বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, তিনটি উপাদানের ওপর ভিত্তি করে কর্তৃত্ববাদী শাসক তৈরি হয়। প্রথমত, মিথ্যা বয়ান; দ্বিতীয়ত, ভয়ের পরিবেশ এবং তৃতীয়ত, উন্নয়নের আচ্ছন্নতা। এই তিনটিই হলো কর্তৃত্ববাদী শাসকের মূল উপাদান।
আজ সোমবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে তিন দিনব্যাপী বে অব বেঙ্গল কনভার্সন বা বঙ্গোপসাগর সংলাপের সমাপনী দিনের আলোচনা সভার এক অধিবেশনে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এ কথা বলেন। এদিন দুপুরে আয়োজিত অধিবেশনে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য একক বক্তা ছিলেন। সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) তিন দিনব্যাপী এই সংলাপের আয়োজন করেছে।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকার কর্তৃক গঠিত অর্থনীতিসংক্রান্ত শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য আরও বলেন, ‘কয়েক মাস আগে আমরা দেখেছি, বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা কীভাবে দেড় দশকের কর্তৃত্ববাদী শাসককে ক্ষমতা থেকে নামিয়েছে। কর্তৃত্ববাদী শাসক ভিন্নমতের গোষ্ঠীকে দমন করে। সবকিছু নিজের কর্তৃত্বে রাখতে চায়। এমনকি গণমাধ্যম, সুশীল সমাজ ও বেসরকারি খাতের ব্যবসায়ী সমাজকে নিজেদের (কর্তৃত্ববাদী) সিস্টেমে অন্তর্ভুক্ত করে।’
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের মতে, ‘মিথ্যা শুরু হয় তথ্যের বিচ্যুতি দিয়ে। যেমন বিনিয়োগ, কর্মসংস্থানের ফোলানো–ফাঁপানো সংখ্যা দেখানো হয়। এর ধারাবাহিকতায় জিডিপি ও প্রবৃদ্ধিতে একই অবস্থা দেখানো হয়। এ ছাড়া কর্তৃত্ববাদী সরকার নিজেদের ধারাবাহিকতা রক্ষায় ভয়ের পরিবেশ তৈরি করে। যেখানে আপনি নিজের সামাজিক অবস্থান হারাবেন, নিজের পরিচয় হারিয়ে ফেলবেন, নিজের নিরাপত্তা হুমকিতে থাকবে। এমন পরিস্থিতিতে আপনি যদি কিছু বলেন, তাহলে আপনাকে তুলে নেওয়া হবে, আপনার আত্মীয়স্বজন আপনাকে খুঁজে পাবেন না। আমরা বাংলাদেশে আয়নাঘরের কথা শুনেছি।’
দেবপ্রিয় আরও বলেন, কর্তৃত্ববাদী শাসকদের কিছু উন্নয়ন দেখাতে হয়। এটি উন্নয়নের আচ্ছন্নতা। উন্নয়নের সুফল সব শ্রেণির মানুষের কাছে যায় না। তবে কর্তৃত্ববাদী শাসক অলিগার্ক তৈরি করে। রাজনীতিবিদেরা মনে করেন, তাঁরা অলিগার্কদের সৃষ্টি করেছেন। একটা সময় দেখা যায়, অলিগার্করা শাসকদের নিয়ন্ত্রণ করছেন। এমন পরিস্থিতিতে অর্থনীতির সমস্যা হলো, উন্নয়ন অন্তর্ভুক্তিমূলক হয় না। বৈষম্য বাড়িয়ে দেয়। দিন শেষে বিনিয়োগের জন্য পর্যাপ্ত সম্পদ বরাদ্দ দেওয়া যায় না। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তায় পর্যাপ্ত সরকারি অর্থ দেওয়া যায় না। ঠিক এটাই ঘটেছে বাংলাদেশে। পর্যাপ্ত বিনিয়োগ না হওয়ায় দুর্বল শিক্ষাব্যবস্থা তৈরি হয়, যা বাজারের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। কেন সরকারি চাকরির কোটা নিয়ে এত কিছু হলো? পর্যাপ্ত বেসরকারি বিনিয়োগ না হওয়ায় অর্থনীতি টেকসই হয়নি। ফলে বেসরকারি খাত কাঙ্ক্ষিত কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারেনি। অন্যদিকে কিছু ক্ষেত্রে সরকারি চাকরি পার্টির ক্যাডারে পরিণত হয়ে গেছে।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘কর্তৃত্ববাদী সরকারের পতনের পর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মিশ্র অভিজ্ঞতা আছে। আরব বসন্ত–পরবর্তী পরিস্থিতি দেখেছি। আবার দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়া, লাতিন আমেরিকা এবং কিছু ক্ষেত্রে সাবসাহারা দেশগুলোয় সফল গণতন্ত্রে উত্তরণ দেখেছি।’