ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা
ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা

আইএমএফ প্রধান হতে আবার লড়বেন ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রধান ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভার মেয়াদ শেষ হচ্ছে চলতি বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর। তবে পুনরায় তিনি সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে জানিয়েছেন। ইতিমধ্যে বেশকিছু দেশের সমর্থনও পেয়েছেন বুলগেরিয়ার এই অর্থনীতিবিদ।

রয়টার্স ও দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনের তথ্যানুসারে, আগামী সেপ্টম্বর মাসে নতুন আইএমএফের প্রধান নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হবে। পরের পাঁচ বছরের জন্য আইএমএফের প্রধান হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য সম্প্রতি ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভাকে মনোনীত করেছে ইউরোপের কয়েকটি দেশ। ফলে পরবর্তী মেয়াদেও তাঁকে সংস্থাটির প্রধান হিসেব দায়িত্ব পালন করতে দেখা যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।

ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা জানান, পুনরায় প্রার্থীতার জন্য তাঁর পক্ষে ইউরোপে আইএমএফ সদস্য দেশ এবং এর বাইরে আরও কিছু দেশের শক্তিশালী সমর্থন রয়েছে। দ্বিতীয় দফায় দায়িত্ব পালনের সুযোগ পেলে তিনি সম্মানিত হবেন।

আইএমএফ প্রধান হিসেবে ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভাকে সমর্থনকারী অন্যতম দেশ ফ্রান্স। গত সপ্তাহে তাঁকে সমর্থনের কথা জানান ফরাসি অর্থমন্ত্রী ব্রুনো লো মায়ার। তিনি বলেন, এতদিন আইএমএফের নেতৃত্ব দিয়ে জর্জিয়েভা একটি ‘দুর্দান্ত কাজ’ করেছেন এবং ফ্রান্স তাঁকে সমর্থন করে যাবে। আর বুলগেরিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর দিমিতার রাদেভ বলেছেন, প্রথম পাঁচ বছরে আইএমএফের সদস্য দেশগুলোর থেকে ‘সম্মান ও বিশ্বাস’ অর্জন করেছেন জর্জিয়েভা।

ইতিমধ্যে ইউরোপের স্পেন, পোল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডসের অর্থমন্ত্রীরা জর্জিয়েভাকে সমর্থনের কথা জানিয়েছেন। পরে যুক্তরাজ্যের সমর্থনও তিনি পাবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

বর্তমানে ৭১ বছর বয়সী জর্জিয়েভা ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে প্রথমবারের মতো আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নির্বাচিত হন। এর আগে ২০১৭ সাল থেকে তিনি বিশ্বব্যাংকের প্রধান নির্বাহীর দায়িত্বে ছিলেন। ২০২১ সালে তাঁর বিরুদ্ধে তথ্য জালিয়াতির অভিযোগ আনে বিশ্বব্যাংক। যদিও তিনি সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো বিবেচনা করার জন্য আইএমএফের পর্ষদ সভায় সাতবার আলোচনা হয়। পরে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পান তিনি।

আইএমএফ প্রধান ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল প্রতিষ্ঠা হয় ১৯৪৪ সালে। এরপর সংস্থাটির ১২তম ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব নেন জর্জিয়েভা। তিনি আইএমএফের দ্বিতীয় নারী প্রধান ও উদীয়মান বাজার অর্থনীতির দেশ থেকে মনোনীত হওয়া প্রথম ব্যক্তি। ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বর্তমানে উদীয়মান বাজার অর্থনীতির জন্য ৩০ হাজার ৫০০ কোটি ডলার ঋণ ও উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশের জন্য সুদমুক্ত ঋণের পরিমাণ পাঁচগুণ বৃদ্ধির বিষয়ে কাজ করছেন।

ঐতিহ্যগতভাবে ইউরোপীয় দেশগুলো আইএমএফের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য একজন প্রার্থীকে মনোনীত করে। যদিও এ কাজে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সব সদস্য দেশের সমর্থন লাগে। প্রার্থী মনোনয় শেষে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয় আইএমএফের পরিচালনা পর্ষদ। তবে দেখা গেছে, বিশ্বের বড় দুই আর্থিক সংস্থা— আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বড় দেশগুলোর আধিপত্য থাকে। এ নিয়ে উদীয়মান ও উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে ক্রমাগত সমালোচনা হয়।

বুলগেরিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর দিমিতার রাদেভ জানান, ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভার নেতৃত্বে আইএমএফ প্রায় ১০০টি সদস্য দেশের জন্য বড় আকারের অর্থায়ন করেছে। এসব দেশ করোনা মহামারি, ইউক্রেন যুদ্ধ ও অন্যান্য কারণে জীবনযাত্রার সংকটের মধ্যে রয়েছে। দিমিতার রাদেভ বলেন, ‘আইএমএফে আমার অনেক সহকর্মী (বিভিন্ন দেশের গভর্নর) জর্জিয়েভাকে দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসাবে দেখতে চান।’