দেশে ৪০ শতাংশ বিদ্যুৎ নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে উৎপাদনের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন প্রায় অসম্ভব বলে মনে করছেন কেউ কেউ। তাঁরা বলছেন, এ ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ হলো বিনিয়োগ নিশ্চিত করা। কারণ, নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগে বেসরকারি খাতের সীমাবদ্ধতা আছে। দেশের আর্থিক খাত বড় বিনিয়োগের অবস্থায় নেই। তবে ছোট ছোট সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পে বেসরকারি খাত বিনিয়োগ করতে পারে।
রাজধানীর একটি হোটেলে আজ বুধবার বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত এক সংলাপে এসব কথা বলেন বক্তারা। ২০২৩ সালের জি-৭ সম্মেলন সামনে রেখে নবায়নযোগ্য জ্বালানি নিয়ে এ সংলাপের আয়োজন করে সিপিডি। সংলাপের শুরুতে ‘কল ফর গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভস ফর এন্ডিং সাপোর্ট ফর ফসিল ফুয়েলস অ্যান্ড অ্যাকসেলারেটিং দ্য ট্রানজিশন টু রিনিউয়েবল এনার্জি’ শীর্ষক একটি নিবন্ধ উপস্থাপন করা হয়।
সংসদ সদস্য তানভীর শাকিল বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিষয়টি দেশের পরিপ্রেক্ষিতে চিন্তা করতে হবে। জমি অধিগ্রহণ একটি বড় সমস্যা। জমি পাওয়া যায়নি বলে সিরাজগঞ্জে দুটি সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়েও তা করা যায়নি। নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৪০ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন অবশ্যই উচ্চাকাঙ্ক্ষী। তবে এটি রাতারাতি হবে না। ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করা হবে।
বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক ইজাজ হোসেন বলেন, বিদ্যুৎ খাতে সরকার ভর্তুকি তুলে দিতে চায়। এটা কঠিন, তবু করা হচ্ছে। বর্তমানে দেশে চাহিদার চেয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বেশি। এর মধ্যে নতুন করে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা কতটা বাড়ানো যাবে, তা চিন্তার বিষয়। তাই সৌরবিদ্যুৎ থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিয়ে ভাবতে হবে।
মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে বক্তাদের অনেকে বিভিন্ন পরামর্শ দেন। তাঁরা বলেন, দেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য প্রচুর জমি বরাদ্দ দেওয়া আছে। এসব জমি ব্যবহার করে সৌরশক্তি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়। আবার এসব এলাকায় নির্মিত কারখানার ছাদ ব্যবহার করেও সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের সুযোগ আছে। কৃষিতে সৌরবিদ্যুতের ব্যবহার বাড়ানো যেতে পারে।
বিদ্যুৎ খাতে সরকার ভর্তুকি তুলে দিতে চায়। এটা কঠিন, তবু করা হচ্ছে। বর্তমানে দেশে চাহিদার চেয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বেশি। এর মধ্যে নতুন করে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা কতটা বাড়ানো যাবে, তা চিন্তার বিষয়। তাই সৌরবিদ্যুৎ থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিয়ে ভাবতে হবে।ইজাজ হোসেন, সাবেক অধ্যাপক, বুয়েট
ভারপ্রাপ্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার ম্যাট ক্যানেল বলেন, জ্বালানিনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বৈশ্বিক তহবিল থেকে আরও বেশি অর্থায়ন পাওয়ার বিষয়ে জোর দিতে পারে বাংলাদেশ। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য গঠিত বিভিন্ন বৈশ্বিক তহবিল থেকেও সুবিধা নেওয়া যেতে পারে।
জাপান দূতাবাসের ডেপুটি চিফ অব মিশন তাৎসুয়া মাসিদা বলেন, জমির স্বল্পতা থাকলেও বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিত করে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়। স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘেময়াদি পরিকল্পনা নিয়ে এগোনো উচিত।
জার্মান দূতাবাসের হেড অব কো–অপারেশন ফ্লোরিয়ান হোলেন বলেন, শুধু সৌরবিদ্যুৎ নয়, সমুদ্র ও স্থল মিলে বাংলাদেশে বায়ুবিদ্যুতের ভালো সম্ভাবনা আছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানিপ্রযুক্তি ব্যবহারে জার্মানি সহায়তা করতে পারে।
জি-৭ জোটের দেশগুলো হচ্ছে জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, কানাডা, ইতালি ও ফ্রান্স। ১৯ থেকে ২১ মে জাপানের হিরোশিমায় হবে এবারের সম্মেলন।
সংলাপে সভাপতিত্ব করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। তিনি বলেন, এবারের জি-৭ সামিটে অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সরে আসা ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে রূপান্তরের বিষয়টি গুরুত্ব পাবে।
নিবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির জ্যেষ্ঠ গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। এতে সুপারিশ করা হয়, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে কয়লা খাতে বিনিয়োগ বন্ধ করা উচিত এসব দেশের। তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসে (এলএনজি) বিনিয়োগ স্থগিত করা দরকার। নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে উন্নয়শীল দেশগুলোকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।