪০০ মেট্রিক টন রয়েছে।

কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, দেশে সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ উৎপাদন হয় সুজানগর উপজেলায়। এর পরেই সাঁথিয়া উপজেলার অবস্থান। সুজানগরে এবার ১৭ হাজার ৭১০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়। তাতে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে ২ লাখ ৯৮ হাজার ৫৫০ টন। অন্যদিকে সাঁথিয়া উপজেলায় ১৬ হাজার ৬২০ হেক্টর জমিতে উৎপাদন হয় ২ লাখ ১৬ হাজার টন।

ভারত পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর আরোপিত বিধিনিষেধ ও শর্ত গত ১৩ সেপ্টেম্বর তুলে নেয়। প্রতি টন পেঁয়াজ রপ্তানির ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ৫৫০ ডলার মূল্যের যে শর্ত ছিল, তা প্রত্যাহার করা হয়। পাশাপাশি কমানো হয় রপ্তানি শুল্ক। প্রতিবেশী দেশটির এমন ঘোষণায় ধারণা করা হয়েছিল, দেশে পেঁয়াজের দাম ব্যাপকভাবে কমবে। কিন্তু গত ১৯ দিনে দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিতে পাঁচ–ছয় টাকা কমেছে।

সুজানগর ও সাঁথিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাফিউল ইসলাম ও সঞ্জীব কুমার গোস্বামী জানান, ভারতীয় পেঁয়াজের চেয়ে সব সময়ই দেশি পেঁয়াজের দাম বেশি থাকে। এবার বাজারে পেঁয়াজের দাম বেশি থাকায় কৃষকেরা লাভবান হয়েছেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার সাঁথিয়ার করমজা চতুরহাট ও বোয়ালমারী এবং সুজানগরের চিনাখড়া হাটে গিয়ে দেখা জানা যায়, স্বাভাবিকের তুলনায় দেশি পেঁয়াজ কম উঠছে। প্রতি মণ দেশি পেঁয়াজ ৩ হাজার ৮০০ থেকে ৪ হাজার ১০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে। আড়তদার ও ব্যবসায়ীরা বলেন, কৃষকের ঘরে পেঁয়াজ কমে এসেছে। সে জন্য দাম সেভাবে কমছে না।

আলাপকালে দুই উপজেলার কয়েকজন কৃষক প্রথম আলোকে জানান, তাঁরা ইতিমধ্যে মুড়িকাটা বা আগাম জাতের পেঁয়াজ চাষের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়েই উঁচু জমিগুলোয় পেঁয়াজের আবাদ শুরু হবে। আবাদ শুরুর আড়াই মাসের মধ্যে পেঁয়াজ ঘরে তোলার উপযোগী হয়।

জেলা কৃষি কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর সাঁথিয়া উপজেলায় ১ হাজার ৬০০ হেক্টর ও সুজানগরে ১ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে আগাম বা মুড়িকাটা জাতের পেঁয়াজ আবাদের প্রাথমিক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।