আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) যে ঋণসহায়তা দিয়েছে, তা পরিমাণের দিক থেকে তেমন বড় কিছু নয়। দেশে প্রতি মাসেই প্রায় ৬০০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি হয়। সেই হিসাবে ছয় মাসে আমদানি হবে ৩ হাজার ৬০০ কোটি ডলারের পণ্য। আর ছয় মাসে আইএমএফের কিস্তি আসার কথা ৫০ কোটি ডলারের মতো।
একই সঙ্গে ভবিষ্যতে আমাদের ঋণ পরিশোধের দায়ও বাড়বে। সুতরাং আমদানির চাহিদা ও অন্যান্য ব্যয়ের তুলনায় আইএমএফের ঋণ তেমন বড় কিছু নয়। এটাও ঠিক, আইএমএফের কারণে বিশ্বব্যাংকসহ অন্যান্য সহযোগী সংস্থাগুলো ঋণসহায়তা দেওয়ার জন্য একটা ইতিবাচক বার্তা পাবে। তবে এসব বৈদেশিক সহায়তা আমাদের জন্য তখনই স্বস্তি আনবে, যখন আমরা অর্থনীতির প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো বাস্তবায়ন করতে পারব।
আমাদের অর্থনীতির প্রধান জায়গাগুলো যেমন, অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা, নীতিমালা, নীতির বাস্তবায়ন ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা ইত্যাদি এখনো শক্তিশালী অবস্থানে নেই। এ কারণে আমরা সাম্প্রতিক সংকট দেখছি। একসঙ্গে টাকার এত অবমূল্যায়নের প্রয়োজন ছিল না। আগে থেকেই একটু একটু করে অবমূল্যায়নের সুযোগ ছিল। অর্থনীতিবিদেরা চার-পাঁচ বছর ধরে এ পরামর্শই দিয়ে আসছিলেন। কিন্তু সেটি কর্ণপাত করা হয়নি। এ কারণে হুট করে টাকার এতটা অবমূল্যায়ন হয়েছে। আইএমএফ–ও অনেক সংস্কারের শর্ত দিয়েছে। ফলে এসব সংস্কার করা গেলে আইএমএফসহ বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে নেওয়া বিদেশি ঋণ প্রকৃত অর্থে কাজে লাগাতে পারব।
ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে বিভিন্নভাবে তাদের সুযোগ দেওয়া হয়। কখনো ঋণ অবলোপন করে, কোনো সময় ঋণ পুনর্গঠন করে, আবার কখনো ঋণখেলাপির সংজ্ঞা পাল্টিয়ে। অন্যদিকে রপ্তানি ও আমদানি উভয় ক্ষেত্রে অর্থ পাচার হচ্ছে। এসব বিষয়ও ডলার–সংকটের পেছনে বড় কারণ। অর্থ পাচার বন্ধের উদ্যোগ না নিয়ে অর্থ পাচারকারীদের উল্টো বার্তা দেওয়া হচ্ছে। দুর্নীতির টাকা বিতরণ করা হচ্ছে দেশে, আর প্রবাসী আয়ের বৈদেশিক মুদ্রা থেকে যাচ্ছে বিদেশে। এই দুষ্টচক্র থেকে বের হতে জড়িতদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিতে হবে।
যেসব কারণে আমাদের অর্থনীতিতে সংকট চলছে, তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধসক্ষমতা বাড়াতে হবে। ২০১২ সালেও আইএমএফ অনেক পরামর্শ দিয়েছিল, যেগুলো এখন পুনরায় বলছে। এগুলো যদি আমরা নিজেরাই অনুধাবন করে বাস্তবায়ন না করি তাহলে কাজের কাজ কিছু হবে না। সংস্কারের বিষয়ে আমাদের শক্ত অবস্থান নিতে হবে। এটা শুধু অর্থনীতির বিষয় না। এখানে রাজনৈতিক অর্থনীতির বিষয়ও আছে। ঋণখেলাপি, করখেলাপি, টাকা পাচারকারীর দুষ্টচক্র ভাঙতে হবে অর্থনীতির স্বার্থে।