বাজারে পেঁয়াজের দাম রাতারাতি কেজিপ্রতি ৫০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পাওয়ার পর গত শনিবার থেকে সারা দেশে অভিযান পরিচালনা করছে সরকার। অভিযানের সময় অনিয়ম প্রমাণিত হওয়ায় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হলেও পেঁয়াজের দাম কমেনি। গতকাল রোববারও রাজধানীতে চড়া দামে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে। তবে খুচরা বিক্রেতারা মনে করছেন, নতুন মুড়িকাটা পেঁয়াজ বাজারে আসতে শুরু করায় দাম দ্রুত কমে আসতে পারে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর গত দুই দিন দেশের বিভিন্ন ন্থানে অভিযান চালিয়েছে। এ সময় পেঁয়াজের দাম বেশি রাখাসহ নানা অনিয়মের অভিযোগে ২১৩টি প্রতিষ্ঠানকে মোট ১৩ লাখ ৩৬ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। চড়া দামে পেঁয়াজ বিক্রির চিত্র সরকারি সংস্থাটির করা এক প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, গতকাল ঢাকার বাজারে পুরোনো দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি সর্বোচ্চ ২০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা সারা দেশে অভিযান অব্যাহত রেখেছি। কিন্তু বাজারে বাজারে পাহারা দিয়ে পেঁয়াজ বিক্রি সম্ভব না। ব্যবসায়ীদের বুঝতে হবে এটা হরিলুটের জায়গা না। অনিয়ম পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
রাজধানীর কারওয়ান বাজার ও মগবাজারে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে, পুরোনো দেশি পেঁয়াজ কিনতে প্রতি কেজি অন্তত ২০০ টাকা দাম দিতে হচ্ছে। কোথাও কোথাও পেঁয়াজ ২২০ টাকায় বিক্রির খবরও পাওয়া গেছে। আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজের দাম পড়ছে প্রতি কেজি ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা। আর চীন থেকে আসা বড় আকারের পেঁয়াজের দাম ১২০ থেকে ১৩০ টাকা।
বাসাবাড়িতে চীনা পেঁয়াজের ব্যবহার কম। তাই ক্রেতাদের অনেকে বাজারে নতুন আসা মুড়িকাটা পেঁয়াজের দিকে ঝুঁকেছেন। এই পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকায়। শ্যামবাজার পেঁয়াজ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুল মাজেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘মুড়িকাটা পেঁয়াজ আসায় বাজারে পেঁয়াজের দাম সপ্তাহ-দশ দিনের মধ্যে নেমে আসবে। দেশি পেঁয়াজ আসা শুরু হলে আমদানি করা পেঁয়াজের চাহিদা পড়ে যায়।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ জুন থেকে ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে ৭ দশমিক ৫ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। তবে আমদানির অনুমোদন দেওয়া আছে ১৯ দশমিক ৯০ লাখ টন পেঁয়াজের। ভারত ছাড়া আরও ৯টি দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা যাবে। এসব দেশ হলো চীন, মিসর, পাকিস্তান, কাতার, তুরস্ক, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, প্রতিবছর মুড়িকাটা পেঁয়াজ আবাদ হয় প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে। উৎপাদন হয় প্রায় ৮ লাখ টন। এ ছাড়া এ বছর গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ আবাদ হয়েছে প্রায় ৫০০ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৫০ হাজার টনের মতো। মুড়িকাটা ও গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ তিন থেকে সাড়ে তিন মাস বাজারে থাকে। এরপর মূল পেঁয়াজ আসা শুরু হবে, যার উৎপাদন হতে পারে ২৬ থেকে ২৮ লাখ টন।
পাবনার সাঁথিয়া উপজেলায় এক দিনের ব্যবধানে নতুন পেঁয়াজের দাম কেজিতে ২৫ টাকা, আর পুরোনো পেঁয়াজ ১৫ টাকা পর্যন্ত কমেছে। গত শনিবার নতুন পেঁয়াজের দাম ছিল ১২০ থেকে ১৩০ টাকা এবং পুরোনো পেঁয়াজ ১৭৫ টাকার ওপরে। উপজেলার কাশিনাথপুরের কৃষক আনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, তিনি নিজে গত বছর ১২ বিঘা জমিতে দেড় লাখ টাকা খরচ করে পেঁয়াজ আবাদ করে ৫ লাখ টাকার মতো বিক্রি করেছেন। এবার দাম ভালো পাওয়ায় অনেক কৃষক নতুন করে পেঁয়াজ আবাদে ঝুঁকছেন। নতুন করে হালি পেঁয়াজের চারাও লাগানো হচ্ছে।
ভারত সরকার গত শুক্রবার পেঁয়াজ রপ্তানিতে বিধিনিষেধ আরোপের কথা জানানোর পর সে দেশে রপ্তানির অপেক্ষায় থাকা পেঁয়াজ আসেনি। রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত হিলি স্থলবন্দর দিয়ে কোনো পেঁয়াজ আমদানি হয়নি। পেঁয়াজ আসেনি সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়েও। তবে বেনাপোল কাস্টম হাউসের রাজস্ব কর্মকর্তা রেজাউল করিম জানিয়েছেন, গতকাল ওই বন্দর দিয়ে অল্প পরিমাণে পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। তিনি বলেন, প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৮০ সেন্টের নিচে রপ্তানি না করতে ভারত সরকারের নির্দেশনা রয়েছে। ফলে আমদানি মূল্য পড়ছে ৯০ টাকার ওপরে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন নিজস্ব প্রতিবেদক, চাঁপাইনবাবগঞ্জ; যশোর অফিস; প্রতিনিধি, বেড়া, পাবনা ও বিরামপুর, দিনাজপুর]