সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের(সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের(সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান

দেশের যত ধরনের ক্ষতি করা যায়, সব করেই টাকা পাচার হয়েছে: মোস্তাফিজুর রহমান

বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিভিন্ন মেগা প্রকল্প থেকে দুর্নীতি করার মাধ্যমে অর্জিত যে পরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে, তার বোঝা পরবর্তী কয়েক প্রজন্মকে তাদের ঘাড়ে বহন করতে হতে পারে। দেশের যত ধরনের ক্ষতি করা যায়, তার সব কিছু করেই তারা (সাবেক সরকারের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা) অর্থ বাইরে (পাচার) নিয়ে গেছেন।

আজ সোমবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে অবস্থিত এনইসি সম্মেলনকক্ষে অর্থনৈতিক পরিস্থিতিবিষয়ক শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথাগুলো বলেন। তিনি এই কমিটির অন্যতম সদস্য। সংবাদ সম্মেলনে কমিটির সব সদস্য সংক্ষেপে তাঁদের মতামত জানান।

শ্বেতপত্র প্রণয়নে কিছু নির্বাচিত মেগা বা বড় প্রকল্প এবং অর্থ পাচার নিয়ে কাজ করেছেন মোস্তাফিজুর রহমান। সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, দেশের জন্য মেগা প্রকল্পের প্রয়োজন আছে। কিন্তু অনেক মেগা প্রকল্প থেকে দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে। এভাবে যে পরিমাণ টাকা পাচার হয়েছে, তার দায় কয়েক প্রজন্মকে বহন করতে হতে পারে।

শ্বেতপত্র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে, ২০০৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ২৩ হাজার ৪০০ কোটি ডলার বিদেশে পাচার হয়েছে। বর্তমান বাজারদরে (প্রতি ডলারের দাম ১২০ টাকা ধরে) এর পরিমাণ ২৮ লাখ কোটি টাকা। এই হিসাবে প্রতিবছর গড়ে ১ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে।

দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের ধরনেও পরিবর্তন এসেছে বলে জানান মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, আগে দুর্নীতির অর্থের বড় অংশ দেশের অভ্যন্তরে ছায়া অর্থনীতিতে (শ্যাডো ইকোনমি) থাকত, অর্থাৎ দুর্নীতির টাকা দেশেই বিনিয়োগ হয়েছে। এতে সরকার হয়তো রাজস্ব পায়নি কিংবা মূলধারার অর্থনীতিতে ওই অর্থ আসেনি; কিন্তু তা কর্মসংস্থানে অবদান রেখেছে। পরে দেখা গেছে, দুর্নীতির অর্থের বড় একটি অংশ দেশের বাইরে চলে গেছে।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘যতটা দুর্নীতি হয়েছে, তার পুরো অর্থ যে বাইরে (পাচার) নিয়ে গেছে এমন নয়। শ্যাডো ইকোনমি কিন্তু এখনো আছে। ধরুন, দুর্নীতি করে যদি ১০০ টাকা বানায়; এর হয়তো ৬০ টাকা দেশের বাইরে গেছে, আর ৪০ টাকা এখনো দেশের অর্থনীতির ভেতরে আছে।’

অন্যদিকে দুর্নীতির কারণে কিছু অর্থ দেশেই আসেনি বলে মনে করেন সিডিপির এই সম্মাননীয় ফেলো। তিনি বলেন, আগে মনে করা হতো হুন্ডি-হাওলার মাধ্যমে প্রবাসী আয়ের (রেমিট্যান্স) বিপরীতে বেশি দুর্নীতি (পাচার) হচ্ছে। কিন্তু পরে দেখা গেল, আমদানি-রপ্তানির আড়ালে দুর্নীতি হয়।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, হুন্ডি-হাওলাতে মুদ্রার বিনিময় হার বেশি থাকে। তবে এ ধরনের দুর্নীতিতে জড়িত ব্যক্তিরা সরকারের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক বিনিময় হারে (আমদানির জন্য) ডলার কিনেছেন। এরপর ৫০ ডলারের পণ্য আমদানি করে তার মূল্য ১৫০ ডলার দেখিয়ে বাকি ১০০ ডলার দেশের বাইরে পাঠিয়ে দিয়েছেন। সুতরাং দেশের যত ধরনের ক্ষতি করা যায়, সবটা করেই কিন্তু টাকাটা বাইরে গেছে।