ডোনার বা অর্থদাতাদের রীতিমতো বিপদে ফেলে দিয়েছেন জো বাইডেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রথম বিতর্কে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিপক্ষে যে পারফরম্যান্স করেছেন, সেটি কেবল তাঁর প্রচারণাকে ঝুঁকিতে ফেলেনি। তাঁর রাজনীতি যেমন এখন হুমকির মুখে, তেমনি এ বিতর্ক জো বাইডেনের জন্য একটি আর্থিক হুমকি হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে।
রিপাবলিকান ডোনাল্ড ট্রাম্পের হাতে এখন জো বাইডেনের তুলনায় বেশি নগদ অর্থ আছে। প্রতি মাসে দুই প্রেসিডেন্ট প্রার্থী যে পরিমাণ তহবিল সংগ্রহ করছেন, তাতে অনেকটা এগিয়ে রয়েছেন ট্রাম্প। বর্তমান প্রেসিডেন্টের পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে, যদি তাঁর ধনী অর্থদাতারা মনে করেন যে তাঁরা দৌড়ে হারতে থাকা ঘোড়ার ওপর বাজি ধরছেন।
রয়টার্স জানায়, পরিস্থিতি কিন্তু চলতি বছরের শুরুতে এমন ছিল না। চাঁদা তোলার ক্ষেত্রে জো বাইডেন অনেকটা এগিয়ে ছিলেন। একের পর এক আইনি ঝামেলা হাত–পা বেঁধে ফেলছিল ট্রাম্পের। অন্যদিকে বাইডেনের ঝানু প্রচারণা বাহিনী তখন ঠিক সেই কাজ করে চলছিলেন, এ ধরনের প্রচারণার ক্ষেত্রে যা করা দরকার—তহবিল সংগ্রহ।
ডেমোক্র্যাট দলের প্রচারকেরা তহবিল সংগ্রহে দারুণ সাফল্য পাচ্ছিলেন। অর্থ সংগ্রহ করে তাঁরা সেসব রাজ্যে একের পর এক প্রচারণা কার্যালয় খুলছিলেন, যেসব রাজ্যে জোর প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে মনে করা হচ্ছে। কিন্তু স্রোত হঠাৎ করে ঘুরে যায় গত বসন্তে। এপ্রিল মাসে সাবেক প্রেসিডেন্ট বর্তমান প্রেসিডেন্টের চেয়ে ২ কোটি ৫০ লাখ ডলার বেশি তহবিল সংগ্রহ করে ফেলেন।
এরপর মে মাসে পরিস্থিতি আরও সঙ্গিন হয় বাইডেনের জন্য। গত ৩০ মে ট্রাম্প নিউইয়র্কের একটি আদালতে ব্যবসার নথিপত্রে মিথ্যা তথ্য দেওয়ার ৩৪টি অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হন। ওই ঘটনা তাঁর জন্য শাপে বর হয়ে দেখা দেয়। ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনী অর্থভান্ডার রীতিমতো উপচে পড়তে শুরু করে। অনেকটা পিছিয়ে পড়েন জো বাইডেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের রিপাবলিকান ন্যাশনাল কমিটির সঙ্গে যৌথভাবে তহবিল সংগ্রহ কার্যক্রম মে মাসে ১৪ কোটি ১০ লাখ ডলার চাঁদা তুলেছিল। বিপরীতে জো বাইডেন তুলেছিলেন ৮ কোটি ৫০ লাখ ডলার। মজার বিষয় হলো, ট্রাম্পের তোলা চাঁদার একটা বড় অংশই মাসের শেষ দুই দিনে এসেছিল বলে তাঁর প্রচারণা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
মে মাসের শেষে ডোনাল্ড ট্রাম্পের হাতে থাকা নগদ অর্থের পরিমাণ ছিল ১১ কোটি ৭০ লাখ ডলার। এর বিপরীতে বাইডেনের হাতে ছিল ৮ কোটি ৪০ লাখ ডলার।
বাইডেন শিবির অবশ্য বলছে যে বিতর্কের পর ভালো চাঁদা আসছে। এটা ঠিক যে বড় যেকোনো টেলিভিশন অনুষ্ঠান প্রার্থীদের জন্য চাঁদা তুলতে সাহায্য করে। কারণ, ছোট চাঁদাদাতারা তখন এ ব্যাপারে মনোযোগ দেন। গণমানুষের কাছ থেকে আসা চাঁদা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। বাইডেনের তোলা ৪২ শতাংশ চাঁদা এসেছে যাঁরা ২০০ ডলারের কম দিয়েছেন, তাঁদের কাছ থেকে। ট্রাম্পের ক্ষেত্রে এই হার ৩১ শতাংশ।
সত্যিকার অর্থে নির্বাচন পরিস্থিতির মোড় ঘোরাতে পারেন তাঁরাই, যাঁরা বড় অঙ্কের চাঁদা দেন। চাঁদার পরিমাণ যেমন এখানে গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি গুরুত্বপূর্ণ যেসব অনুষ্ঠান তাঁরা আয়োজন করেন সেগুলো। তবে যে প্রার্থী হারতে বসেছেন বলে তাঁরা মনে করেন, সেই প্রার্থীকে তহবিল জোগাতে তাদের খুব একটা আগ্রহী হতে দেখা যায় না।
জুন মাসেও যদি সাবেক প্রেসিডেন্ট চাঁদা তোলার ক্ষেত্রে বর্তমান প্রেসিডেন্টের তুলনায় এগিয়ে থাকেন, তাহলে ডেমোক্র্যাটদের কাছে এটি হবে একটি ইঙ্গিত যে জো বাইডেনের প্রার্থিতা বড় ধরনের সংকটের মধ্যে রয়েছে।