চলতি বছর আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রতি মণ আলু পাইকারিতে ১,৩০০ টাকায় বিক্রি করছেন কৃষক জয়নাল আবেদীন মুনসি। হিমাগারে সংরক্ষণের জন্য কৃষক জয়নালের খেতের আলু বস্তাবন্দী করছেন কয়েকজন নারী শ্রমিক। গতকাল কুমিল্লার দাউদকান্দিতে
চলতি বছর আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রতি মণ আলু পাইকারিতে ১,৩০০ টাকায় বিক্রি করছেন কৃষক জয়নাল আবেদীন মুনসি। হিমাগারে সংরক্ষণের জন্য কৃষক জয়নালের খেতের আলু বস্তাবন্দী করছেন কয়েকজন নারী শ্রমিক। গতকাল কুমিল্লার দাউদকান্দিতে

আলুর দাম বাড়ছে, এবার মৌসুম শেষ হওয়ার আগেই কেন বাজার চড়া

  • ঢাকার বিভিন্ন বাজারে প্রতি কেজি আলুর খুচরা দাম ৪০ থেকে ৪৫ টাকা।

  • দাম নিয়ন্ত্রণে সরকার প্রতি কেজি আলুর ‘যৌক্তিক মূল্য’ ঠিক করেছে ২৮ টাকা ৫৫ পয়সা।

দেশের বাজারে আলুর দাম বাড়ছে। এই দাম বাড়ছে এমন সময়ে, যখন অনেক কৃষক মাঠ থেকে আলু তোলা শেষ করতে পারেননি। মৌসুমের এই সময়ে যেখানে আলুর দাম কমার কথা, সেখানে দাম উল্টো বাড়ছে। অতিরিক্ত উৎপাদন খরচ ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে আলুর উৎপাদন কম হওয়া—মূলত এই দুই কারণকে আলুর চড়া বাজারের জন্য দায়ী করা হচ্ছে। দাম বাড়তি থাকায় ইতিমধ্যে আলু আমদানিও হয়েছে।

গতকাল শনিবার রাজধানীর পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকার বিভিন্ন বাজারে প্রতি কেজি আলুর খুচরা দাম ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। কারওয়ান বাজারের মতো বড় বাজার থেকে এক পাল্লা, অর্থাৎ ৫ কেজি কিনলে দাম পড়েছে ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা। সেই হিসাবে প্রতি কেজি আলুর দাম দাঁড়ায় ৩৬ থেকে ৩৮ টাকা।

টিসিবির হিসাবে গত এক মাসে আলুর দাম বেড়েছে ৩৫ শতাংশের মতো। গত বছরের এই সময়ে ঢাকার বাজারে নতুন আলুর কেজি ছিল ১৬ থেকে ২০ টাকা।

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) গতকালের বাজারদর অনুযায়ী, রাজধানীতে মানভেদে প্রতি কেজি নতুন আলু বিক্রি হয়েছে ৩৮ থেকে ৪০ টাকায়। সরকারি এই সংস্থার হিসাব পর্যালোচনা করা দেখা যায়, বাজারে গত এক মাসে আলুর দাম বেড়েছে ৩৫ শতাংশের মতো। গত বছর এই সময়ে ঢাকার বাজারে নতুন আলুর কেজি ছিল ১৬ থেকে ২০ টাকা। সেই হিসাবে, এক বছরে আলুর দাম বেড়েছে ১১৭ শতাংশ।

রাজধানীর রামপুরা বাজারের জাহাঙ্গীর স্টোরের বিক্রেতা আল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, গত এক মাসে পাইকারি বাজারে আলুর দাম কেজিপ্রতি ১০ টাকার মতো বেড়েছে। বছরের এই সময়ে দাম আরও কমার কথা থাকলেও এবার উল্টো দাম বাড়তি দেখা যাচ্ছে।

বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন বা হিমাগার সমিতির সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, এবার কৃষকের কাছ থেকেই বেশি দামে আলু বাজারে আসছে। এ ছাড়া গত বছর আলুর যে সংকট হয়েছিল, সেই সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য বাড়তি যে উৎপাদন দরকার ছিল, সেটা হয়নি।

আলুর উৎপাদনস্থল মুন্সিগঞ্জের যুগনীঘাটের কৃষক সাইফুল ইসলাম অনেকটা একই সুরে কথা বলেছেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, গতবারের মতো এবার আলুর উৎপাদন তত ভালো হয়নি। এই কৃষক ৩০০ শতাংশ জমিতে আলু চাষ করে ৪০০ মণের মতো আলু পাওয়ার আশা করছেন, যা হবে গত বছরের চেয়ে অন্তত ২৫ শতাংশ কম।

সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন, মুন্সিগঞ্জের বিভিন্ন হাটে কৃষকেরা গতকাল প্রতি কেজি আলু বিক্রি করছেন ২৫ থেকে ২৬ টাকায়।

কৃষকেরা বলছেন, উন্নত জাতের বীজ না থাকায় আলুর উৎপাদন কমেছে। সঙ্গে আছে বৈরী আবহাওয়া, জমির উর্বরতা সমস্যা ও প্রযুক্তির ব্যবহার না বাড়া। বিপরীতে উৎপাদন খরচ বাড়ছে প্রতিবছর। ফলে আলুর বাজার স্থির থাকছে না।

জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার রোয়ার গ্রামের কৃষক মীর আতিকুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, গত বছর এক বিঘা জমিতে ৭৮ মণ আলু পেলেও এবার পেয়েছেন ৭০ মণ। তিনি আরও বলেন, গত মৌসুমে জমি থেকে কার্ডিনাল জাতের আলু প্রতি মণ ৩২৫ টাকায় করেছিলাম। এবারের মৌসুমে একই আলু বিক্রি করেছি ৭৪০ টাকায়।

দাম নিয়ন্ত্রণে সরকার প্রতি কেজি আলুর ‘যৌক্তিক মূল্য’ ঠিক করেছে ২৮ টাকা ৫৫ পয়সা। তবে মুন্সিগঞ্জের কৃষকেরা মাঠ থেকেই এর কাছাকাছি দামে আলু বিক্রি করছেন। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের হিসাবে, আলুর উৎপাদন খরচ ১৩ টাকা ৯০ পয়সা। দাম নিয়ন্ত্রণে সরকার আলু আমদানির অনুমতি দিয়ে রেখেছে। বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার গত বুধবারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারত থেকে সেদিন বেনাপোল বন্দর হয়ে ৩০০ টন আলু দেশে এসেছে।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, গত মৌসুমে আলু উৎপাদিত হয়েছিল ১ কোটি ৪ লাখ টন, আর চাহিদা ছিল ৮০ থেকে ৮৫ লাখ টন। তবে হিমাগার সমিতির মতে, গত বছর ৯০ লাখ টন চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন ছিল ৮০ থেকে ৮৫ লাখ টন।