সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ৯০ শতাংশ দুর্নীতির দিকে, এমনটাই দাবি করেছেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য (ঠাকুরগাঁও-৩) হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ। তিনি বলেন, ‘কাস্টমসে (শুল্ক বিভাগ) যাঁরা চাকরি করেন, তাঁদের প্রত্যেকের ঢাকা শহরে দুই–তিনটা করে বাড়ি। বন বিভাগের যাঁরা চাকরি করেন, তাঁদের দু–তিনটা করে সোনার দোকান। প্রধানমন্ত্রী যদি পদক্ষেপ নেন, তাহলেই দুর্নীতি রোধ করতে পারব।’
আজ শনিবার জাতীয় সংসদে অর্থ বিল ২০২৪–এর ওপর সংশোধনীর আলোচনায় অংশ নিয়ে এ কথাগুলো বলেন হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ। জাতীয় পার্টির এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘যে হারে লাগামহীনভাবে বড় বড় কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দুর্নীতি করছেন, আমরা কী করব? আমরা অসহায়। অনেক সরকারি কর্মকর্তা আছেন, তাঁরা অসহায়। কারণ, এখানে ৯০ শতাংশ লোকই ওই দিকে (দুর্নীতি)। ১০ থেকে ১৫ শতাংশ লোক ভালো থেকে কী করবেন?’
সংসদ নির্বাচনের সময় প্রার্থীদের হলফনামা দিতে হয় উল্লেখ করে হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, ‘নির্বাচনের সময় সম্পদের বিবরণ হলফনামায় দিয়ে থাকি। তারপর পাঁচ বছর পরের নির্বাচনে আবার হলফনামা দিই। সেখানে সম্পত্তি ১০০ গুণ, না ৫০০ গুণ বাড়ল, তা পত্রিকায় প্রতিবেদন হয়। আমাদের আমলনামা চলে আসে।’
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও হলফনামা পদ্ধতির আওতায় আনার প্রস্তাব করেন হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ। তিনি বলেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা চাকরিতে ঢোকার সময় যদি হলফনামা দিতেন, তারপর পাঁচ বছর, দশ বছর পর আবার হলফনামা দিতেন এবং সেগুলো নিয়ে যদি আলোচনা-সমালোচনা হতো, তাহলে দুর্নীতির চাবিটা বন্ধ হতো। তা না হলে বন্ধ হবে না।
হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ মনে করেন, পদক্ষেপ নিলে দুর্নীতি রোধ করা সম্ভব হবে এবং শুধু দুর্নীতি বন্ধ করতে পারলে ইতিহাসে বঙ্গবন্ধুর নাম যেভাবে সোনার অক্ষরে রয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর (শেখ হাসিনা) নামও সেভাবে লেখা থাকবে। তিনি বলেন, সংসদ সদস্যদের যেভাবে আমলনামা আছে, সেভাবে প্রত্যেক সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরও আমলনামা তৈরি করা হলে দুর্নীতি রোধ করা যাবে।
হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় দলের কার্যালয় করে দিতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, ‘আমার বাড়ি যে উপজেলায়, সেখানে বাড়িকে কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করি। কিন্তু আরেক উপজেলায় বসার জায়গা নেই। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) পাশে টেবিল নিয়ে বসতে হয়। অথচ নির্বাচনী এলাকায় অনেক সালিস-বিচার করতে হয়। অনেক সমস্যার সমাধান দিতে হয়।
এদিকে অর্থবিলের জনমত যাচাইয়ের আলোচনায় অংশ নিয়ে কুড়িগ্রাম-২ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হামিদুল হক খন্দকার বলেন, কালোটাকা সাদা করার সুযোগ সরকারের দ্বৈতনীতি। একদিকে বলবেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের শূন্য সহনশীলতা (জিরো টলারেন্স), অন্যদিকে দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেবেন, এটা কি সম্ভব? যাঁরা বৈধ আয় করবেন, তাঁদের ৩০ শতাংশ কর দিতে হবে, আর যাঁরা কালোটাকা সাদা করবেন, তাঁদের দিতে হবে ১৫ শতাংশ কর। এটা কার স্বার্থে? এটা কোনো নীতিনৈতিকতার মধ্যে পড়ে বলে মনে হয় না।
হামিদুল হক খন্দকার আরও বলেন, একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও সাবেক অর্থমন্ত্রী কালোটাকা সাদা করেছেন, যা জাতির জন্য লজ্জাকর। এটা প্রত্যাশিত না। এ সুযোগে বেনজীর-মতিউরদের মতো দুর্নীতিবাজও আছেন। তাঁরা সরকারের চোখে আঙুল দিয়ে পার পেয়ে যান। এটা জাতির জন্য কলঙ্ক।