দাম বাড়ানোর প্রস্তাব জমা রয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে। তার আগে সরবরাহ কম। দাম বেড়ে গেছে।
বাজারে ভোজ্যতেল সরবরাহে ঘাটতি তৈরি হয়েছে। বড় বাজারের কিছু কিছু দোকানে সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে। তবে পাড়া-মহল্লার মুদিদোকানগুলোতে সংকট বেশি।
শুধু সরবরাহে সংকট নয়, দামও বেড়েছে। দোকানগুলোতে বোতলজাত সয়াবিন তেল নির্ধারিত দামের চেয়ে ৭ থেকে ১২ টাকা বেশি নেওয়া হচ্ছে। বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রতি লিটারের নির্ধারিত দর ১৭৮ টাকা। যদিও দোকানে তা বিক্রি হচ্ছে ১৮৫ থেকে ১৯০ টাকায়। আর খোলা সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১৭৫ থেকে ১৮০ টাকা লিটার। এ ক্ষেত্রে নির্ধারিত দর ১৫৮ টাকা। বাজারে পাম তেলের দাম লিটারে ১০ টাকার মতো বেড়ে ১৩৫ টাকার আশপাশের দামে বিক্রি হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভোজ্যতেল বিপণনকারী কোম্পানিগুলো বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। প্রস্তাবিত দর এখনো অনুমোদন পায়নি। এ কারণেই পর্যাপ্ত তেল সরবরাহ করা হচ্ছে না। দাম বাড়লে সরবরাহও বাড়বে বলে ধারণা দোকানমালিকদের।
সরবরাহসংকটের বিষয়ে শীর্ষস্থানীয় একটি কোম্পানির একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্ববাজারে তেলের দাম বেড়েছে। ডলারের দাম বাজারমূল্যে ধরে শুল্ক-কর আদায় করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এতে আমদানিতে ব্যয় বেড়েছে। ওদিকে কারখানায় গ্যাস-সংকটে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। সব মিলিয়ে তেলের উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে। তিনি বলেন, সরকার নতুন দর প্রস্তাবের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত জানাচ্ছে না। কিন্তু আগের দামে তেল বিক্রি করা তাঁদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না।
ভোজ্যতেলের দাম সমন্বয়ের ১৫ দিন আগে সরকারকে জানায় কোম্পানিগুলো। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনে দাম বাড়ানো হয়। সর্বশেষ দেশে সয়াবিনের দাম সমন্বয় হয়েছিল ৩ অক্টোবর।
রাজধানীর মালিবাগ ও মগবাজার এলাকার পাড়া-মহল্লা ঘুরে ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে গতকাল মঙ্গলবার জানা যায়, বাজারে এক সপ্তাহ ধরে ভোজ্যতেল কোম্পানিগুলো সয়াবিন তেলের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। দু-একটি কোম্পানি সয়াবিন তেল দিলেও তা চাহিদার তুলনায় অনেক কম।
মগবাজার নয়াটোলা সড়কের অবনি লাবণি জেনারেল স্টোরের ব্যবস্থাপক সানোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এক সপ্তাহে অন্তত পাঁচটি কোম্পানির কাছে সয়াবিন চেয়েছি। কিন্তু কেউ তেল দিচ্ছে না। মাঝেমধ্যে তারা জোর করে পণ্য বাড়তি দিয়ে যায়। অথচ এখন সয়াবিনের জন্য তাদের পিছু পিছু ঘুরেও পাচ্ছি না।’
মিরপুর ১ নম্বর সেকশনের শাহ আলী সিটি করপোরেশন কাঁচাবাজারের শাহ আলী বাণিজ্যালয়ের বিক্রেতা ইদালি শিকদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘বারবার তাগাদা দেওয়ার পরও ডিলাররা (পরিবেশকেরা) সয়াবিন তেল দিচ্ছেন না। দোকানে যে তেল ছিল, তা ইতিমধ্যে শেষ। আশপাশের অধিকাংশ দোকানেরও একই অবস্থা।’
দেশে গত দুই বছরে যেসব পণ্যের দাম সবচেয়ে বেশি বেড়েছে, তার মধ্যে রয়েছে ভোজ্যতেল। ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে এক লিটার সয়াবিন তেলের দাম ছিল ১০০ টাকা, যা এ বছর ২০৫ টাকায় উঠেছিল। পরে দাম কিছুটা কমে। এখন আবার বাড়ছে।
বাজারে এখন চাল, ডাল, আটা, ময়দা, তেল, চিনি, দুধ, ডিম, মাংসসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য ও নিত্যব্যবহার্য পণ্যের দাম চড়া। এর মধ্যে ভোজ্যতেলের দাম আরেক দফা বাড়ছে।
ঢাকার মালিবাগ রেলগেট এলাকার বাসিন্দা আরমান হোসেন গতকাল দুপুরে তিন দোকানে সয়াবিন তেল না পেয়ে মালিবাগ বাজারে যান। সেখান থেকে তেল কিনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘মহল্লায় না পেয়ে বাজারে এসেছি। এখানেও দেখছি সংকট। আবার দামও বেশি নিল।’