চলমান সহিংস ঘটনার পরিস্থিতিতে দেশে পণ্য পরিবহন ব্যাহত হচ্ছে। এতে কাঁচামালসহ নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কারফিউ বা সান্ধ্য আইনের আওতার মধ্যে না থাকলেও বাইরে থেকে সবজি আসতে পারছে না ঢাকায়। এই সুযোগে খুচরা দোকানদারেরা সব ধরনের সবজির দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।
ওদিকে ঢাকার বাইরে বিভিন্ন বড় মোকামের পাইকারেরা ক্রেতার অভাবে সবজি নিয়ে বসে আছেন। তেমনি এক মোকাম বগুড়ার মহাস্থানহাট। সেখানকার ব্যবসায়ীরা কৃষকদের কাছ থেকে পটোল, জালি, বেগুন, কাঁচা মরিচ, লাউ ইত্যাদি পণ্য কিনে নিজেদের আড়তে রেখেছিলেন। এগুলো ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানে করে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ বিভিন্ন জায়গায় চলে যাওয়ার কথা। কিন্তু পরিস্থিতির কারণে তা হচ্ছে না।
পণ্য পরিবহন নির্বিঘ্ন রাখতে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে—এমন প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম গতকাল রোববার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, কারফিউ থাকলেও পণ্য পরিবহনে কোনো অসুবিধা নেই। কারণ, পণ্য পরিবহন কারফিউর বাইরে। বাইরের জেলাগুলো থেকে কাঁচা পণ্য ঢাকায় আসছে। শুধু তা-ই নয়, ঢাকা থেকে রপ্তানি পণ্যও যেতে পারছে বন্দরগুলোতে।
তবে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্যের সঙ্গে একমত হতে পারেননি বগুড়ার মহাস্থান কাঁচামাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘পণ্য পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা নেই ঠিক আছে; কিন্তু যেভাবে ব্যারিকেড চলছে, আমরা তো ঘর থেকেই বের হতে পারছি না। ধরে নিলাম থানা-পুলিশের সহায়তায় বগুড়া থেকে ট্রাক রওনা দিল ঢাকার উদ্দেশে। মাঝপথে কোথাও যে ট্রাকটাই জ্বালিয়ে দেওয়া হবে না, তা নিশ্চিত হব কীভাবে?’ তাঁর আড়তে ২০ লাখ টাকার কাঁচা পণ্য পড়ে আছে বলে জানান শফিকুল ইসলাম।
কারফিউ থাকলেও পণ্য পরিবহনে কোনো অসুবিধা নেই। কারণ, পণ্য পরিবহন কারফিউর বাইরে। বাইরের জেলাগুলো থেকে কাঁচা পণ্য ঢাকায় আসছে। শুধু তা-ই নয়, ঢাকা থেকে রপ্তানি পণ্যও যেতে পারছে বন্দরগুলোতেআহসানুল ইসলাম, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী
এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে অসহযোগ আন্দোলন কর্মসূচি শুরু হয় গতকাল থেকে। সরকারও কারফিউর সময়সীমা তিন ঘণ্টা এগিয়ে গতকাল সন্ধ্যা ছয়টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ঘোষণা করে।
গতকাল বিকেলে কারওয়ান বাজারে গিয়ে দেখা যায়, খুচরা সবজি বিক্রেতা কাউছার মিয়ার সঙ্গে ক্রেতা বাবুল হোসেন ঝগড়া করছেন। বাবুল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, এক দিন পার না হতেই প্রতিটি সবজিতে ১০ টাকা করে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। অন্যদিকে কাউছার মিয়া বলেন, ‘আজ ও কাল রাতে যখন ঢাকায় মাল আসতে পারবে না, তখন দেখবেন দাম ক্যামনে বাড়ে?’
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে দেশজুড়ে সংঘাত-সংঘর্ষ পরবর্তী কারফিউর কারণে ছয় দিন প্রায় পুরোপুরি বন্ধ ছিল পণ্য পরিবহন। এ পরিবহন মালিকদের দৈনিক ১০৮ কোটি টাকা করে মোট ৬৫০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি বাংলাদেশ কাভার্ড ভ্যান-ট্রাক-প্রাইমমুভার পণ্য পরিবহন মালিক অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনটি গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সভাপতি মাহবুবুল আলমকে দেওয়া এক চিঠিতে এ তথ্য উল্লেখ করেছে।
সংগঠনটি আরও জানায়, ব্যাংকঋণ নিয়ে গাড়ি কিনে ব্যবসা পরিচালনা করেন। সব খরচ মিটিয়ে মাসের শেষে ব্যাংকের কিস্তি দিতে হয় তাঁদের। গাড়ি না চললেও শ্রমিকদের বেতন দিতে হয়। আছে রক্ষণাবেক্ষণ ও পার্কিংসহ বেশ কিছু খরচ। সড়ক-মহাসড়কে নিরাপত্তা জোরদার করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহল বাড়ানোর দাবি তাঁদের।
বাংলাদেশ আন্তজেলা ট্রাক সমিতি ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি তাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেশে ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানের সংখ্যা প্রায় তিন লাখ। নিরাপত্তাহীনতায় এগুলো চলতে পারছে না। একদম স্ট্যান্ডে বসা। কিছু কিছু চলছে ঝুঁকি নিয়ে। এ অবস্থা চলতে থাকলে আমাদের না খেয়ে থাকতে হবে। আবার আচমকা কখন, কোন বিপদ আসে, তা-ও বলা মুশকিল। আমরা চরম বিপদে আছি।’