বিস্ফোরণের প্রায় পাঁচ মাস পর চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপো লিমিটেডের আমদানি-রপ্তানি পণ্য ব্যবস্থাপনা পুরোদমে শুরু হয়েছে। কাস্টমস কর্তৃপক্ষ অনুমোদন দেওয়ার পর গত সপ্তাহ থেকে পুরোদমে কার্যক্রম শুরু করে ডিপো কর্তৃপক্ষ।
গত ৪ জুন রাতে বিএম ডিপোতে আগুন থেকে ভয়াবহ বিস্ফোরণ হয়। এতে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যসহ ৫১ ব্যক্তি নিহত হন, আহত হন দুই শতাধিক। বিস্ফোরণে ডিপোর একাংশ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। দুর্ঘটনায় রপ্তানি পণ্যবাহী ১৫৪ কনটেইনার ও আমদানি পণ্যবাহী দুটি কনটেইনার ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
দুর্ঘটনার পর ডিপো ব্যবহার করে আমদানি-রপ্তানি ও খালি কনটেইনার সংরক্ষণ কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। দুর্ঘটনার পর ডিপো পরিচালনাকারীরা স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে সংস্কার কার্যক্রম শুরু করে। এরপর গত ২২ আগস্ট শুধু খালি কনটেইনার সংরক্ষণের অনুমোদন দেয় কাস্টমস। গত ২৫ অক্টোবর ৯ শর্তে পোশাকপণ্য রপ্তানি কার্যক্রম ব্যবস্থাপনার অনুমোদন দেওয়া হয়। শর্ত পরিপালন করায় গত ৭ নভেম্বর আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম পুরোদমে শুরুর অনুমোদন পায় এই ডিপো।
বিএম ডিপো স্মাট গ্রুপের প্রতিষ্ঠান। জানতে চাইলে স্মার্ট গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক ক্যাপ্টেন মঈনুল আহসান প্রথম আলোকে বলেন, কাস্টমস যেসব শর্ত দিয়েছে, তা পরিপালন করা হয়েছে। গত সপ্তাহ থেকে কার্যক্রম পুরোদমে শুরু হয়েছে।
কাস্টমস কর্তৃপক্ষের অনুমোদনসংক্রান্ত চিঠি অনুযায়ী, বন্দর দিয়ে আমদানি হওয়া যে ৩৮ ধরনের পণ্য ডিপোতে খালাস বাধ্যতামূলক, সেগুলো ব্যবস্থাপনা করতে পারবে এই ডিপো। একইভাবে লাইসেন্স অনুযায়ী রপ্তানি পণ্যও ব্যবস্থাপনা করতে পারবে। তবে বিএম ডিপো রাসায়নিক পণ্য ব্যবস্থাপনার জন্য অনুমোদন নেয়নি বলে জানা গেছে। অর্থাৎ রাসায়নিক পণ্য ছাড়া অন্যান্য পণ্য ব্যবস্থাপনা করতে পারবে এই ডিপো।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অনুমতি পাওয়া চট্টগ্রামের ২০টি কনটেইনার ডিপোর একটি বিএম ডিপো।
২০১১ সালে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের দুটি প্রতিষ্ঠানের ১৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগে বিএম ডিপো চালু হয়। এই ডিপোর চেয়ারম্যান নেদারল্যান্ডসের নাগরিক রবার্ট প্রঙ্ক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান। পরিচালক হিসেবে আছেন স্মার্ট জিনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুজিবুর রহমান।
কনটেইনার ডিপোগুলোর মূল কাজ রপ্তানি পণ্য ব্যবস্থাপনা। কারখানা থেকে রপ্তানি পণ্য প্রথমে কাভার্ড ভ্যানে করে বেসরকারি এসব ডিপোতে পাঠানো হয়। কাভার্ড ভ্যান থেকে রপ্তানি পণ্য নামিয়ে রাখা হয় ডিপোর ছাউনিতে। এরপর কনটেইনারে বোঝাই করে বন্দরে নিয়ে জাহাজে তুলে দেওয়া হয়।
চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে রপ্তানি হওয়া পণ্যের ৯০ শতাংশ ব্যবস্থাপনা করা হয় এসব ডিপোতে। আমদানি পণ্যের এক-চতুর্থাংশও বন্দর থেকে এসব ডিপোতে এনে খালাস করা হয়। এর বাইরে খালি কনটেইনার সংরক্ষণ করাও ডিপোর কাজ।