গৌতম আদানি ও মুকেশ আম্বানি
গৌতম আদানি ও মুকেশ আম্বানি

ফোর্বসের তালিকা

ভারতে এখন ২০০ জন শতকোটিপতি

ভারতের শেয়ারবাজারে চাঙাভাবের বদৌলতে দেশটিতে শতকোটিপতি বা বিলিয়নিয়ারের সংখ্যা বেড়েছে। ২০২৪ সালের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ফোর্বস ম্যাগাজিনের তৈরি ধনীতম ব্যক্তিদের তালিকায় ২০০ জন ভারতীয় স্থান পেয়েছেন। আগের বছরে অর্থাৎ ২০২৩ সালে সংখ্যাটি ছিল ১৬৯। এই ধনীদের সম্মিলিত সম্পদমূল্য প্রায় এক ট্রিলিয়ন বা এক লাখ কোটি ডলারে উঠেছে।

এবারও যথারীতি ভারতের শীর্ষ ধনীর আসন ধরে রেখেছেন মুকেশ আম্বানি। তিনিই প্রথম ভারতীয় ও এশীয় নাগরিক, যাঁর নিট সম্পদমূল্য ১০০ বিলিয়ন বা ১০ হাজার কোটি ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করেছে। বিভিন্ন খাতে তাঁর ব্যবসার সম্প্রসারণ হচ্ছে। সম্প্রতি ছোট ছেলে অনন্ত আম্বানির বিয়ের অনুষ্ঠানে মার্ক জাকারবার্গ, বিল গেটস ও ইভানকা ট্রাম্পের মতো ধনীদের ভারতে নিয়ে এসে তাক লাগিয়ে দেন তিনি।

তবে আর্থিক (ডলারভিত্তিক) মূল্যের দিক থেকে চলতি বছর ভারতে সবচেয়ে বেশি সম্পদমূল্য বেড়েছে গৌতম আদানির। এ বছর আদানির সম্পদমূল্য বেড়েছে ৩৬ দশমিক ৮ বা ৩ হাজার ৬৮০ বিলিয়ন ডলার। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের শর্ট সেলার হিনডেনবার্গ রিসার্চ অভিযোগ তোলে, আদানি গোষ্ঠী জালিয়াতির মাধ্যমে শেয়ারের মূল্য বৃদ্ধি করছে। তবে এরপর ঋণের বোঝা কমিয়ে এবং গুরুত্বপূর্ণ বা নামকরা বিনিয়োগকারীদের ধরে রেখে অনেকটাই ঘুরে দাঁড়িয়েছেন গৌতম আদানি। ফলে তিনি আবার বিশ্বের শীর্ষ ২০ ধনীর তালিকায় ফিরে আসেন এবং ভারতীয়দের মধ্যে দ্বিতীয় হন। ৩৬ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ নিয়ে তৃতীয় স্থানে আছেন শিব নাদার।

ভারতের শীর্ষ নারী ধনীর তকমা এখনো ধরে রেখেছেন জিন্দাল স্টিল অ্যান্ড পাওয়ার লিমিটেডের চেয়ারম্যান সাবিত্রী জিন্দাল। চলতি বছর সম্পদমূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় তিনি এখন সম্মিলিতভাবে ভারতের চতুর্থ শীর্ষ ধনী; ২০২৩ সালে ছিলেন ষষ্ঠ শীর্ষ ধনী। তাঁর সম্পদমূল্য ৩৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার।

সামগ্রিকভাবে দেখা যাচ্ছে, ভারতের ২০০ শতকোটিপতির মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশেরই সম্পদমূল্য গত বছরের তুলনায় এবার বেড়েছে। এর মধ্যে অন্তত এক ডজন শতকোটিপতির সম্পদমূল্য দ্বিগুণ হয়েছে। তাঁদের মধ্যে আছেন আবাসন খাতের বৃহৎ ব্যবসায়ী কুশল পাল সিং। ভারতের আবাসন খাতে চাঙাভাব থাকার কারণে কুশলের আবাসন কোম্পানি ডিএলএফের সম্পদমূল্য বেড়ে ২০ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলারে উঠেছে। বদৌলতে তিনি বিশ্বের শতকোটিপতিদের তালিকায় ৯২তম স্থান পেয়েছেন। যদিও ২০০৮ সালে তিনি ছিলেন বিশ্বের ৮ম শীর্ষ ধনী ও তাঁর সম্পদমূল্য ছিল ৪০ বিলিয়ন ডলার।

