মুরগির খাদ্যের দাম আর খামারিদের উৎপাদন খরচ না বাড়লেও কৃত্রিম সংকট তৈরি করায় ডিমের দাম বেড়ে গেছে।
দেশে মুরগির ডিম উৎপাদনে রাজশাহী এখন অন্যতম বৃহৎ অঞ্চল, যেখানে প্রতিদিন প্রায় ২০ লাখ ডিম উৎপাদিত হয়। স্থানীয় বাজারসহ ঢাকা ও সারা দেশের ব্যবসায়ীরা এখান থেকে ডিম নেন, যদিও দাম নির্ধারিত হয় ঢাকা থেকে।
তবে গত এক সপ্তাহে দেশে ডিমের দাম বেড়ে যাওয়ায় রাজশাহী অঞ্চলের দুটি বড় কোম্পানি ও চারজন ডিলারের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। বলা হচ্ছে, তাঁরা কৃত্রিমভাবে সংকট তৈরি করায় ডিমের দাম বেড়েছে। আবার ব্যবসায়ীদের একটি পক্ষ বলছে, একদিকে ডিমের চাহিদা বেড়েছে, অন্যদিকে সরবরাহ কমেছে। এ কারণে দাম বেড়েছে।
পোলট্রি ফিড বা মুরগির খাদ্যের দাম আর খামারিদের উৎপাদন খরচ না বাড়লেও রাজশাহীতে ৬–১০ আগস্ট প্রতিদিন খামারি পর্যায়ে ডিমের দাম বেড়েছে। এর মধ্যে ৬ আগস্ট প্রতিটি সাদা ডিম ৯ টাকা ৭০ পয়সা ও লাল ডিম ১০ টাকা ৪০ পয়সায় বিক্রি হয়েছে। এরপর প্রতিদিন ডিমের দাম একটু একটু করে বাড়ানো হয়। তাতে ১০ আগস্ট প্রতিটি সাদা ডিমের দাম ওঠে ১০ টাকা ৪০ পয়সা আর লাল ডিম বিক্রি হয় ১১ টাকা ১০ পয়সায়।
১১ আগস্ট জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর রাজশাহীতে অভিযান চালিয়ে তিনটি দোকানকে ১৩ হাজার টাকা জরিমানা করে। পরদিন ১২ আগস্ট রাজশাহী শহরের বাইপাস সড়কের মোসলেমের মোড়ের দুই আড়তদারকে মূল্যতালিকা না রাখায় ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করে ভোক্তা অধিদপ্তর। অভিযানের প্রভাবে ১৩ আগস্ট প্রতিটি ডিমের দাম ২০ পয়সা কমানো হয়। ফলে প্রতিটি সাদা ডিম ১০ টাকা ২০ পয়সা ও লাল ডিম ১০ টাকা ৭০ পয়সায় বিক্রি হয়। বর্তমানে রাজশাহীর খুচরা বাজারে প্রতি হালি সাদা ডিম ৪৪ আর লাল ডিম ৪৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ গত শুক্রবারও সর্বোচ্চ ৫২ টাকা হালি দরে বিক্রি হয়েছিল।
দেশে গত তিন মাসে মুরগির খাদ্যের দাম বাড়েনি; বরং মে ও জুনে কমেছে। মুরগির ফিড বা খাদ্যের ব্যবসায়ীরা প্রথম আলোকে জানান, ৫০ কেজি ওজনের প্রতি বস্তা পোলট্রি ফিড বা মুরগির খাদ্যের দাম গত মে মাসে ৭৫ টাকা ও জুন মাসে ৫০ টাকা কমানো হয়েছে। ফলে প্রতি বস্তা ফিডের দাম কমে হয়েছে ২ হাজার ৯০০ টাকা। অথচ ডিমের দাম দফায় দফায় বেড়েছে। যেমন গত ৭ এপ্রিল খামারি পর্যায়ে প্রতিটি সাদা ডিম ৮ টাকা ১০ পয়সা ও লাল ডিম ৮ টাকা ৯০ পয়সায় বিক্রি হয়। ২৭ জুলাই প্রতিটি সাদা ডিম ৯ টাকা ৩০ পয়সা ও লাল ডিম ১০ টাকা ৪০ পয়সায় বিক্রি হয়।
রাজশাহী শহরের একাংশসহ পবা, দুর্গাপুর, পুঠিয়া ও চারঘাট উপজেলার কিছু এলাকার খামারিদের ডিমের আড়ত গড়ে উঠেছে রাজশাহী শহরের বাইপাস সড়কের মোসলেমের মোড়ে। মোসলেমের মোড় ডিম আড়ত সমিতির সভাপতি জয়নাল আবেদীন জানান, প্রতিদিন রাজশাহীতে প্রায় ২০ লাখ ডিম উৎপাদিত হয়।
ঢাকার তেজগাঁওয়ের ডিমের আড়ত সমিতি প্রতিদিন রাত ১২টায় একটা দর বেঁধে দেয়, যা তিনি ফোনে স্থানীয় খামারি–ব্যবসায়ীদের জানিয়ে দেন। তাঁর মতে, ডিম সরবরাহকারী কোম্পানিগুলো কৃত্রিমভাবে এই সংকট তৈরি করেছে। তবে তিনি এ–ও বলেন, ডিমের বর্তমান দর ছয় মাস স্থিতিশীল থাকলে আরও নতুন খামারি উৎসাহিত হবেন। তখন ডিমের দাম এমনিতেই কমে আসবে।
মোসলেমের মোড়ের আড়তদার ও ডিলার হাফিজুর রহমান বলেন, খামারি পর্যায়ে প্রতিটি সাদা ডিমের দাম ৯ টাকা রাখা যেতে পারে। তাঁর দাবি, চারজন ডিলার খামারিদের জিম্মি করে রেখেছেন ও কৃত্রিম সংকটের সৃষ্টি করছেন। কম দামে কেনায় তিনি (হাফিজুর) ডিম কম পাচ্ছেন।
কামাল হোসেন নামে আরেকজন ডিলার বলেন, ডিমের উৎপাদন খরচ না ওঠার কারণে খামারিরা ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন। এ ছাড়া অতিরিক্ত গরম ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ না থাকায় চাহিদা অনুযায়ী ডিম উৎপাদিত হয়নি। এ কারণে দাম একটু বেড়েছে। উৎপাদন খরচ অনুযায়ী এই দাম ঠিক আছে।
আবার রাজশাহীর গোদাগাড়ীর কামলাপুরের খামারি এ এইচ এম আরিফুজ্জামান ডিমের দাম বৃদ্ধি পাওয়া নিয়ে প্রতিবেদন করার কথা শুনে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।