ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞার বাঁধন আরও কঠোর করতে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভ বা প্রতিনিধি পরিষদে একটি বিল পাস হয়েছে। ‘দ্য স্টপ হারবারিং ইরানিয়ান পেট্রোলিয়াম (এসএইচআইপি)’ শীর্ষক এ বিল গত শুক্রবার ৩৪২-৬৯ ভোটে পাস হয়।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, এ বিলের লক্ষ্য হচ্ছে, বিদেশি যেসব বন্দর ও পরিশোধনাগার মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ করে ইরান থেকে আমদানি করা তেল প্রক্রিয়াজাত করবে, তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের হামলার পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের আইনপ্রণেতারা ইরানের ওপর চাপ বাড়াতে নানা রকম আইন প্রণয়নের সম্ভাবনা নিয়ে তর্কবিতর্ক করছিলেন। হামাস গোষ্ঠী ইরানের পৃষ্ঠপোষকতা পায়, যদিও তেহরান এ হামলায় কোনো ধরনের সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করেছে।
হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভের সদস্য, রিপাবলিকান দলের মাইক ললার ও ডেমোক্রেটিক সদস্য জ্যারেড মস্কোউইটজ বলেছেন, এ বিলের মধ্য দিয়ে চীন ও রাশিয়ার মতো দেশগুলোকে পরিষ্কার বার্তা—নিষেধাজ্ঞা এড়াতে ইরানকে সহায়তা বন্ধ করুন, তা না হলে পরিণতি ভোগ করতে হবে।
বিলটি এখনো আইনে পরিণত হয়নি। সিনেটে পাস হয়ে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সই পেলেই তা আইনে পরিণত হবে।
তবে বিলটি আইনে পরিণত হলেও শেষমেশ কতটা কার্যকর হবে, তা পরিষ্কার নয়। কংগ্রেস নিষেধাজ্ঞার আইন পাস করলেও এসব ক্ষেত্রে সাধারণত প্রেসিডেন্টকে পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার দেওয়া হয়, অর্থাৎ জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রয়োজনীয় মনে করলে সেই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর না–ও করতে পারেন। যেমন দেশের জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় মনে হলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট কোনো বিদেশি কোম্পানির নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ব্যবসা করার ক্ষেত্রে বাদ না–ও সাধতে পারেন।
ইরানের তেলের বড় ক্রেতা হচ্ছে চীন, যাদের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের করার তেমন কিছুই নেই।
তেহরানের ওপর ওয়াশিংটনের নিষেধাজ্ঞা অনেক আগে থেকেই আছে। দেশটির পারমাণবিক কর্মসূচির জন্য এ নিষেধাজ্ঞা। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময় ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হলেও পরবর্তী সময়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জমানায় নিষেধাজ্ঞা আবারও জোরালো করা হয়।
দ্য ইকোনমিস্টের এক সংবাদে বলা হয়েছে, সেই সময় থেকে ইরানের এই তেল সরবরাহের নেটওয়ার্ক আরও শক্তিশালী হয়। ইরানের তেলের সবচেয়ে বড় ক্রেতা হচ্ছে চীন। সেই তেলের বেশির ভাগ কিনছে ছোট ছোট পরিশোধনাগারগুলো। চীন ইরান থেকে যত তেল কেনে, তার ৯৫ শতাংশই যায় এই ছোট ছোট তেল পরিশোধনাগারগুলোতে। ইরানের তেল বিশ্ববাজারের চেয়ে ব্যারেলপ্রতি ১০-১২ ডলার ছাড়ে পাওয়া যায়, যেখানে রাশিয়ার তেলে ছাড় পাওয়া পায় ব্যারেলে পাঁচ ডলার। নিষেধাজ্ঞার কবল থেকে বাঁচতে চীনের এই ছোট পরিশোধনাগারগুলো চীনা মুদ্রায় লেনদেন করে, ডলারে নয়। এ কৌশলের মধ্য দিয়ে ইরান নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে তেল কেনাবেচা করতে পারছে।
ইরান বর্তমানে দিনে ১৫ লাখ ব্যারেল তেল রপ্তানি করছে। গত চার বছরে তারা এত তেল আর কখনোই রপ্তানি করেনি। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এফজিই ও ভরটেক্সার তথ্যানুসারে, এই তেলের ৮০ শতাংশই যায় চীনে।