রাজধানীর বেইলি রোডে গ্রিন কোজি কটেজ নামের একটি সাততলা ভবনে আগুন লেগে ৪৬ জনের মৃত্যুর পর সেখানকার ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে রয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাতের ওই ঘটনার পর ওই এলাকার কিছু দোকানপাট খুলতে শুরু করেছে, তবে বন্ধ রয়েছে রেস্তোরাঁগুলো। কয়েকটি রেস্তোরাঁ সিলগালা করেছে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা। সব মিলিয়ে বেইলি রোডে মানুষের আনাগোনা কম।
আজ মঙ্গলবার বেইলি রোড ঘুরে দেখা গেছে, পুড়ে যাওয়া ভবনের সামনে পথচারীরা ছবি তুলে চলে যাচ্ছেন। আশপাশে পুলিশি তৎপরতা রয়েছে। ব্যবসায়ীদের অনেকের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের মধ্যকার অস্বস্তি টের পাওয়া গেল। দেখা মেলেনি বেশির ভাগ রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীর। বেকারি পণ্য বিক্রি করে, এমন কিছু দোকান খোলা পাওয়া গেছে। তবে শপিং মলগুলোতে পোশাকের দোকান খুলে বসে ছিলেন কেউ কেউ। কিন্তু ক্রেতা একেবারে ছিল না বললেই চলে।
পুড়ে যাওয়া ভবন গ্রিন কোজি কটেজের বিপরীতে অবস্থিত ক্যাপিটাল কনফেকশনারির ব্যবস্থাপক সাকিব ব্যাপারী প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনার পর থেকে আতঙ্কে লোকজন দোকানে আসছেন না। আমরা দোকান খোলার অনুমতি পেলেও ক্রেতা না আসায় বেচাকেনা একেবারে নেই বললেই চলে। এই ঘটনা ঢাকা শহরের রেস্তোরাঁ ও খাবারের দোকানের ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
বেইলি রোডের রেস্তোরাঁ ব্যবসার ওপরই অন্য ব্যবসা অনেকটা নির্ভর করে বলে মনে করেন সায়মা ফ্যাশনের বেইলি রোড শাখার ব্যবস্থাপক মো. দোলন। বিষয়টি ব্যাখ্যা করে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, এই রোডে মানুষ মূলত খাওয়াদাওয়া করার জন্য আসেন। রাজধানীর অন্য যেকোনো এলাকার তুলনায় এই জায়গা গোছানো এবং ঐতিহ্যবাহী হওয়ায় এখানে সারা বছরই ক্রেতা থাকেন। শপিং মল ও অন্য দোকানপাটের ব্যবসা মূলত এই রেস্তোরাঁ ব্যবসার ওপরই নির্ভর করে।
এই বিক্রেতার আশা, পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি হবে। অন্যথায় বেইলি রোডের সব ব্যবসায়ীই বড় ধরনের ক্ষতির মধ্যে পড়বেন বলে ধারণা করেন তিনি।
বেইলি রোডে আজই সিলগালা করা হয়েছে নবাবী ভোজ নামের একটি রেস্তোরাঁ। প্রতিষ্ঠানটির মালিক লাবণী হাসনা চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘ব্যবসার জন্য ১২টি সনদ থাকার পরও অগ্নিঝুঁকি এড়াতে আমাদের রেস্তোরাঁ বন্ধ করা হয়েছে। অথচ আমরা দীর্ঘদিন সুনামের সঙ্গে ব্যবসা করে আসছি। হঠাৎ রেস্তোরাঁ বন্ধ করায় আমাদের বড় লোকসানের মুখোমুখি হতে হবে।’
লাবণী হাসনা চৌধুরী আরও বলেন, ‘কী ধরনের ব্যবস্থা নিলে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া যাবে, তা জানিয়ে দেওয়া হলে বা সময় বেঁধে দিলে আমরা তা মানতে রাজি। কিন্তু কোনো একটি দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে এমন ঢালাওভাবে রেস্তোরাঁ বন্ধ ও হয়রানি বন্ধ করতে হবে।’
বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান প্রথম আলোকে বলেন, বেইলি রোডসহ পুরো ঢাকায় রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীদের হয়রানি বন্ধ করে দ্রুত ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে। এ ব্যাপারে সবারই দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করা প্রয়োজন।