বিশ্ববাজারে দাম কমলেও দেশের ভোক্তারা সুফল পাচ্ছেন না

আন্তর্জাতিক বাজারে বিভিন্ন অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের দাম কমেছে। কিন্তু দেশে মার্কিন ডলারের দাম বাড়ায় ও ব্যবসায়ীরা অধিক মুনাফা তোলায় ভোক্তারা বৈশ্বিক বাজারে দাম কমার সুফল পাচ্ছেন না। সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের জমা দেওয়া এক প্রতিবেদনে এমন মতামত দেওয়া হয়েছে।

ওই প্রতিবেদনে ট্যারিফ কমিশন বলেছে, কয়েক মাস ধরে বিশ্ববাজারে দাম বাড়ায় স্থানীয় বাজারেও অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের মূল্যে অস্থিতিশীলতা বিরাজ করেছে। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে সম্প্রতি খাদ্যপণ্যের দাম কমতে শুরু করেছে। এতে বিশ্ববাজারে একধরনের স্থিতিশীলতা এসেছে। কিন্তু স্থানীয় বাজারে এখনো এর সুফল দেখা যাচ্ছে না।

দেশে ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে এমনটা হয়েছে বলে মনে করে ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন। প্রতিষ্ঠানটি জানায়, আমদানি করা পণ্যের দাম পরিশোধের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় মার্কিন ডলার। কিন্তু স্থানীয় বাজারে ডলারের দাম প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাওয়ায় আমদানি পণ্যের দাম বৃদ্ধি পায়। পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্যের দামও বাড়ে। এর সঙ্গে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা বাড়তি মুনাফা অর্জনের চেষ্টা করেন। ফলে ভোক্তারা এখন আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম কমার সুফল পাচ্ছেন না।

দেশে অপরিশোধিত চিনি আমদানি করে তা পরিশোধনের মাধ্যমে বাজারে ছাড়েন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন বলেছে, দেশে পরিশোধিত চিনির বার্ষিক চাহিদা ২০ লাখ মেট্রিক টন। এই চাহিদার প্রায় ৯৮ শতাংশ আসে আমদানির মাধ্যমে। দেশে গত জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত সাত মাসে প্রায় ১০ লাখ ৭৮ হাজার মেট্রিক টন চিনি সরবরাহ হয়। সেই হিসাবে দেশে চিনির সরবরাহ নিয়ে কোনো সংকট হওয়ার কথা নয়।

অন্যদিকে দেশে মশুর ডালের বার্ষিক চাহিদা প্রায় পাঁচ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হয় প্রায় ১ লাখ ৭৬ হাজার মেট্রিক টন। বাকি ৬৫ শতাংশ চাহিদা মেটানো হয় আমদানির মাধ্যমে। ট্যারিফ কমিশন জানিয়েছে, গত সাত মাসে দেশের বাজারে ৩ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন মশুর ডাল সরবরাহ হয়েছে, যা এই সময়ের চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি।

এ ছাড়া দেশে প্রায় ২৬ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজের বার্ষিক চাহিদা আছে। এর মধ্যে স্থানীয়ভাবেই ২৭ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ বাজারজাত হয়। এরপরও গত জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত আরও ২ লাখ ৪৯ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছে।

ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন জানায়, বাজারে তিনটি পণ্যই (চিনি, পেঁয়াজ ও মসুর ডাল) চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত বা বেশি আছে। কিন্তু তারপরও বাজারে এসব পণ্যের দাম বাড়ানো হচ্ছে।

সরকারি প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, গত এক বছরে আন্তর্জাতিক বাজারে মসুর ডালের দাম তিন শতাংশের বেশি কমলেও এ সময়ে স্থানীয় বাজারে বড় ও মাঝারি দানার মসুর ডালের দাম বেড়েছে ৪০ শতাংশ। আর ছোট দানার মশুর ডালের বেড়েছে প্রায় ২৬ শতাংশ।

আন্তর্জাতিক বাজারে গত এক বছরে পেঁয়াজের দাম প্রায় ৩৫ শতাংশ কমেছে। দেশেও কোনো প্রকার ঘাটতি নেই। তবু দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম কমেনি বললেই চলে।

এ ছাড়া গত এক বছরে বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত চিনির দাম মাত্র দশমিক ৫ বা আধা শতাংশ বেড়েছে। অথচ আমদানি করে পরিশোধনের পরে চিনির দাম বাড়ানো হয়েছে ২৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ।

ডলার–সংকট ও ব্যবসায়ীদের অতি মুনাফা লাভের মনোভাবকে দেশের বাজারে পণ্যের দাম বৃদ্ধির অন্যতম কারণ বলে মনে করে ট্যারিফ কমিশন।

সংস্থাটি বাজারে স্থিতিশীলতা আনতে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য বিপণনে পরিবেশক নিয়োগের সুপারিশ করেছে। পাশাপাশি উৎপাদন ব্যয় অনুসারে প্যাকেটজাত চিনি ও ডালের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য নির্ধারণের পরামর্শ দিয়েছে। প্রয়োজনে পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থায় সর্বোচ্চ মুনাফার হার নির্ধারণ করে দেওয়া যেতে পারে বলে মনে করে কমিশন। এ ছাড়া যেসব প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে পণ্য বিক্রি করছে, তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে সংস্থাটি।