রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) থেকে মার্কিন ডলারে ঋণ দেওয়ার ধারাবাহিকতা বজায় রাখার দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তাই ইডিএফের আকার আর ছোট না করার দাবি তাঁদের। সচিবালয়ে গতকাল রোববার বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগসংক্রান্ত পরামর্শক কমিটির বৈঠকে ব্যবসায়ীরা এ দাবি জানান।
বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ, বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন, বাংলাদেশ তৈরি পোশাক উৎপাদক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান, বাংলাদেশ নিট পোশাক উৎপাদক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আবদুর রহিম খান প্রমুখ গতকালের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংক ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রতিনিধিরা।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের অর্থে গঠিত ৭০০ কোটি ডলারের ইডিএফ থাকলেও বাংলাদেশ ব্যাংক তা ৫০০ কোটি ডলারে নামিয়ে এনেছে। তহবিলের আকার কমিয়ে আনায় ব্যবসায়ীরা আপত্তি জানিয়েছেন।
ইডিএফের ডলারের হিসাবকে বাংলাদেশ ব্যাংক সব সময় ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ হিসেবে দেখিয়ে আসছিল। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এ ব্যাপারে আপত্তি জানিয়েছে। আইএমএফের দেওয়া ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণের শর্তের মধ্যেও রয়েছে বিষয়টি। তবে রিজার্ভের অর্থে ইডিএফ গঠনের বিষয়ে আইএমএফের আপত্তি নেই।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে পাঁচটি বিষয়ে বিশেষ নজর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগসংক্রান্ত পরামর্শক কমিটি। এগুলো হচ্ছে শুল্কহার যৌক্তিক করা, বাজার সম্প্রসারণ ও দর-কষাকষির দক্ষতা অর্জনে সহায়তা করা, নতুন দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আনা, রপ্তানি বহুমুখীকরণ এবং নগদ সহায়তা বৃদ্ধি।
ব্যবসায়ীরা বলেছেন, নগদ সহায়তা দেওয়া হলেও এর ওপর আবার টাকা কাটা হয়। বিষয়টির কোনো মানে খুঁজে পান না তাঁরা। বৈঠকে আলোচনায় ডলারের বিভিন্ন দরের পরিবর্তে একটি দর করার বিষয়টিও উঠে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধি বলেছেন, বিভিন্ন দরের ডলারের পার্থক্য এরই মধ্যে কমে এসেছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ব্যবসায়ীদের বলা হয়, ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উত্তরণ হওয়ার পর নগদ সহায়তা, কর ছাড় ইত্যাদি আর দেওয়া যাবে না। তা ছাড়া শুল্কমুক্ত বাজারে প্রবেশাধিকার হারাতে হবে। যদিও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও যুক্তরাজ্যে সুবিধা পাওয়া যাবে ২০২৯ সাল পর্যন্ত। তবে সুযোগের সম্ভাবনাও আছে। ভূরাজনৈতিক কারণে চীন একটু বাজার হারাচ্ছে। সুযোগটি নিতে পারে বাংলাদেশ।
২০২৪ সালের মধ্যে ৮ হাজার কোটি ডলার, ২০৩১ সালের মধ্যে ১৫ হাজার কোটি ডলার ও ২০৪১ সালের মধ্যে ৩০ হাজার কোটি ডলার রপ্তানি আয় করার প্রস্তুতি নিতে ব্যবসায়ীদের পরামর্শ দিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী।
বৈঠক শেষে যোগাযোগ করলে বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের সব দাবি আমরা এনবিআর ও অর্থ বিভাগকে জানাব, যাতে আগামী বাজেটে তার প্রতিফলন থাকে।’