আবাসন খাতসংশ্লিষ্ট কোন প্রতিষ্ঠানের কী কাজ

মানুষের মৌলিক চাহিদার অন্যতম হলো বাসস্থান। আমাদের দেশের নাগরিকদের একটি উন্নত জীবন দান করার জন্য উপযুক্ত বাসস্থান গড়ে তোলা জরুরি। আর এর জন্য কাজ করে যাচ্ছে দেশের আবাসনপ্রতিষ্ঠানগুলো, যা জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখছে।

অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূল সূচক হিসেবে ইনফ্রাস্ট্রাকচার বা অবকাঠামোগত উন্নয়নকে বিবেচনা করা হয়। আবাসনশিল্পও এই অবকাঠামোগত শিল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম। আর এই শিল্পকে দিনের পর দিন একটি আধুনিক ও উন্নত শিল্পে প্রতিষ্ঠিত করছে আবাসনপ্রতিষ্ঠানগুলো।

আবাসনপ্রতিষ্ঠানগুলোর কাজের ধরন নিয়ে কথা বলেছেন রিহ্যাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট কামাল মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘নানা ঘাত–প্রতিঘাত অতিক্রম করে বাংলাদেশে আবাসন খাত গত ৪০ বছর নানামুখী কাজ করে যাচ্ছে। দিন দিন এ প্রতিষ্ঠানগুলো সামনের দিকে এগিয়ে চলছে, যা জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। আমরা দেখতে পাচ্ছি, দ্রুত নগরায়ণ এবং অস্বাভাবিক জনসংখ্যার বৃদ্ধি হার এই দেশের বাসস্থানকে কিছুটা হুমকির মধ্যে ফেলে দিচ্ছে।

ফলস্বরূপ, আবাসন খাতের চাহিদাও বাড়ছে। এ ছাড়া সামাজিকভাবেও আমাদের দেশ ভিন্ন ধরনের একটি সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বৃহৎ যৌথ পরিবার ভেঙে ছোট ছোট একক পরিবারের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বেড়ে চলছে। তাই ফ্ল্যাট ও অ্যাপার্টমেন্টের চাহিদাও বাড়ছে। সেই সঙ্গে দেশে বাড়ছে মধ্যবিত্ত মানুষের সংখ্যা এবং তাদের ক্রয়ক্ষমতা। আর তাই প্রতিনিয়ত এমন মানুষদের মাথা গোঁজার ঠাঁই নিশ্চিত করাটাই আবাসন খাতসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান কাজ। আবার এর মাধ্যমে বাড়ছে উপার্জনের নানা পথও।’

কোন প্রতিষ্ঠানের কী কাজ

প্রথমেই আসে রাজউকের নাম। রাজউক বাংলাদেশের গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি সরকারি সংস্থা, যা রাজধানী ঢাকার উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করে থাকে। এর পূর্বনাম ছিল ‘ঢাকা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট’। পরিকল্পিত নগরায়ণের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিতের জন্য রাজউক ঢাকা মহানগরীর উন্নয়ন পরিকল্পনা ও উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণে প্রধান ভূমিকা পালন করে। দালিলিক নিয়মকানুনের মাধ্যমে ঢাকাকে পরিকল্পিত মহানগরী রূপে গড়ে তোলার জন্য রাজউক পরিকল্পনা প্রণয়ন করে। ব্যক্তিবিশেষ ও প্রকল্পের জন্য ভূমিব্যবস্থার ছাড়পত্র প্রদান এবং ইমারতের নকশা অনুমোদন করে থাকে।

এ ছাড়া রাজউক ঢাকার উন্নয়ন প্রকল্পে বিভিন্ন কার্যক্রম, যেমন উপশহর ও নতুন শহর প্রকল্প, সাইট অ্যান্ড সার্ভিস প্রকল্পের বিষয়গুলো দেখে থাকে। সেই সঙ্গে বাণিজ্যিক ও শিল্পনগরী তৈরি, রাস্তা, উড়ালসড়ক, সেতু, কালভার্ট ইত্যাদি নির্মাণ, বিদ্যমান সড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন, বাজার, শপিং সেন্টার, কার পার্কিং, ধর্মীয় স্থাপনা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ, উন্মুক্ত স্থান, জলাধার, পার্ক, খেলার মাঠ ইত্যাদির উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা করে থাকে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পুনর্বাসন প্রকল্প রাজউকের তত্ত্বাবধানে থাকে। এর সঙ্গে আছে সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের মতো জনহিতকর কাজগুলোও।

আবাসন খাতসংক্রান্ত আরেকটি প্রতিষ্ঠান হলো রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ বা রিহ্যাব। এটি বাংলাদেশ রিয়েল এস্টেট ডেভেলপারদের একমাত্র বাণিজ্যিক সংস্থা। প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৯১ সালে। নগরায়ণের ফলে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর একটা বড় অংশ ক্রমেই শহরমুখী। এ কারণে অতিরিক্ত আবাসনের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। অতিরিক্ত জনগোষ্ঠীর আবাসনের চাহিদা মেটাতে সরকার অনেকটা হিমশিম খাচ্ছিল।

সরকারের এ প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে বেসরকারি রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করছে। এ প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মপদ্ধতির মধ্যে নানাবিধ শৃঙ্খলা তৈরিতে রিহ্যাব নির্দেশকের ভূমিকা পালন করছে।

আবাসন খাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন (বিএইচবিএফসি) উল্লেখযোগ্য। এটি বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিশেষায়িত আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান।

প্রতিষ্ঠানটি গৃহায়ণ সমস্যার সমাধানে জনসাধারণকে গৃহনির্মাণ তথা সামগ্রিক গৃহায়ণব্যবস্থার উন্নয়নে আর্থিক সহযোগিতা দিয়ে থাকে। আবাসন নির্মাণের কাজটুকু মানুষ তখন কিছুটা স্বস্তিতে ও নির্ভারভাবে করতে পারে।