রিজার্ভের প্রকৃত হিসাবায়ন করতে হবে জুনের মধ্যে

ডলার
ছবি: রয়টার্স

আগামী জুনের মধ্যে রিজার্ভের বা বৈদেশিক মুদ্রার মজুতের প্রকৃত হিসাবায়ন শুরু করতে হবে বাংলাদেশ ব্যাংককে। উদ্দেশ্য হলো এর মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বচ্ছতা ও রিপোর্টিংয়ের মান বাড়ানো। পাশাপাশি প্রকৃত (নিট) রিজার্ভ বাড়াতে উদ্যোগ নিতে হবে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল ঋণ অনুমোদনের সময় যেসব শর্ত দিয়েছে, তাতে এটি অন্যতম।

বিভিন্ন খাতে এমন শর্ত পূরণের লক্ষ্য ঠিক করে দিয়ে আইএমএফ গত সোমবার ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণপ্রস্তাব অনুমোদন করেছে। এই ঋণের প্রথম কিস্তি বাংলাদেশ পেয়েছে গতকাল বৃহস্পতিবার। প্রথম কিস্তির পরিমাণ ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ৭০ হাজার ডলার। ঋণপ্রস্তাব অনুমোদনের তিন দিনের মাথায় সংস্থাটি প্রথম কিস্তি ছাড় করে।

আইএমএফের কাছে বাংলাদেশ প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, ব্যবহারযোগ্য প্রকৃত (নিট) রিজার্ভ ধীরে ধীরে বাড়ানো হবে, যাতে ২০২৬ সালের মধ্যে নিট রিজার্ভ দিয়ে চার মাসের আমদানি দায় মেটানো যায়। এ জন্য চাহিদা কমানোর পাশাপাশি মুদ্রার ভাসমান বিনিময় হার চালু করা হবে। এর ফলে বিদেশি বিনিয়োগ আসবে এবং কর্মসংস্থান বাড়বে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

আইএমএফ নিট রিজার্ভের সর্বনিম্ন সীমাও বলে দিয়েছে। আগামী মার্চে এটা হবে ২২ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলার, জুনে ২৪ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলার, সেপ্টেম্বরে ২৫ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলার এবং ডিসেম্বরে ২৬ দশমিক ৮১ বিলিয়ন ডলার।

গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩২ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে প্রায় ৮ বিলিয়ন বা ৮০০ কোটি ডলার এমন কর্মসূচিতে ব্যবহার করা হয়েছে, যা আইএমএফ রিজার্ভের হিসাবে অন্তর্ভুক্ত না করতে পরামর্শ দিয়েছে। এর ফলে নিট রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২৪ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন ডলারে।

আমদানি দায় মেটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন প্রতিনিয়ত রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করছে। গত জুলাই-জানুয়ারি সময়ে রিজার্ভ থেকে ৯২০ কোটি ডলার বিক্রি করা হয়েছে। দেশের ইতিহাসে পুরো অর্থবছরেও রিজার্ভ থেকে এত পরিমাণ ডলার বিক্রি করা হয়নি। এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরের পুরো সময়ে রিজার্ভ থেকে ৭৬২ কোটি ডলার বিক্রি করা হয়েছিল।

রমজানের আগে পণ্যের বাড়তি চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশকে আমদানি বাড়াতে হবে, এর ফলে আরও বেশি পরিমাণ ডলার বিক্রি করতে হবে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে। এর ফলে নিট রিজার্ভ আরও কমে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

রিজার্ভ থেকে সাত বিলিয়ন ডলার দিয়ে গঠন করা হয়েছে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল বা ইডিএফ। এ ছাড়া রিজার্ভের অর্থে গঠন করা হয়েছে লং টার্ম ফান্ড (এলটিএফ) ও গ্রিন ট্রান্সফরমেশন ফান্ড (জিটিএফ)। বাংলাদেশ বিমানকে উড়োজাহাজ কিনতে সোনালী ব্যাংককে রিজার্ভ থেকে অর্থ দেওয়া হয়েছে। আবার পায়রা বন্দরের রাবনাবাদ চ্যানেলের খনন কর্মসূচিতেও রিজার্ভ থেকে অর্থ দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে বিভিন্ন তহবিল ও ফান্ডে ব্যবহার করা হয়েছে রিজার্ভের আট বিলিয়ন ডলার।