খরচ যতই হোক, এজেন্ট কমিশন সবার সমান

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

দেশে বিকাশ, রকেট, নগদ ও উপায়ের মতো মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠানগুলো এখন বেশ জনপ্রিয়। একজন ব্যক্তির একাধিক প্রতিষ্ঠানের সেবা নিতেও কোনো বাধা নেই। এর ফলে এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোয় নিবন্ধিত গ্রাহক বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৫ কোটি। আর এই সেবা দিতে সারা দেশে কাজ করছে প্রায় ১২ লাখ এজেন্ট।

এমএফএস সেবার এজেন্টদের বেশির ভাগই আবার একাধিক প্রতিষ্ঠানের এজেন্ট। এজেন্টদের কেউ শুধু মোবাইল ব্যাংকিং সেবার ব্যবসা করছে। আবার কেউ অন্য ব্যবসার পাশাপাশি এই ব্যবসায় যুক্ত। ফলে এই সেবার মাধ্যমে বড় একটা জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে।

প্রতিষ্ঠানভেদে গ্রাহকসেবার মাশুল বা খরচ ভিন্ন। অন্যতম সেবাগুলো হচ্ছে—টাকা পাঠানো, টাকা উত্তোলন, বিল জমা দেওয়া প্রভৃতি। প্রতিষ্ঠানগুলো খরচ কমিয়ে গ্রাহক আকর্ষণের চেষ্টা করছে। তবে সেবার ক্ষেত্রে এজেন্ট কমিশন সবারই সমান। বরং কেউ কেউ লক্ষ্য পূরণ করলে এজেন্টদের বাড়তি প্রণোদনাও দিচ্ছে। ফলে যেসব প্রতিষ্ঠানের সেবার খরচ কম, তারা এজেন্টদের অন্যদের সমান মাশুল দেওয়ায় তাদের ব্যবসার মডেল নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

অবশ্য মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠানগুলো এখন বেশ জনপ্রিয়। একজন ব্যক্তির একাধিক প্রতিষ্ঠানের সেবা নিতেও কোনো বাধা নেই। এর ফলে এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোয় নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে এখন বড় অঙ্কের টাকা জমা পড়ছে। পুরো খাতে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা জমা রেখেছেন গ্রাহকেরা, যা থেকে যথেষ্ট পরিমাণে সুদ পাচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলো। কেউ কেউ অবশ্য বছর শেষে জমা টাকার ওপর গ্রাহকদেরও সুদ দিচ্ছে।

কার কত খরচ ও এজেন্ট কমিশন

মোবাইলে আর্থিক সেবা নিতে গ্রাহকের সবচেয়ে বড় খরচ হয় টাকা উত্তোলনে। দেশের সবচেয়ে বড় এমএফএস সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বিকাশের গ্রাহকদের এজেন্ট থেকে এক হাজার টাকা উত্তোলনে ১৮ টাকা ৫০ পয়সা খরচ দিতে হয়। অবশ্য নির্দিষ্ট একটি এজেন্ট থেকে (এর নাম দেওয়া হয়েছে প্রিয় এজেন্ট ) মাসে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা উত্তোলন করলে ১৪ টাকা ৯০ পয়সা খরচের সুযোগ দিয়েছে বিকাশ। এই খরচ থেকে এজেন্টদের প্রতি এক হাজার টাকা উত্তোলনে ৪ টাকা ১০ পয়সা কমিশন দেয় প্রতিষ্ঠানটি।

নগদের গ্রাহকদের ইউএসএসডি ব্যবহার করে এক হাজার টাকা উত্তোলনে খরচ হচ্ছে ১৪ টাকা ৯৪ পয়সা এবং অ্যাপস ব্যবহার করে এক হাজার টাকা উত্তোলনের খরচ ১১ টাকা ৪৯ পয়সা। নগদও প্রতি হাজার টাকা উত্তোলনে এজেন্টদের দেয় ৪ টাকা ১০ পয়সা করে। এজেন্টদের পাশাপাশি সারা দেশে নগদের পরিবেশকেরা পাচ্ছেন অফিস ভাড়া ও কর্মীদের বেতন।

রকেট ব্যবহারকারীদের এজেন্ট থেকে প্রতি হাজার টাকা উত্তোলনে খরচ ১৬ টাকা ৭০ পয়সা। প্রতি হাজারের জন্য এজেন্টরা পায় ৪ টাকা ১০ পয়সা।

উপায় ব্যবহারকারীদের প্রতি হাজার টাকা উত্তোলনে ১৪ টাকা খরচ হলেও এজেন্টরা পায় ৪ টাকা ১০ পয়সা।

টাকা জমার ক্ষেত্রে গ্রাহকদের কোনো খরচ দিতে হয় না। তবে এজেন্টরা ঠিকই ৪ টাকা ১০ পয়সা করে কমিশন পান। ফলে এই ব্যবসা করে এজেন্টদের অনেকেই এখন ভালো করছেন।

ঢাকার কারওয়ান বাজারের আবদুল খালেক স্টোর একসঙ্গে বিকাশ, রকেট ও নগদের এজেন্ট। প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী আবদুল খালেক খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘তিন প্রতিষ্ঠানের খরচ তিন রকম। তবে আমার কমিশন সব ক্ষেত্রে সমান। এতে কোনো কম বেশি নাই।’

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, মোবাইল ব্যাংকিং করে কমিশন বাবদ এমন একজন এজেন্ট খরচ বাদে প্রতি মাসে গড়ে ১৬ হাজার ৩৭০ টাকা আয় করে। ২১৮টি মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের ওপর সমীক্ষা চালিয়ে এই চিত্র পেয়েছে বিবিএস।

গ্রাহক ও লেনদেন কত

দেশে দিন দিন এমএফএস সেবার গ্রাহক, এজেন্ট ও লেনদেন—সবই বাড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত মে মাস পর্যন্ত দেশে এমএফএস সেবার গ্রাহক নিবন্ধন হয়েছে ১১ কোটি ২৬ লাখ। ওই সময়ে এজেন্ট ছিল ১১ লাখ ৮৮ হাজার জন। আর মে মাসে এসব সেবায় লেনদেন হয়েছে ৬৪ হাজার ৯৪৬ কোটি টাকা। তবে এই হিসাবে নগদের তথ্য নেই।

বর্তমানে বিকাশ, রকেট, নগদ ও উপায় ছাড়াও এমক্যাশ, ট্যাপ, মাই ক্যাশ, টেলিক্যাশ, ট্যাপ এন পে, ওকে ওয়ালেট, ইসলামিক ওয়ালেট এমএফএস সেবা দিচ্ছে। ২০১১ সালে সেবাটি প্রথম শুরু করে রকেট, যা আগে ডাচ্‌–বাংলা মোবাইল ব্যাংকিং নামে পরিচিত ছিল।