এবার দেখে নেওয়া যাক, চলতি বছরে কারা প্রথমবারের মতো ফোর্বস–এর শতকোটিপতি তালিকায় স্থান পেয়েছেন। তাঁদের মধ্যে আছেন ভারতের অন্যতম শীর্ষ কার্ডিয়াক সার্জন ও স্বাস্থ্যসেবা খাতের উদ্যোক্তা নরেশ ত্রেহান। তিনি উত্তর ভারতে মেদান্ত চেইন অব হসপিটালস পরিচালনা করেন। এরপর আছেন কায়েনস টেকনোলজির প্রতিষ্ঠাতা রমেশ কুনহিকান্নান। গত বছরের আগস্ট মাসে ভারতের যে নভোযান চাঁদে পদার্পণ করেছিল, সেটির ইলেকট্রনিক সরবরাহ করেছে এই কোম্পানি। ভারতের সফল চন্দ্রাভিযানের সঙ্গে এই কোম্পানিও ব্যবসাসফল হয়েছে। ফলে রমেশ শতকোটিপতিদের তালিকায় উঠে এসেছেন।

এই প্রথম শতকোটিপতিদের তালিকায় ভারতের আরও যাঁরা স্থাপন পেয়েছেন তাঁরা হলেন মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক খুচরা বিক্রয় প্রতিষ্ঠান ল্যান্ডমার্ক গ্রুপের রেনুকা জাগতিয়ানি। তাঁর স্বামী মিকি জাগতিয়ানিসহ তিনজন ভারতীয় শতকোটিপতি গত বছর মারা গেছেন। অন্য দুজন হলেন মাহিন্দ্রা অ্যান্ড মাহিন্দ্রার ইমেরিটাস চেয়ারম্যান কেশব মাহিন্দ্রা ও রং কোম্পানি এশিয়ান পেইন্টসের আশ্বিন দানি।

এবার তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন চারজন শতকোটিপতি। এর মধ্যে রয়েছেন শিক্ষাবিষয়ক উদ্যোক্তা বাইজ রবীন্দ্রন। মূলত বাইজুসে নানা ধরনের সংকটের জেরে রবীন্দ্রন ধনীদের তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন। রোহিকা মিস্ত্রিও এ বছর বাদ পড়েছেন। কারণ, তাঁর প্রয়াত স্বামী সাইরাস মিস্ত্রির কিছু সম্পদ টাটা সন্সের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এই সম্পদের উত্তরাধিকার তাঁদের দুই ছেলে ফিরোজ মিস্ত্রি ও জেহান মিস্ত্রি, যাঁরা আইরিশ পাসপোর্টধারী। তাই ভারতীয় শতকোটিপতিদের সঙ্গে তাঁরা স্থান পাননি।

ভারতের শীর্ষ ১০ ধনী

মুকেশ আম্বানি, ১১৬ বিলিয়ন ডলার

গৌতম আদানি, ৮৪ বিলিয়ন ডলার

শিব নাদার, ৩৬.৯ বিলিয়ন ডলার

সাবিত্রী জিন্দাল, ৩৩.৫ বিলিয়ন ডলার

দিলীপ সাংভি, ২৬.৭ বিলিয়ন ডলার

সাইরাস পুনাওয়ালা, ২১.৩ বিলিয়ন ডলার

কুশল পাল সিংহ, ২০.৯ বিলিয়ন ডলার

কুমার বিরলা, ১৯.৭ বিলিয়ন ডলার

রাধাকৃষ্ণান দামিনি, ১৭.৬ বিলিয়ন ডলার

লক্ষ্মী মিত্তাল, ১৬.৪ বিলিয়ন ডলার ‍