যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বড় খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান টার্গেট জানিয়েছে যে সংঘবদ্ধ অপরাধীরা এ বছরে তাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ৫০ কোটি ডলারের পণ্য চুরি করবে। এ ধরনের চুরিকে কাগজে-কলমে ‘শ্রিঙ্ক’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। গত বছর এই কোম্পানির যত পণ্য চুরি হয়েছিল, তার আর্থিক মূল্য ছিল ৭৬ কোটি ৩০ লাখ ডলার।
মার্কিন গণমাধ্যম সিএনবিসি জানিয়েছে, কোম্পানিটি আর্থিক যে হিসাব দাখিল করেছে, তা বিশ্লেষণ করে গত বছরের চুরির তথ্য পাওয়া গেছে। এ বছরে চুরির পরিমাণ বাড়বে এটা ধরে নিয়ে হিসাব করা হয়েছে যে শ্রিঙ্কের পরিমাণ এবারে ১০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে।
তবে চুরির বিষয়ে সঠিক একটি হিসাব পাওয়া কঠিন। এর কারণ হলো, আরও কিছু কারণে মালামালের ক্ষতি হতে পারে, যেমন কর্মীদের মাধ্যমে চুরি এবং কিছু পণ্য নষ্ট হওয়া।
টার্গেটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ব্রায়ান করনেল প্রথম প্রান্তিকের আর্থিক ফলাফল জানানোর সময় বিষয়টি সামনে নিয়ে আসেন। তিনি বলেন, একদিকে বিক্রি কমার সঙ্গে সঙ্গে কিছু ক্রেতা দামের ব্যাপারে অতি সচেতন হয়ে উঠছেন, অন্যদিকে তাঁর কোম্পানি এবং তাঁদের মতো অন্য খুচরা বিক্রেতারা চুরি বেড়ে যাওয়া নিয়ে সমস্যায় রয়েছেন।
খুচরা বিক্রির দোকানে চুরির ঘটনাকে তিনি ‘অতি জঘন্য একটি ধারা, যা গত বছর শুরু হয়েছে’ বলে বর্ণনা করেন। তিনি আরও জানান, টার্গেটের দোকানগুলোয় সহিংস ঘটনা সম্প্রতি বেড়ে গেছে।
তিনি বলেন, ‘এই সমস্যা আমাদের সবাইকে ঝামেলায় ফেলছে। এর ফলে পণ্যের প্রাপ্যতা কমে যাচ্ছে, শপিং করার অভিজ্ঞতা খারাপ হচ্ছে এবং আমাদের কর্মী ও অতিথিদেরকে ঝুঁকিতে ফেলছে।’
খুচরা দোকানে সংঘবদ্ধ অপরাধ এই শিল্পে একটি আলোচিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিছু কোম্পানি অভিযোগ করছে যে অনলাইনে বেচাকেনার সুবিধা থাকার কারণে এসব চোর নিজেদের পরিচিতি প্রকাশ না করেই চোরাই ইলেকট্রনিক ও অঙ্গসজ্জার পণ্য এবং অন্যান্য মালামাল বিক্রি করতে পারছে।
হোম ডিপো, ওয়ালমার্ট, বেস্ট বাই, ওয়ালগ্রিনস ও সিভিএসের মতো বড় বড় খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে এই সমস্যা নিয়ে কথা বলেছে। তাদের সবারই এক অভিজ্ঞতা—শ্রিঙ্ক পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে।
হোম ডিপোর প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা রিচার্ড ম্যাকফিল সিএনবিসিকে বলেন, ‘এই দেশে খুচরা দোকানে চুরির একটা সমস্যা আছে। আমরা বিশ্বাস করি, এটি দমানোর ক্ষমতা আমাদের আছে। তবে এটা ঠিক যে আমরা একটা চাপের মধ্যে রয়েছি।’
সংঘবদ্ধ চুরি সত্যিই বেড়ে গেছে কি না, কিংবা বেড়ে গেলে কতটা বেড়েছে, তা বের করা কঠিন। ন্যাশনাল রিটেইল ফেডারেশনের তথ্য জানাচ্ছে, ২০২১ সালে শ্রিঙ্কের আর্থিক মূল্য ছিল ৯ হাজার ৪৫০ কোটি ডলার। ২০২০ সালে এর পরিমাণ ছিল ৯ হাজার ৮০ কোটি ডলার। খুচরা বিক্রেতাদের পক্ষ থেকে গোপনে এই তথ্য দেওয়া হয়েছে। সুতরাং এই তথ্য কতটা সঠিক তা যাচাই করা সম্ভব নয়।
তবে খুচরা বিক্রেতাদের যে ক্ষতি হচ্ছে, তার মধ্যে ক্রেতা ও কর্মীদের চুরির বাইরে বিভিন্ন কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া পণ্য এবং পণ্যের মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ার মতো বিষয়ও রয়েছে। টার্গেট সংঘবদ্ধ চুরির বিষয়টি নিয়ে সবচেয়ে বেশি সোচ্চার। তাদের গুদামে অতিরিক্ত পণ্য রয়েছে এবং তাদের লাভের পরিমাণ কমে গেছে।
কোম্পানিটির প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা মাইকেল ফিডেলকে গত বুধবার বিনিয়োগকারীদের বলেন, শ্রিঙ্কের কারণে বছরের প্রথম প্রান্তিকে তাঁদের মুনাফার হার পুরো ১ শতাংশ কমে গেছে। সিইও ব্রায়ান করনেল জানান, চুরির পরিমাণ কমিয়ে আনতে তাঁরা কাজ করছেন। এ ব্যাপারে নীতিগত কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তা নিয়েও তাঁরা আলোচনা করছেন।
কিছু খুচরা বিক্রেতা এমন একটি আইন প্রণয়ন করার কথা বলছে, যাতে পণ্য বিক্রি করতে হলে তা আগে যাচাই করার ব্যবস্থা থাকে। এর ফলে চোরেরা সহজে চোরাই পণ্য কিংবা নকল পণ্য অনলাইনে বিক্রি করতে পারবে না।
টার্গেটের সিইও ব্রায়ান করনেল বলেন, সমস্যা থাকার পরও তাঁরা তাঁদের স্টোর খোলা রাখবেন। এই কোম্পানির ১ হাজার ৯০০ স্টোর রয়েছে, যেগুলোর বেশির ভাগই শহরতলীতে অবস্থিত। এ ছাড়া নিউইয়র্ক ও সান ফ্রান্সিসকোর মতো শহরেও তাঁদের দোকান রয়েছে।