বাজার নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত বৃহস্পতিবার ডিম, আলু ও দেশি পেঁয়াজের দাম বেঁধে দেয়। এরপর দাম তদারকিতে শুক্রবার থেকেই অভিযান শুরু করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। গতকাল শনিবার দুপুরে নিউমার্কেট কাঁচাবাজারের ডিমের আড়তে অভিযানের সময় ডিমের দাম ৫০ পয়সা বেশি রাখার অপরাধে একজন খুচরা ব্যবসায়ীকে ২ হাজার টাকা জরিমানা করেন ভোক্তা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
মেসার্স শাহ আলম ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী শাহ আলম নামের ওই ব্যবসায়ী জরিমানার অর্থ গুনেছেন ঠিকই, কিন্তু ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযানের পর প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলার সময় তাঁর কণ্ঠে ক্ষোভ চাপা থাকেনি। তাঁকে জরিমানা করা হয়েছে। কারণ, ওই বাজারেই আরেকজন দোকানি অভিযানের ঠিক আগে তাঁর চেয়ে ডিমের দাম কম দেখিয়ে একটি মূল্যতালিকা টানিয়ে রেখেছিলেন।
শাহ আলম বলেন, ‘আমার দোকানের যে মূল্যতালিকা টানানো ছিল, সেখানে আমি ডিমের ডজন লিখেছিলাম ১৫০ টাকা। সেই হিসাবে ডিমপ্রতি দাম পড়ে সাড়ে ১২ টাকা। কিন্তু আরেকজন দোকানদার অভিযান আসছে শুনে ডিমের দাম কমিয়ে মূল্যতালিকা টানান। দামের এই তফাত দেখে আমাকে দুই হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। কিন্তু উনি দাম কমিয়েছেন অভিযানের ভয়ে। আর আমি যে দাম লিখেছি, বাজারে প্রকৃত দাম সেটাই। কেন এই দাম, তার ব্যাখ্যাও আমি দিতে পারি।’
নিত্যপ্রয়োজনীয় নানা পণ্যের দাম বেশ অনেক দিন ধরে বাড়তে থাকার পর সরকার বৃহস্পতিবার শেষ পর্যন্ত তিনটি পণ্যের দাম বেঁধে দিয়েছে। এই তিনটি পণ্য হলো—ডিম, আলু ও দেশি পেঁয়াজ। তবে সরকারিভাবে নির্ধারিত দামে এসব পণ্য বিক্রি হচ্ছে না। বেঁধে দেওয়া ওই দাম কার্যকর করতেই জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বিভিন্ন বাজারে অভিযান চালাচ্ছে।
ডিমের দাম প্রতি ডজন ১৫০ টাকা রাখার ব্যাখ্যা দিয়ে নিউমার্কেট কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ী শাহ আলম বলেন, তিনি তেজগাঁও ডিমের আড়ত থেকে প্রতি ১০০ ডিম কিনেছেন প্রতিটি ১১ টাকা ৪০ পয়সা হিসাবে। পরে সাড়ে ছয় হাজার ডিম ভ্যানে করে নিয়ে দোকানে আনতে তাঁর খরচ হয়েছে আরও ৫০০ টাকা। সঙ্গে তাঁর নিজের পরিবহন খরচ ছিল ৩০০ টাকা।
‘ডিম নষ্ট থাকে, ভেঙে যায় সেই খরচও ধরতে হবে। সঙ্গে দোকানভাড়া, বিদ্যুৎ বিল ও ডিমের প্যাকেজিং খরচও আছে। সব মিলিয়ে ডিমপ্রতি খরচ আসেই ১২ টাকার মতো। এখন আমি এই ডিম ১২ টাকায় বিক্রি করব কীভাবে’, প্রশ্ন রাখেন তিনি।
শাহ আলম আরও বলেন, ‘একটা ডিমে যদি ৫০ পয়সা লাভ না করা যায়, তাহলে আমরা ব্যবসা করব কীভাবে। সরকার যে দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে, সেই দামে ডিম বিক্রি করতে গেলে লোকসান করতে হবে। পাইকারি বাজারে ডিমের দাম কমলে তখন কম রাখা সম্ভব। অন্যথায় ডিমের দাম কোনোভাবে কম রাখা সম্ভব নয়। সমস্যার গোড়ায় হাত না দিয়ে তারা বাজার অভিযানের নামে আমাদের হয়রানি করছে।’
এই দোকানির বক্তব্য, ‘তাঁরা আইনের লোক, আইনের কথা বলতেই পারেন। কিন্তু আমাকে টিকে থাকার জন্য সামান্য লাভ করার সুযোগ করে দিতে হবে। সরকার ১২ টাকা দাম বেঁধে দিয়েছে। এটা মেনে নিলাম। কিন্তু এই দামের মধ্যে ডিম বিক্রি করতে হলে ডিমের দাম পাইকারিতে ১১ টাকার মতো থাকতে হবে। ৫০ পয়সার জন্যই তো সমস্যা, এটা কমিয়ে আনা সম্ভব। অন্যথায় লোকসান হলে সংসার চালানোর জন্য সারা দিন যে পরিশ্রম করছি, সেটা বৃথা।’
শাহ আলম পরামর্শ দিলেন, সবচেয়ে ভালো হয় উৎপাদন খরচের দিকে নজর দিলে। সরকারের উচিত খুচরা বাজারে দাম বেঁধে দেওয়ার পাশাপাশি খামারি পর্যায়েও ডিমের দাম বেঁধে দেওয়া। খামার পর্যায়ে একটি ডিমের দাম হবে সাড়ে ১০ টাকা। খামার থেকে সেই দামে ডিম বাজারে আসছে কি না, সেটিও তদারক করা দরকার।
ভোক্তা অধিদপ্তর গত দুই দিনে সারা দেশে অভিযান চালিয়ে মেসার্স শাহ আলম ট্রেডার্সের মতো ২৩৪টি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করেছে। এসব প্রতিষ্ঠানকে মোট সাত লাখ টাকা জরিমানাও করেছেন কর্মকর্তারা। অধিদপ্তর জানিয়েছে, আলু, পেঁয়াজ, ডিমসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য এবং স্যালাইনের মূল্য স্থিতিশীল ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে বাজারে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।
ভোক্তা অধিকার রক্ষায় অধিদপ্তরের এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলে সরকারি সংস্থাটি জানিয়েছে।