ট্যানারিমালিকেরা গতবারের চেয়ে এবারের ঈদে বেশি ঋণ চান

এবারের কোরবানির ঈদে পশুর চামড়া ক্রয় ও সংরক্ষণে গতবারের চেয়ে বেশি ঋণ চেয়েছেন ট্যানারিশিল্পের মালিকেরা। তাঁরা বলেছেন, কোরবানির পশুর চামড়া কিনতে যে টাকা ঋণ দেওয়া হয়, তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। পবিত্র ঈদুল আজহায় দেশে প্রায় এক কোটি পশু কোরবানি হয়। এই চামড়ার বাজারমূল্য প্রায় ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।

চামড়াশিল্প খাতের উন্নয়নে সুপারিশ প্রদান ও কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের লক্ষ্যে গঠিত টাস্কফোর্সের সপ্তম সভায় ট্যানারি শিল্পের মালিকেরা এসব কথা বলেন। রাজধানীর মতিঝিলে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে আজ রোববার এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনের সভাপতিত্বে টাস্কফোর্সের সভায় প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান; বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম; শিল্পসচিব জাকিয়া সুলতানা; বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সভাপতি মো. শাহীন আহমেদ; বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএলএলএফইএ) চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

জানা গেছে, গত বছর কোরবানির ঈদে পশুর কাঁচা চামড়া ক্রয় ও সংরক্ষণে ব্যবসায়ীরা অন্তত ৫০০ কোটি টাকা ঋণ চেয়েছিলেন। তবে ব্যাংকগুলো দিয়েছে এর অর্ধেক, মানে ২৫৯ কোটি টাকা, যা ২০২২ সালের তুলনায় ১৮৪ কোটি টাকা কম। ওই বছর ব্যাংকগুলো ৪৪৩ কোটি টাকার ঋণ দিয়েছিল।

শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেন, কোরবানির ঈদ সামনে রেখে স্বল্পমেয়াদি ও চামড়াশিল্প খাতের সার্বিক উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি করণীয় নির্ধারণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নীতিগত সহযোগিতা প্রদান করা হবে। তিনি আরও বলেন, চামড়াশিল্পে সংরক্ষণ সুবিধা বাড়াতে হবে, যাতে চামড়া নষ্ট না হয়। চামড়া ব্যবসায়ী ও পাইকারেরা যাতে পুঁজির সমস্যায় না পড়েন ও সহজ শর্তে ঋণ পান, সে বিষয়েও পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

সভায় অন্যান্য বছরের মতো এবারও পবিত্র ঈদুল আজহায় কোরবানির চামড়ার মূল্য নির্ধারণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগারের (সিইটিপি) পরিশোধন ক্ষমতার যথাযথ ব্যবহারের জন্য কোরবানি–পরবর্তী সাত দিন ঢাকার বাইরে থেকে কোরবানির পশুর চামড়া যাতে ঢাকায় প্রবেশ করতে না পারে, সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ারও সিদ্ধান্ত হয়েছে।

চামড়া সঠিকভাবে ছাড়ানো, সংগ্রহ ও সংরক্ষণের নিমিত্ত বিজ্ঞাপন আকারে বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচারের ব্যবস্থা করা; স্থানীয়ভাবে চামড়া সংগ্রহ ও পর্যাপ্ত লবণ দিয়ে চামড়া সংরক্ষণের জন্য কৌশলগত স্থানে অস্থায়ী সংরক্ষণাগার নির্মাণ; কোরবানির পশুর চামড়া পাচার রোধ এবং চামড়া সংগ্রহ ও পরিবহন কার্যক্রমে কোনো প্রকার চাঁদাবাজি, বিশৃঙ্খলা বা বাধার সৃষ্টি না হয় সে জন্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া চামড়া নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ গণমাধ্যমে যাতে কোনো গুজব না ছড়ায়, সেদিকেও নজর রাখা হবে।

এদিকে জানতে চাইলে বিটিএর সভাপতি মো. শাহীন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘কোরবানির আগে যে ঋণ দেওয়া হয়, সেটি অপ্রতুল। শিল্পমন্ত্রী আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন, পর্যাপ্ত ঋণ দিতে মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দেবে।’

সভায় উপস্থিত বিএফএলএলএফইএর চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ট্যানারিমালিকদের ৩১ মের মধ্যে কিস্তি পরিশোধ করে হেমায়েতপুরের প্লট নিবন্ধনের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে বিসিক। না হলে ট্যানারিমালিকদের বকেয়া কিস্তির ওপর ১০ শতাংশ হারে সুদ দিতে হবে। আমরা এটাকে শিথিল করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছি।’ তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন ট্যানারিমালিকেরা বছরের পর বছর ধরে লোকসান করছেন। এমন পরিস্থিতিতে ট্যানারিমালিকদের ঋণ দীর্ঘমেয়াদি করে দেওয়া দরকার।