ভারতের শেয়ারবাজার পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ শেয়ারবাজার হিসেবে পরিচিত। ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের এক সংবাদে বলা হয়েছে, ভারতের শেয়ারবাজার হংকংয়ের শেয়ারবাজারের জায়গা দখল করে নেবে। বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল এই দেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা নিয়ে বিনিয়োগকারীদের আশাবাদের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্লেষকেরা এমন পূর্বাভাস দিয়েছেন।
অক্টোবর মাসের শেষে ভারতের শেয়ারবাজারের বাজার মূলধন ছিল ৩ দশমিক ৭ ট্রিলিয়ন বা ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি ডলার। ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অব এক্সচেঞ্জেস এ তথ্য দিয়েছে। হংকং শেয়ারবাজারের বাজার মূলধন ছিল ৩ দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন বা ৩ লাখ ৯০ হাজার কোটি ডলার।
নভেম্বর মাসে ভারতের শেয়ারবাজারে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়েছে। মূলত কোম্পানিগুলোর শক্তিশালী আয় ও ভারতের প্রবৃদ্ধি নিয়ে আশাবাদের কারণে শেয়ারের দাম বেড়েছে। ফলে ভারতের শেয়ারবাজার বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম শেয়ারবাজার হওয়ার পথে; প্রথম স্থানে আছে নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জ, এরপর নাসডাক, সাংহাই, ইউরোনেক্সট, জাপান ও সেনঝেন।
গত এক মাসে ভারতের নিফটি ৫০ সূচকের মান ৮ দশমিক ১ শতাংশ বেড়েছে। এটি মূলত ভারতের বড় কোম্পানিগুলোর সূচক। অন্যদিকে চীনের অর্থনীতির গতি হারানোর কারণে হংকংয়ের হ্যাংসেং সূচক গত এক মাসে ৬ দশমিক ৭ শতাংশ পড়ে গেছে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, গত এক দশকে ভারত ও চীনের শেয়ারবাজার প্রায় কাছাকাছি অবস্থানে থাকলেও গত তিন বছরে তাদের পথ ভিন্ন হয়ে গেছে। এই সময়ে চীনের শেয়ারবাজারের সূচক নিম্নমুখী হলেও ভারতের সূচক ওপরের দিকেই উঠেছে।
ভারতের মধ্যবিত্তদের ভোগব্যয় বৃদ্ধির কারণে বিনিয়োগকারীরা দেশটির প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, সম্পদ, বিলাসবহুল পণ্য ও উচ্চ মানের পণ্যের প্রতি সচ্ছল ভারতীয়দের আকর্ষণ বাড়ছে, সেই সঙ্গে অবকাঠামো খাতে ভারত সরকারের ব্যয়ও বাড়ছে।
বড় অর্থনীতিগুলোর মধ্যে চলতি বছর ভারতের প্রবৃদ্ধি হবে সবচেয়ে বেশি। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফের পূর্বাভাস, চলতি বছরে ভারতের প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ, যেখানে চীনের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ৫ শতাংশ। কোটাক সিকিউরিটিজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা প্রতীক গুপ্ত ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেন, ‘বিশ্বের খুব কম দেশ আছে, যাদের সম্পর্কে আপনি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলতে পারেন, আগামী ১৫-২০ বছরে তাদের প্রকৃত জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৬ শতাংশের ঘরে থাকবে। সে জন্য ভারত সম্পর্কে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ বাড়ছে।’
এদিকে ভারতীয় কোম্পানিগুলো কয়েক বছর ধরে নিজেদের ঋণ কমিয়ে আনছে বলে জানিয়েছেন প্রতীক গুপ্ত। ঋণ কমিয়ে এনে তারা ইকুইটি বাড়াচ্ছে, বিশেষ করে মহামারির সময় এই প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়েছে। টাটা গোষ্ঠীর সহযোগী কোম্পানি টাটা টেকনোলজিস গত নভেম্বর মাসে বাজারে দুর্দান্ত সূচনা করেছে। আইপিও বা প্রাথমিক গণপ্রস্তাব ছেড়ে তারা ৩৬৫ মিলিয়ন বা ৩৬ কোটি ৫০ লাখ ডলার তুলেছে। আইপিওতে প্রতিটি শেয়ারের বিপরীতে আবেদন জমা পড়েছিল ৬৯টি।
ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের সংবাদে বলা হয়েছে, পশ্চিমা দেশগুলোর চায়না প্লাস ওয়ান নীতির কারণেও ভারত লাভবান হচ্ছে। চলতি সপ্তাহে পত্রিকাটির আরেক সংবাদে বলা হয়েছে, আইফোন নির্মাতা কোম্পানি অ্যাপল সরবরাহকারীদের ভারতের কারখানায় ব্যাটারি উৎপাদনের কথা বলেছে। তারা জানিয়েছে, আইফোন ১৬-এর ব্যাটারি ভারতীয় কারখানাগুলোতে উৎপাদন করা হবে।
অন্যদিকে বৈদ্যুতিক গাড়ির বৃহত্তম কোম্পানি টেসলা সম্প্রতি মোদি সরকারের সঙ্গে ভারতে কারখানা স্থাপনের বিষয়ে আলোচনা করেছে। এ বিষয়ে শিগগিরই অগ্রগতি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ভারতের শেয়ারবাজারের শেয়ারের দাম বৃদ্ধির পেছনে বিদেশি বিনিয়োগের চেয়ে দেশীয় বিনিয়োগ বড় ভূমিকা পালন করেছে বলে সংবাদে বলা হয়েছে। বিদেশিরা এখন ভারতীয় ইকুইটির নিট ক্রেতা, যদিও সেপ্টেম্বর–অক্টোবরে তারা ছিল নিট বিক্রেতা।