বসুন্ধরা মনে করে, বিনিয়োগ করে তিন বছরের মধ্যে টেলিটককে দেশের শীর্ষ মোবাইল অপারেটর কোম্পানিতে উন্নীত করা সম্ভব।
রাষ্ট্রমালিকানাধীন মোবাইল অপারেটর টেলিটকে বিনিয়োগ করতে চায় দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপ। তারা মনে করে, বিপুল অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগ করে তিন বছরের মধ্যে টেলিটককে দেশের শীর্ষ মোবাইল অপারেটর কোম্পানিতে উন্নীত করা সম্ভব।
বসুন্ধরা গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা টেলিকমিউনিকেশন তিন মাস আগে (১৪ সেপ্টেম্বর) ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে এ-সংক্রান্ত প্রস্তাব পাঠায়। টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেডের নেটওয়ার্ক, গ্রাহকসেবা এবং কাঠামোগত উন্নয়ন—এই তিন খাতে অর্থ বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এটিকে তারা ‘কৌশলগত বিনিয়োগ’ হিসেবে উল্লেখ করেছে।
এদিকে বসুন্ধরার প্রস্তাবটি যাচাই-বাছাই শেষে টেলিটক জানিয়েছে, প্রস্তাবটি পূর্ণাঙ্গ নয়। কোম্পানিটি টেলিটকে কত টাকা বিনিয়োগ করবে, টেলিটকের শেয়ার কিনবে, নাকি লভ্যাংশ ভাগাভাগি হবে, সে বিষয়ে কিছু বলা হয়নি প্রস্তাবে। সে জন্য বিনিয়োগের বিষয়ে একটি বিস্তারিত প্রস্তাব দিতে বসুন্ধরাকে অনুরোধ করেছে টেলিটক।
টেলিটক কোম্পানি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০৪ সালে। পরের বছর বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত টেলিটকের নেটওয়ার্ক উন্নয়নে ৫ হাজার ৫৭৮ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে সরকার। টেলিটকের বর্তমানে ৫ হাজার ৬৬১টি বেজ ট্রান্সসিভার স্টেশন (বিটিএস) রয়েছে। তবে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই রাষ্ট্রমালিকানাধীন এই মোবাইল অপারেটরের সেবার মান নিয়ে গ্রাহকদের মনে প্রশ্ন রয়েছে। সারা দেশে কোম্পানিটি এখনো তাদের মোবাইল নেটওয়ার্ক সেবা পৌঁছে দিতে পারেনি।
বসুন্ধরার প্রস্তাবেও টেলিটকের নানা সীমাবদ্ধতার কথা তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, সরকার থেকে নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার পরও টেলিটক সুবিধাজনক অবস্থানে যেতে পারেনি। গ্রাহকসংখ্যা মাত্র ৬৮ লাখ, যা দেশের মোট গ্রাহকের মাত্র সাড়ে তিন ভাগ। গ্রাহকসংখ্যাও দিন দিন কমছে। দেশে ব্যবসারত মোবাইল অপারেটরগুলোর মধ্যে টেলিটকের অবস্থান বলতে গেলে তলানিতেই রয়েছে।
টেলিটকের বর্তমান অবস্থার পেছনে ছয়টি কারণ দায়ী বলে মনে করে বসুন্ধরা। সেগুলো হচ্ছে: কৌশলগত ব্যবস্থাপনার অভাব, উন্নত অবকাঠামোর অভাব, অদক্ষ ব্যবস্থাপনা, সিদ্ধান্ত গ্রহণে জটিলতা, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং পর্যাপ্ত মূলধনের অভাব।
বসুন্ধরার বিনিয়োগ প্রস্তাব যাচাই-বাছাই করতে সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে টেলিটকের পরিচালনা পর্ষদ। সেই কমিটির আহ্বায়ক করা হয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামকে। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন টেলিটকের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তামজিদুল হক চৌধুরী এবং এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সহসভাপতি হাবিব উল্লাহ ডন।
কমিটির সদস্যরা গত ২৬ অক্টোবর ও ১৫ নভেম্বর দুটি বৈঠক করে একটি প্রতিবেদন তৈরি করে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। সেই প্রতিবেদনে বলা হয়, বসুন্ধরা গ্রুপের প্রস্তাবনাটিতে তিনটি খাতে আগ্রহ প্রকাশ করলেও অর্থায়ন কী উপায়ে হবে, তা উল্লেখ নেই। এটি কি ইক্যুইটি হবে, নাকি ঋণ হবে, তা বলা হয়নি। প্রস্তাবনার সঙ্গে আর্থিক ও কারিগরি কোনো প্রস্তাব পাওয়া যায়নি।
পর্যালোচনায় আরও বলা হয়, টেলিটকে বিনিয়োগ করতে বসুন্ধরা গ্রুপের আগ্রহ প্রকাশের বিষয়টি উৎসাহব্যঞ্জক। তবে সরকারের মালিকানাধীন কোনো কোম্পানিতে এ ধরনের ‘কৌশলগত বিনিয়োগকারী’ গ্রহণ করার কোনো উদাহরণ আগে নেই। তাই কৌশলগত বিনিয়োগ বলতে কী বোঝানো হয়েছে, তা স্পষ্টীকরণের পাশাপাশি আইনি মতামত নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। টেলিটকে বিনিয়োগ নেওয়ার আগে সরকারের অনুমতি নিতে হবে।
জানতে চাইলে টেলিটকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ কে এম হাবিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, এটি একটি অসম্পূর্ণ প্রস্তাব। বসুন্ধরার প্রস্তাবে আর্থিক ও কারিগরি বিনিয়োগের বিষয়ে কিছুই বলা নেই। তারা শুধু বলেছে, কৌশলগত বিনিয়োগ করতে চায়। এটি একটি ব্যাপকভিত্তিক ধারণা। তাদের বিস্তারিত আর্থিক ও কারিগরি প্রস্তাব দেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে। সে প্রস্তাব পাওয়ার পর সামনে এগোনো যাবে।
গত বছরের নভেম্বরে প্রথমবারের মতো চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) কৌশলগত বিনিয়োগকারী হয় বসুন্ধরা গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এবিজি লিমিটেড। সিএসইর ২৫ শতাংশ শেয়ার কেনার মধ্য দিয়ে বসুন্ধরা গ্রুপ পুঁজিবাজারের মালিকানায় কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়। এবার তারা রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন মোবাইল অপারেটর কোম্পানিতে বিনিয়োগ করতে চায়। টেলিটকে বসুন্ধরার বিনিয়োগের বিষয়ে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের সবুজসংকেত রয়েছে বলে জানা গেছে।