আলুর সংকট নেই, দাম বাড়াচ্ছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা: হিমাগার সমিতি

আলুর মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন
ছবি: প্রথম আলো

বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন দাবি করেছে যে বর্তমানে দেশে আলুর কোনো সংকট নেই। সমিতির নেতারা বলেছেন, বর্তমানে দেশের হিমাগারগুলোতে যে পরিমাণ আলু সংরক্ষিত রয়েছে, তা দিয়ে আগামী ডিসেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত বাজারে আলু সরবরাহ করা সম্ভব হবে। ডিসেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে নতুন আলুর বাজারে আসবে। ফলে বাজারে আলু সরবরাহের কোনো ঘাটতি হবে না।

হিমাগারের মালিকদের এই সংগঠনের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী কারসাজি করে আলুর দাম বাড়াচ্ছেন।

আজ রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছে কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন। রাজধানীর মতিঝিলে সংগঠনটির কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরীসহ সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।

সংবাদ সম্মেলনে মোস্তফা আজাদ চৌধুরী জানান, আলু উৎপাদন ও সংরক্ষণের বিষয়ে সরকারি-বেসরকারি তথ্যে বড় ফারাক রয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের জানামতে, দেশে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৮৫ লাখ মেট্রিক টনের বেশি আলু উৎপন্ন হয়নি। অথচ বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে ১ কোটি ১২ লাখ টন আলু উৎপাদনের কথা বলা হয়েছে। বাংলাদেশে আলুর চাহিদা ৯০ লাখ টন। এ বিবেচনায় সরকারি হিসাবে তো আলু উদ্বৃত্ত থাকার কথা।’

অন্যদিকে কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুসারে, ২০২৩ সালে হিমাগারগুলোতে ২৩ লাখ ১২ হাজার টন আলু সংরক্ষণ হয়েছে। অথচ কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্যে ২৪ লাখ ৯২ হাজার টন আলু সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বলেন, এ মৌসুমে দেশের হিমাগারগুলোতে ২০ শতাংশ সংরক্ষণের স্থান ফাঁকা রয়েছে। আলু যদি বেশি উৎপন্ন হয়ে থাকে, তাহলে ধারণক্ষমতার ২০ শতাংশ জায়গা কেন অব্যবহৃত অবস্থায় রয়েছে? হিমাগার ফাঁকা থাকার কারণ, এ বছর আলুর উৎপাদন ও মজুত, উভয়ই কম হয়েছে।

এখনো যে পরিমাণে আলু মজুত রয়েছে, তা দিয়ে আগামী মৌসুমের (ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ) আগপর্যন্ত আলুর কোনো সংকট হবে না বলে মনে করে কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন।

সমিতির সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী আরও বলেন, ২০২৩ সালের মে মাসের ২০ তারিখের পর থেকে যখন আলু খালাস হওয়া শুরু হয়, তখন হিমাগার শেডে কাঁচা আলুর মূল্য ছিল প্রতি কেজি ২৬-২৭ টাকা। এই দরেই প্রকারভেদে আলু বিক্রি শুরু হয়েছিল। তবে আজ পর্যন্ত সেই দাম (হিমাগার শেডে) বেড়ে ৩৪ থেকে ৩৬ টাকা হয়েছে; অর্থাৎ মে মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত আলুর হিমাগার পর্যায়ে আলুর দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ টাকা।

এই মূল্যবৃদ্ধি ‘কাঙ্ক্ষিত নয়’ বলে মনে করছে হিমাগার সমিতি। সংগঠনটি জানিয়েছে, যাঁরা আলু সংরক্ষণ করেছেন, তাঁদের অনেকে মনে করছেন, আলুর মজুত কম রয়েছে। সে জন্য তাঁরা আলুর মূল্যবৃদ্ধি করে চলেছেন।

কম চাষ ও সংরক্ষণের কারণ ‘লোকসান’
কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বলেন, বিগত বছরগুলোতে কৃষক ও আলু ব্যবসায়ীরা সঠিক মূল্য না পাওয়ায় ক্রমাগত লোকসানের মুখে পড়েছেন। এ ছাড়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর গম, ভোজ্য তেল ও ভুট্টার দাম বাড়ায় অনেক আলুচাষি এসব পণ্য চাষে ঝুঁকেছেন। এসব কারণে স্বাভাবিকভাবে আলু চাষ ও উৎপাদন কম হয়েছে।

অন্যদিকে ২০১৩ সাল থেকে পরবর্তী কয়েক বছরে চাহিদার উদ্বৃত্ত আলু উৎপাদন হওয়ায় তা কম দামে বিক্রি করে অনেক ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ী এবং হিমাগারের মালিক লোকসানে পড়েন। এতে অনেক হিমাগার ব্যবসায়ী ঋণখেলাপি হয়ে যান। ফলে বর্তমানে খুব কমসংখ্যক হিমাগার ব্যবসায়ী নিজেরা আলু কিনে সংরক্ষণ করেছেন। সে ক্ষেত্রে আলুর অস্বাভাবিক দাম বাড়ার জন্য হিমাগারের মালিকদের দায়ী করা ঠিক হচ্ছে না বলে মনে করে কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন।