হাইকোর্ট ভবন
হাইকোর্ট ভবন

এস আলমের দুই প্রতিষ্ঠানের কাছে এনবিআরের ভ্যাট দাবির সিদ্ধান্তের প্রশ্নে রুল

এস আলম সুপার এডিবল অয়েল এবং এস আলম ভেজিটেবল অয়েলের কাছে তিন অর্থবছরে (২০১৯-২০, ২০২০-২১ ও ২০২১-২২) মূল্য সংযোজন কর (মূসক) ভ্যাট বাবদ প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা দাবির সিদ্ধান্ত প্রশ্নে রুল দিয়েছেন হাইকোর্ট। কোম্পানি দুটির করা পৃথক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি জাফর আহমেদ ও বিচারপতি সরদার মো. রাশেদ জাহাঙ্গীরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল সোমবার এ রুল দেন।

এর আগে গত ৯ জুন পৃথক আদেশে চট্টগ্রামের কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের কর কমিশনার কোম্পানি দুটির কাছে ভাট বাবদ সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা দাবি করে। তবে শুনানির সুযোগ না দিয়ে ওই অর্থ দাবিসংক্রান্ত ৯ জুনের পৃথক আদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে কোম্পানি দুটি পৃথক রিট করে। গতকাল রিটের ওপর প্রাথমিক শুনানি হয়।

মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইনের সংশ্লিষ্ট বিধান অনুসারে ব্যক্তিগতভাবে (কোম্পানি) শুনানির সুযোগ না দিয়ে ভাট নির্ধারণ সংক্রান্ত ৯ জুনের আদেশ কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে। আইনের সংশ্লিষ্ট বিধান যথাযথভাবে মেনে এবং পক্ষগুলোকে শুনানির পর নিষ্পত্তির জন্য বিষয়টি পুনরায় কর কমিশনারের কাছে কেন পাঠানো হবে না, সে বিষয়েও রুল হয়েছে। চট্টগ্রামের কর কমিশনারসহ তিন বিবাদীকে ১০ দিনের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। পরবর্তী শুনানির জন্য ১৫ জুলাই দিন রেখেছেন আদালত। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আহসানুল করিম, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী আমিনুল হক। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ মো. রাসেল চৌধুরী ও সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস এবং সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল তাহমিনা পলি।

শুনানিতে কোম্পানি দুটির আইনজীবী আহসানুল করিম বলেন, কমিশনার ৯ জুন ভ্যাট নির্ধারণ করে আদেশ দেন। এর আগে ব্যক্তিগতভাবে শুনানির কোনো সুযোগ দেওয়া হয়নি। জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শুনানিতে থাকবেন বলে গত ৪ জুন আবেদন করা হয়। কারণ দর্শানোর জন্য নোটিশে উত্থাপিত অভিযোগের বিরুদ্ধে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়েই ৯ জুন পৃথক আদেশ দেওয়া হয়, যা আপাতদৃষ্টে ন্যায়বিচারে সমতার নীতির পরিপন্থী।

অন্যদিকে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ মো. রাসেল চৌধুরী বলেন, বক্তব্য উপস্থাপনের জন্য তাদের বারবার সময় দেওয়া হয়েছে। বছরের পর বছর সময় দেওয়া যায় না।

এদিকে এনবিআর সূত্রে জানা যায়, এস আলম ভেজিটেবল অয়েল উল্লেখিত তিন অর্থবছরে সব মিলিয়ে ১২ হাজার ৭২৬ কোটি টাকার তেল বিক্রি করেছে। কিন্তু এই সময়ে ভ্যাট বিভাগে দেওয়া রিটার্নে দেখানো হয়েছে মাত্র ২ হাজার ৪০২ কোটি টাকার তেল বিক্রির তথ্য। এই তিন বছরে বিক্রিতে গরমিল প্রায় ১০ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা। এই বিপুল পরিমাণ অর্থের পণ্য বিক্রির ওপর ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট দেয়নি প্রতিষ্ঠানটি। ভ্যাট বিভাগ হিসাব করে দেখেছে, বিভিন্ন ধরনের রেয়াতের পর পাওনার ভ্যাটের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১ হাজার ৩৪৬ কোটি টাকা। এ ছাড়া ওই তিন বছরে প্রতিষ্ঠানটি দেশের ভেতর থেকে ১১ হাজার ২৪৫ কোটি টাকার তেলের প্রাথমিক উপকরণ সংগ্রহ করেছে। কিন্তু ভ্যাটের রিটার্নে দেখানো হয় ৩ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা। স্থানীয়ভাবে পণ্য সংগ্রহের ভ্যাটের হার সাড়ে ৭ শতাংশ। ভ্যাট বিভাগের তদন্ত দল বলছে, স্থানীয়ভাবে উপকরণ সংগ্রহের ক্ষেত্রেও ৫৬৫ কোটি টাকা ভ্যাট ফাঁকি দেওয়া হয়েছে। পণ্য বিক্রি ও কেনা উভয় ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটির মোট ভ্যাট ফাঁকির পরিমাণ ১ হাজার ৯১১ কোটি টাকা।

এনবিআর সূত্র আরও জানায়, একইভাবে বেচা ও কেনা—দুই ক্ষেত্রেই ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে এস আলম গ্রুপের আরেক প্রতিষ্ঠান এস আলম সুপার এডিবল অয়েল লিমিটেড। এই প্রতিষ্ঠান তিন অর্থবছরে তেল বিক্রিতে ১ হাজার ২০৪ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে। এনবিআরের হিসাবে ওই তিন বছরে প্রতিষ্ঠানটি ১২ হাজার ৮৫০ কোটি টাকার তেল বিক্রি করেছে। কিন্তু ভ্যাটের রিটার্নে দেখিয়েছে ৩ হাজার ৬২০ কোটি টাকার তেল বিক্রি হয়েছে। ওই তিন বছরে ৯ হাজার ২৩০ কোটি টাকা তেল বিক্রির তথ্য গোপন করা হয় বলে এনবিআরের দাবি। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানটি স্থানীয়ভাবে তেল উৎপাদনের কাঁচামাল সংগ্রহেও ৪১৬ কোটি টাকা ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে বলে নিরীক্ষায় ধরা পড়ে। তাতে তিন বছরে সব মিলিয়ে এস আলম সুপার এডিবল অয়েলের মোট ভ্যাট ফাঁকির পরিমাণ দাঁড়ায় ১ হাজার ৬২০ কোটি টাকা।