পুলিশের জন্য অনুদানের টাকায় গাড়ি এনে সরকারকে বাড়তি খরচ দিতে হচ্ছে প্রায় ২৩০ কোটি টাকা। এসব গাড়ি খালাস করতে এখন শুল্ক–কর দিতে হবে। সে জন্য এ–সংক্রান্ত একটি প্রকল্পের সংশোধনী প্রস্তাব আগামীকাল মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে উঠছে।
জানা গেছে, জাপান সরকার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য অনুদান হিসেবে ৩৭টি গাড়ি দিয়েছে। এগুলোকে ‘বিশেষায়িত গাড়ি’ হিসেবে ধরে সেগুলো কিনতে অনুদান হিসেবে ৩৯ কোটি ৫৮ লাখ টাকা দেয় টোকিও। অবশ্য জাপান সরকার নিজেই গাড়ি কিনে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়। তবে অনুদানের অর্থের পরিমাণ বিবেচনায় নিয়ে গাড়ি আনার জন্য বাংলাদেশ সরকার বাড়তি আনুষঙ্গিক খরচ যুক্ত করে ২০১৯ সালে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে।
কর্মকর্তারা বলছেন, প্রকল্পের শর্ত হলো, জাপান সরকার নিজেই ৩৭টি গাড়ি কিনে পাঠিয়ে দেবে। বাকি আনুষ্ঠানিকতা বাংলাদেশ সরকার করবে। যখন প্রকল্প পরিকল্পনা করা হয়, তখন ধরে নেওয়া হয় যে এসব গাড়ি ‘স্পেশাল পারপাস ভেহিকেল’ হিসেবে শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা যাবে। এ জন্য আনুষঙ্গিক খরচ ধরে ৭৯ কোটি ৬৬ লাখ টাকার একটি প্রকল্প নেওয়া হয়।
এই প্রকল্পের আওতায় ১২টি আর্মার্ড ভেহিকেল, ২০টি এসকর্ট ভেহিকেল এবং ৫টি ফ্লাডলাইট ভেহিকেল এসেছে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে আর্মার্ড ভেহিকেল ও এসকর্ট ভেহিকেল চট্টগ্রাম বন্দরে আসে। তখন চট্টগ্রাম কাস্টমস গাড়িগুলো আটকে দেয়। চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষের দাবি, এই গাড়িগুলো স্পেশাল পারপাস ভেহিকলের সংজ্ঞায় পড়ে না। এর আগে আসা পাঁচটি ফ্লাডলাইট ভেহিকেলকে ‘স্পেশাল পারপাস ভেহিকেল’ হিসেবে অনুমোদন দিয়েছিল কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। তাই নতুন আসা গাড়ি শুল্ক-কর দিয়ে খালাস করতে হবে।
কেন আটকানো হলো
জানা গেছে, ওই ১২টি আর্মার্ড গাড়ি ও ২০টি এসকর্ট গাড়ির শুল্ক-কর ওই গাড়ির দামের প্রায় ৮২৩ শতাংশ। এর মধ্যে ৫০০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আছে। অবশ্য মূল প্রকল্প ৩৯ কোটি টাকার মতো শুল্ক-কর বাবদ বরাদ্দ রাখা হয়েছিল। এখন এসব গাড়ি খালাস করতে বাড়তি ২২৯ কোটি ৭৪ লাখ টাকা লাগবে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে জানান, স্পেশাল পারপাস ভেহিকেলে ব্যক্তি বা পণ্য পরিবহন করা যায় না। এগুলো শুধু বিশেষ কাজে ব্যবহার করা হয়। যেমন তেল-গ্যাসের কূপ খননে বিশেষ গাড়ির ব্যবহার আছে। আবার দমকল বাহিনীর গাড়িও এই শ্রেণির মধ্যে পড়ে।
জাপান সরকারের দেওয়া অনুদানের ৩৯ কোটি ৫৯ লাখ টাকার গাড়ি আনতে গিয়ে এখন সরকারকে সোয়া দুই শ কোটি টাকার বেশি বাড়তি খরচ করতে হচ্ছে। বাংলাদেশ পুলিশ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট এই গাড়িগুলো ব্যবহার করবে।
এমন অবস্থায় এ–সংক্রান্ত প্রকল্পটি সংশোধন করে সব মিলিয়ে ৩০৯ কোটি টাকার খরচের প্রস্তাব মঙ্গলবার একনেকের সভায় তোলা হচ্ছে।
এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোশারফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, এই গাড়িগুলো পেলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখার লক্ষ্যে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা ও জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশের সক্ষমতা আরও বাড়বে।
মোশারফ হোসেন আরও বলেন, জাপান সরকার এসব গাড়িকে বিশেষায়িত গাড়ি হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এগুলোকে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেওয়ার জন্য আমরা এনবিআরের কাছে আবেদন করেছিলাম। কিন্তু তারা শুধু ফ্লাডলাইট ভেহিকেলকে ওই শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত করেছে। বাকি গাড়িগুলো শুল্ক-কর দিয়ে খালাস করতে হবে।
পরিকল্পনা কমিশনও অনেকটা নিরুপায় হয়ে বাড়তি খরচ অনুমোদন দিয়েছে। এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (ভৌত অবকাঠামো) মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান প্রথম আলোকে বলেন, ‘যেহেতু গাড়িগুলো চট্টগ্রাম বন্দরে চলে এসেছে, তাই প্রকল্পটির বাড়তি খরচ অনুমোদন দিয়ে একনেকে পাঠানো হচ্ছে। যদি গাড়ি না আসত, তাহলে হয়তো আমরা অনুমোদন দিতাম না। তবে গাড়িগুলো শুল্কমুক্ত সুবিধায় খালাস করা যাবে কি না, তা জেনেই প্রকল্পটি নেওয়া উচিত ছিল।’