পশ্চিমবঙ্গ সরকার রাজ্যের একেবারে দক্ষিণ প্রান্ত তাজপুরে বঙ্গোপসাগরে একটি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ ভারতের অন্যতম বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী আদানি গ্রুপের হাতে তুলে দিয়েছে। আদানি গোষ্ঠীর বন্দরবিষয়ক কোম্পানি আদানি পোর্টস অ্যান্ড স্পেশাল ইকোনমিক জোন লিমিটেড দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার উপকূল লাগোয়া তাজপুর অঞ্চলে বন্দরটি নির্মাণ করবে।
আদানি গোষ্ঠী এই বন্দর নির্মাণে সরাসরি ১৫ হাজার কোটি রুপি বিনিয়োগ করবে বলে রাজ্য সরকারের পক্ষে জানানো হয়েছে। সাম্প্রতিক কালে পশ্চিমবঙ্গে এটাই সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ, যা একটি আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে আদানি গ্রুপের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের একেবারে দক্ষিণাঞ্চলে হলদিয়া বন্দর ৫০ বছরের বেশি সময় আগে নির্মিত হয়েছিল। কিন্তু হলদিয়া বন্দর ক্রমে নাব্যতা হারাচ্ছে। এ কারণে বড় মালবাহী জাহাজ সরাসরি বন্দরে ঢুকে পণ্য খালাস করতে পারছে না। সমুদ্রের মধ্যেই ছোট পণ্য পরিবহনকারী জাহাজে মাল তুলে তা বন্দরে নামাতে হচ্ছে পণ্য পরিবহনকারীদের। অতিরিক্ত পলি জমার কারণে হলদিয়া বন্দর নাব্যতা হারিয়েছে।
আদানির নতুন বন্দরে জাহাজ উপকূল পর্যন্ত ঢুকে পণ্য খালাস করতে পারবে। বড় জাহাজও দ্রুত পণ্য খালাস করে গন্তব্যে ফিরতে পারবে। এ কারণে পণ্য ওঠানো ও নামানোয় আরও গতি আসবে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। সরকারের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই প্রস্তাবিত বন্দরে এক হাজার টন পর্যন্ত পণ্য একবারে নামানো যাবে। কারণ, ভরা জোয়ারের সময় নদীর নাব্যতা ১৬ থেকে ২০ মিটার পর্যন্ত যেতে পারে।
পশ্চিমবঙ্গের নগর উন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেছেন, এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে পশ্চিমবঙ্গে উন্নয়নের নতুন যুগের সূচনা হবে। রাজ্যে ২৫ হাজার কর্মসংস্থান হবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।
এ বন্দর নির্মাণে আদানি গ্রুপ সরাসরি ১৫ হাজার কোটি রুপি বিনিয়োগ করবে। সংলগ্ন অঞ্চলে শিল্পাঞ্চল, পণ্য পরিবহনের রাস্তা ও অন্যান্য যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নে সরকারি ও বেসরকারি খাতে আরও ১০ হাজার কোটি রুপি বিনিয়োগ করা হবে বলেও জানানো হয়েছে। তবে অন্যান্য প্রকল্পের মতোই পশ্চিমবঙ্গে বড় প্রকল্পের প্রায় সব সময়ই বিরোধিতা হয়। তাজপুর বন্দর প্রকল্পের ক্ষেত্রেও তেমনই বিরোধিতা হবে বলে আশঙ্কা। এ বিরোধিতা প্রধানত আসতে পারে মৎস্যজীবীদের কাছ থেকে।
গত ডিসেম্বর মাসে আদানি গ্রুপের চেয়ারম্যান গৌতম আদানি ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতায় এক দীর্ঘ বৈঠক করেন। সেই বৈঠকের পরেই পশ্চিমবঙ্গে আদানি গ্রুপের নানা প্রকল্পের কাজ ত্বরান্বিত করা হয়েছে। অতীতে পশ্চিমবঙ্গে একাধিক বড় প্রকল্পের আলোচনা শুরু হয়েছে, কিছু ক্ষেত্রে চুক্তি সইও হয়েছিল। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কাজে গতি এসেছে গত এক বছরে।
এর মধ্যে একটি প্রকল্প হলো বীরভূম জেলার আদিবাসী অঞ্চল দেওচা পাঁচামিতে একটি কয়লার ব্লক। এই ব্লক থেকে কয়লা তুলবে আদানি গ্রুপ। তবে রাজ্য সরকারের এখানে সমস্যা বাড়ছে, তারা জমি অধিগ্রহণ করতে পারছে না। পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণের প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরও এ অঞ্চলের আদিবাসীরা ভিটে ছাড়তে চাইছেন না। আদিবাসীদের স্বার্থ সুরক্ষিত করতে একাধিক মামলাও হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টে। ফলে বিষয়টি আটকে গেছে।
অন্যদিকে ঝাড়খন্ড রাজ্যে একটি বড় বিদ্যুৎ প্রকল্প গড়ে তুলেছে আদানি গ্রুপ। সেখান থেকে বিদ্যুৎ বাংলাদেশে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে চুক্তিও সই হয়েছে। কিন্তু সেই কাজও আটকে গেছে, বিদ্যুৎ নিয়ে যাওয়ার তার জমির ওপর দিয়ে নিয়ে যাওয়া নিয়ে মুর্শিদাবাদ জেলায় সমস্যা দেখা দিয়েছে। সেখানকার কৃষকেরা আন্দোলন করছেন।
তাঁরা জানিয়েছেন, তাঁদের জমির ওপর দিয়ে এই তার নেওয়া যাবে না। এখনো এই দ্বন্দ্বের সুরাহা হয়নি। ফলে প্রকল্পের কাজে হাত দিয়েও আদানি গ্রুপ বাস্তবায়নে অগ্রগতি করতে পারছে না।